× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

মুক্তি পেয়েও 'বন্দী' ১৫৪ ফিলিস্তিনি, জোরপূর্বক নির্বাসনে পাঠাচ্ছে ইসরায়েল

ন্যাশনাল ট্রিবিউন প্রতিবেদক

১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৩:৩৯ পিএম । আপডেটঃ ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৩:৪০ পিএম

ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত ফিলিস্তিনি বন্দীদের বাসে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, এ সময় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি তাঁদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। ছবি: এএফপি

ইসরায়েলের সঙ্গে বন্দী বিনিময় চুক্তির অধীনে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের জীবনে বহু প্রতীক্ষিত আনন্দ পরিণত হয়েছে এক বেদনাদায়ক অনিশ্চয়তায়। ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, আজ সোমবার বন্দী বিনিময়ের অংশ হিসেবে মুক্তি পাওয়া অন্তত ১৫৪ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে ইসরায়েল জোর করে অন্য কোনো দেশে নির্বাসনে পাঠাতে বাধ্য করছে।

এই নির্বাসনের কারণে মুক্তিপ্রাপ্তদের পরিবারে একই সঙ্গে আনন্দ ও কষ্টের মিশ্র অনুভূতি দেখা দিয়েছে। পরিবারের সদস্যরা জানতে পেরেছেন, তাঁদের প্রিয়জনরা মুক্তির পর নিজেদের মাতৃভূমিতে নয়, বরং তৃতীয় কোনো দেশে নির্বাসিত হবেন।

এই ১৫৪ জন ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের মুক্তি দেওয়া বৃহত্তর একটি দলের অংশ। এই দলে রয়েছেন ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী ২৫০ জন এবং গত দুই বছরে গাজা থেকে আটক প্রায় ১ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি। জাতিসংঘের তথ্যমতে, এই বন্দীদের অনেকের ক্ষেত্রেই 'গুম' হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। উল্লেখ্য, গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী আজ সোমবার ২০ জন ইসরায়েলি বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে।

মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের কোথায় পাঠানো হবে, সে সম্পর্কে ইসরায়েল বিস্তারিত কিছু জানায়নি। তবে গত জানুয়ারিতে বন্দী মুক্তির সময় কয়েক ডজন ফিলিস্তিনিকে তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া ও তুরস্কসহ এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে নির্বাসিত করা হয়েছিল।

পর্যবেক্ষকদের মতে, এই জোরপূর্বক নির্বাসন মুক্তি পাওয়া বন্দীদের নাগরিকত্বের মৌলিক অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এটি বন্দী বিনিময় চুক্তির ক্ষেত্রে ইসরায়েলের দ্বিমুখী নীতির প্রমাণ।

দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের পাবলিক পলিসির সহযোগী অধ্যাপক তামার কারমুত এই পদক্ষেপকে কঠোর সমালোচনা করেছেন। আল–জাজিরাকে তিনি বলেন, "ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ যে অবৈধ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এটি অমানবিক। তাঁরা ফিলিস্তিনের নাগরিক। তাঁদের একটি ছোট কারাগার থেকে বের করে একটি বড় কারাগারে পাঠানো হচ্ছে—তাঁদের সমাজ থেকে দূরে, নতুন এমন সব দেশে যেখানে তাঁদের কঠোর বিধিনিষেধের মুখে পড়তে হবে।"

অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লায় আল–জাজিরার সঙ্গে কথা বলার সময় ফিলিস্তিনি বন্দী মুহাম্মদ ইমরানের আত্মীয়রা জানান, তাঁর নাম নির্বাসিত ব্যক্তিদের তালিকায় রয়েছে জেনে তাঁরা হতবাক হয়েছেন।

মুহাম্মদ ইমরানের ভাই রায়েদ ইমরান জানান, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে গ্রেপ্তার এবং ১৩টি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ৪৩ বছর বয়সী মুহাম্মদকে মুক্তি দেওয়া হবে, ইসরায়েলি গোয়েন্দা কর্মকর্তা আগে ফোন করে তা নিশ্চিত করেছিলেন। কিন্তু আজ পরিবারটি জানতে পারে, তাঁকে ফিলিস্তিনের বাইরে নির্বাসিত করা হবে।

রায়েদ ইমরান হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “আজকের খবরটি বড় এক ধাক্কা ছিল। তবে আমরা এখনো অপেক্ষা করছি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তিনি মুক্তি পাচ্ছেন, দেশে হোক বা বিদেশে।” এই নির্বাসনের অর্থ হলো, সীমান্তের ওপর ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণের কারণে ইমরানের পরিবার হয়তো বিদেশে গিয়েও কখনো তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারবে না।

আল–জাজিরার প্রতিনিধি নিদা ইব্রাহিম অধিকৃত পশ্চিম তীর থেকে জানান, "আমরা এমন অনেক পরিবার দেখতে পাচ্ছি, যারা তাদের প্রিয়জনদের ফিলিস্তিন থেকে নির্বাসিত হতে দেখতে পারে। বন্দিত্ব থেকে মুক্ত স্বজনের সঙ্গে দেখা করার কোনো উপায় থাকবে না।”

অধ্যাপক কারমুতের মতে, এই নির্বাসনের পেছনে ইসরায়েলের উদ্দেশ্য বহুমুখী। প্রথমত, এর মাধ্যমে ইসরায়েল হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীকে এই বন্দী বিনিময় থেকে কোনো ধরনের প্রতীকী বিজয় দাবি করা থেকে বঞ্চিত করতে চাইছে। দ্বিতীয়ত, নির্বাসিত বন্দীরা যাতে কোনো রাজনৈতিক বা অন্যান্য কার্যক্রমে সক্রিয় হতে না পারেন, সেই লক্ষ্য রয়েছে।

কারমুত আরও বলেন, "নির্বাসনের অর্থ ওই সব বন্দীর রাজনৈতিক ভবিষ্যতের ইতি ঘটা। তাঁরা যেসব দেশে যাবেন, সেখানে তাঁদের কঠোর সীমিত চলাচলের মধ্যে থাকতে হবে। তাই তাঁরা কোনো ক্ষেত্রেই সক্রিয় হতে পারবেন না।"

এই বিশ্লেষক মনে করেন, "এটা ইসরায়েলের জন্য দুদিকেই লাভ," কারণ মুক্তিপ্রাপ্ত ইসরায়েলি বন্দীরা যেখানে দেশে ফিরে স্বাভাবিক জীবন শুরু করতে পারছেন, সেখানে ফিলিস্তিনি বন্দীদের জন্য এটি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি এবং তাঁদের পরিবারের জন্য এক ধরনের শাস্তি। এটি স্পষ্টতই দ্বিমুখী নীতি ও ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়।

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.