× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

ধ্বংসস্তূপ পেরিয়ে বাড়ি ফিরছেন ফিলিস্তিনিরা

অবশেষে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু

ন্যাশনাল ট্রিবিউন ডেস্ক:

১১ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:০৭ এএম । আপডেটঃ ১১ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:০৮ এএম

যুদ্ধবিরতি শুরুর পর উত্তর গাজায় নিজ ঠিকানায় ফিরছেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। ছবি: রয়টার্স

ফিলিস্তিনের গাজায় টানা দুই বছরের ইসরায়েলি নৃশংসতার পর অবশেষে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। চুক্তির শর্ত মেনে উপত্যকাটির নির্দিষ্ট এলাকা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী সেনা সরাতে শুরু করার খবরে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা তাদের বিধ্বস্ত ঘরবাড়ির দিকে ফিরতে শুরু করেছেন।

মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখ-এ গত বুধবার হামাস ও ইসরায়েল এই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। দীর্ঘ আলোচনার পর গত শুক্রবার ভোরে চুক্তিটির অনুমোদন দেয় ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা। এরপরই ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানায়, স্থানীয় সময় শুক্রবার দুপুর থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়েছে।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজার নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত সামরিক বাহিনীর অবস্থান সরিয়ে নেবে ইসরায়েল। অন্যদিকে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে—অর্থাৎ সোমবার দুপুর নাগাদ গাজায় এখনো বন্দী থাকা জীবিত সব জিম্মি ইসরায়েলকে ফিরিয়ে দেবে হামাস। এরপর ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দী প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে।

গাজায় সংঘাত বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি যে ২০ দফা ‘শান্তি পরিকল্পনা’ ঘোষণা করেছিলেন, তার প্রথম ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে এই যুদ্ধবিরতিকে। এর আগে সোমবার থেকে মিসরে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা চলছিল। এই আলোচনায় ফিলিস্তিনি সংগঠন ইসলামিক জিহাদ ও পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনও (পিএলএফপি) অংশ নিয়েছিল।

নুসেইরাত শরণার্থী শিবির থেকে উত্তর গাজার দিকে যাচ্ছে একটি ফিলিস্তিনি পরিবার। ছবি: এএফপি


২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় শুরু হওয়া ইসরায়েলি আক্রমণে দুই মাস সামান্য বেশি সময় বাদ দিলে বাকি সময়ে উপত্যকাটিতে নির্বিচার হামলা চলেছে। এতে ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। জাতিসংঘের একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গত মাসেই একে জাতিগত নিধন বলে উল্লেখ করেছে।

যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর গাজার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রথম ধাপে ইসরায়েলি সেনাদের অবস্থান সরাতে দেখা যায়। সেনারা উপত্যকার দক্ষিণে খান ইউনিস, মধ্যাঞ্চলে নুসেইরাত শরণার্থীশিবির এবং উত্তরে গাজা নগরীর ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল থেকে পূর্ব দিকে সরে যাচ্ছিল।

সেনা প্রত্যাহারের খবরে শুক্রবার মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থীশিবির থেকে ফিলিস্তিনিরা গাজা নগরীর দিকে ফিরতে শুরু করেন। ধ্বংসস্তূপের ভেতর দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে তাঁদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে দেখা যায়। ফিলিস্তিনি নাগরিক মেহেদি সাকলা বলেন, “জানি সব বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। তবুও ফিরতে পেরে আমরা খুশি। পালিয়ে বেড়াতে গিয়ে দুই বছর ধরে আমাদের কম ভুগতে হয়নি।”

স্ক্রাচে ভর দিয়ে গাজা নগরীর পথে ফিলিস্তিনি তরুণেরা। ছবি: এএফপি


গাজা কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, দুই বছরে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় গাজার ৯২ শতাংশ বা ৪ লাখ ৩৬ হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। শিক্ষাবঞ্চিত হচ্ছে প্রায় ৭ লাখ ৪৫ হাজার শিক্ষার্থী, কারণ স্কুল ধ্বংস হয়েছে ৫১৮টি। ৬৫৪টি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


হোয়াইট হাউসের প্রকাশিত একটি মানচিত্রে দেখা যায়, ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার অধীনে তিন ধাপে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করা হবে। প্রথম ধাপে সেনা সরালে উপত্যকার ৫৩ শতাংশ এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তৃতীয় ও শেষ ধাপে গাজা-ইসরায়েল সীমান্ত বরাবর ১৫ শতাংশ এলাকায় ‘নিরাপত্তা গণ্ডি’ তৈরি করে ইসরায়েলি সেনারা অবস্থান করবেন। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, 'হুমকি' পুরোপুরি কেটে না যাওয়া পর্যন্ত সেনারা কত দিন সেখানে থাকবেন, তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে।

ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে গন্তব্যের দিকে যাত্রা। ছবি: রয়টার্স


এদিকে, হামাসের হাতে এখনো জীবিত থাকা ২০ জন জিম্মিকে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দিতে হবে। তবে জিম্মিদের মধ্যে যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মরদেহ কবে নাগাদ ফেরত দেওয়া হবে, তা পরিষ্কার নয়।

অপরদিকে, ইসরায়েল কর্তৃক মুক্তি পেতে যাওয়া ১ হাজার ৯৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২৫০ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত।

চুক্তির আওতায় গাজায় প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক করে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেবে ইসরায়েল। জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানিয়েছেন, গাজায় সরবরাহের জন্য ১ লাখ ৭০ হাজার টন ত্রাণ মিসর ও জর্ডানে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য, দুই বছর ধরে ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাজায় তীব্র খাদ্যসংকট চলছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, এই সময়ে অনাহারে ৪৬০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৫৪টি শিশু।

যুদ্ধবিরতি চুক্তি ইসরায়েলের মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পরও এটি কার্যকর রাখা নিয়ে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির হুমকি দিয়ে বলেছেন, হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল না করা হলে তিনি জোট থেকে বেরিয়ে সরকার পতন ঘটাবেন।

ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদ হানান আশরাউই মনে করেন, যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের পরই ‘আসল চ্যালেঞ্জগুলো’ শুরু হবে। এর মধ্যে রয়েছে গাজা পুনর্গঠন ও অন্তর্বর্তী সরকার গঠন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, যুদ্ধবিরতির পর ফিলিস্তিনিদের ঐক্য ও ইসরায়েলি দখলদারি বন্ধের দিকে নজর দিতে হবে, বিশেষত পশ্চিম তীরে হামলা বন্ধের দিকে।

ফিলিস্তিনি শিশুর মুখে হাসি। যুদ্ধবিরতির পর শুক্রবার গাজার মধ্যাঞ্চলে গাড়িতে বোঝাই জিনিসপত্রের ওপর বসে উত্তর গাজায় নিজ ঠিকানায় ফিরছে সে ও তার পরিবার। ছবি: রয়টার্স

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.