এলডিপি-র নতুন সভাপতি সানায়ে তাকাইচি। নির্বাচনের পর রাজধানী টোকিওতে দলের সদর দপ্তরে। ছবি: এএফপি
জাপানের প্রধান ক্ষমতাসীন দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ৬৪ বছর বয়সী সানায়ে তাকাইচি। এর মধ্য দিয়ে তিনি দেশটির ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন। রাজনীতি, সরকারে অংশীদারত্ব, বাণিজ্য—যেসব ক্ষেত্রে জাপানে নারীরা এখনও অনেকটাই পিছিয়ে, সেখানে একজন নারীর এই শীর্ষ পদে আসা অপ্রত্যাশিত হলেও, তাকাইচির রাজনৈতিকভাবে অতিরক্ষণশীল ভাবাদর্শের কারণে প্রতিবেশী চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক আরও বেশি বৈরী হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
তাকাইচির এই উত্থান জাপানের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বাঁকবদলের ইঙ্গিত দিলেও, এর পেছনে রয়েছে দলের অভ্যন্তরে চরম দক্ষিণপন্থী মতাদর্শের জোরদার অবস্থান। যদিও ১৯৯০-এর দশকে সমাজতান্ত্রিক দলের তাকাকো দোইয়ের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছিল, তা শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। তবে দোই ছিলেন প্রগতিশীল বামপন্থী ধারার প্রতিনিধি, আর তাকাইচি দক্ষিণপন্থী এলডিপির কট্টর দক্ষিণপন্থী অংশের।
এই মতাদর্শিক পার্থক্যই এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রে। অতিরক্ষণশীল তাকাইচি জাপানে বিদেশি নাগরিকদের সংখ্যা বৃদ্ধির ঘোর বিরোধী। একই সঙ্গে, তিনি জাপানের সামরিক শক্তিকে আরও বলবান করে আত্মবিশ্বাসী চীনকে ঠেকানোর একজন বলিষ্ঠ সমর্থক।
তাকাইচি ও তাঁর অনুসারীরা জাপানের অতীত ইতিহাস, বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ঘটনাবলির মূল্যায়ন নিয়ে একটি কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তাঁদের মতে, বিশ্বযুদ্ধকালীন ঘটনা নিয়ে জাপান এর আগেও বহুবার ক্ষমা চেয়েছে। তাই এই 'ক্ষমা চাওয়ার গোলকধাঁধা' থেকে দেশকে অবশ্যই বের হয়ে আসতে হবে।
এই মনোভাব সরাসরি চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে জাপানের সম্পর্ককে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এই দেশ দুটি জাপানের যুদ্ধকালীন আচরণের জন্য এখনও কঠোর সমালোচনা করে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে তাকাইচির মতো একজন কট্টরপন্থী নেত্রীর উত্থান জাপানকে শেষ পর্যন্ত কোন জটিল পথে নিয়ে যাবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনা চলছে।
এলডিপির দলীয় সভাপতি নির্বাচনের আগে জাপানের সংবাদমাধ্যম ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বড় অংশ তাকাইচিকে দ্বিতীয় অবস্থানে রেখেছিলেন। তাদের ধারণা ছিল, অপেক্ষাকৃত তরুণ কৃষিমন্ত্রী কোইজুমি শিনজিরোই সম্ভবত নতুন সভাপতি নির্বাচিত হবেন। কিন্তু বিশ্লেষকদের প্রত্যাশা ভুল প্রমাণ করে জয় ছিনিয়ে আনেন তাকাইচি। সম্প্রতি তিনি দলের প্রভাবশালী কয়েকটি উপদলের প্রধানদের সঙ্গে বোঝাপড়া করে এই গুরুত্বপূর্ণ জয় নিশ্চিত করেন।
পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে হওয়া এই নির্বাচনে প্রথম দফায় তিনজন বাদ পড়েন। দ্বিতীয় দফার ভোটে তাকাইচি জয়ী হন। এলডিপির সাংসদ ও দলীয় সদস্যদের মধ্যে তিনি মোট ১৮৩টি ভোট পান, যেখানে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ৪৪ বছর বয়সী কোইজুমি পান ১৬৪টি ভোট। এর ফলে জাপানের ইতিহাসে কনিষ্ঠতম প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কোইজুমির সম্ভাবনা আপাতত শেষ হলো।
প্রধানমন্ত্রী পদে বসতে এখন তাকাইচির প্রয়োজন পার্লামেন্টের অনুমোদন। আগামী ১৫ অক্টোবর পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে ভোটাভুটি হবে। যদিও নিম্ন ও উচ্চ—কোনো কক্ষেই এলডিপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই, তবুও বিরোধী শিবিরগুলোর মধ্যেকার চিরাচরিত মতবিরোধের কারণে তাকাইচির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে তেমন কোনো বাধা নেই বলেই মনে করা হচ্ছে।
বিষয় : প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি জাপান
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh