× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

গাজায় থামেনি ইসরায়েলি তাণ্ডব: ট্রাম্পের আহ্বানের পর একদিনেই নিহত ৫৫

ন্যাশনাল ট্রিবিউন ডেস্ক

০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৩৮ এএম । আপডেটঃ ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৩৯ এএম

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতবিক্ষত। রয়টার্সের ফাইল ছবি।

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস গাজায় যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া ২০-দফা শান্তি প্রস্তাবের কিছু শর্তে রাজি হওয়ার ঘোষণা দিলেও ইসরায়েলের সামরিক অভিযান থামেনি। হামাসের এই ইতিবাচক পদক্ষেপের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েলকে হামলা বন্ধের আহ্বান জানালেও, একদিনের হামলায় গাজায় কমপক্ষে ৫৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে শনিবার রাতে ট্রাম্প দাবি করেন, ইসরায়েল সাময়িকভাবে বোমাবর্ষণ বন্ধ করেছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬৭ হাজার ছাড়িয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে হামাসের শর্তসাপেক্ষে সম্মতিকে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা ‘বড় অগ্রগতি’ হিসেবে স্বাগত জানালেও, ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত থাকায় শান্তি প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।

গত শুক্রবার রাতে হামাস জানায়, সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব, ফিলিস্তিনিদের বিভিন্ন অংশ এবং মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে ‘সলাপরামর্শের’ পর তারা সব জিম্মিকে ছেড়ে দেওয়া এবং ট্রাম্পের প্রস্তাবের কিছু শর্ত মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বাকি শর্তগুলো নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে চায় তারা।

হামাসের এই ঘোষণার পরপরই ট্রাম্প তাঁর সামাজিক মাধ্যম 'ট্রুথ সোশ্যাল'-এ ইসরায়েলের প্রতি তাৎক্ষণিক বোমাবর্ষণ বন্ধের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে জিম্মিদের দ্রুত ও নিরাপদে ফিরিয়ে আনা এবং মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি হবে।

তবে হামলায় বেসামরিক প্রাণহানির খবর আসার পরও, শনিবার রাতে ট্রাম্প একই প্ল্যাটফর্মে দাবি করেন, ‘ইসরায়েল সাময়িকভাবে বোমাবর্ষণ বন্ধ করেছে। আমি তাদের সাধুবাদ জানাই।’ তাঁর ভাষ্যমতে, জিম্মি মুক্তি ও শান্তিচুক্তি চূড়ান্ত করার সুযোগ দিতেই ইসরায়েল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একইসঙ্গে তিনি হামাসকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, অন্যথায় সব হিসাব-নিকাশ বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।

হামাসের ইতিবাচক অবস্থান আসার পর ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর প্রতি অবিলম্বে ট্রাম্পের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। জিম্মিদের স্বজনেরাও দ্রুত আলোচনা শুরুর দাবি জানিয়েছেন।

তবে নেতানিয়াহু জেরুজালেমে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় জানিয়েছেন, ইসরায়েলি আলোচকেরা জিম্মিদের কবে ও কীভাবে ফিরিয়ে আনা হবে, তা চূড়ান্ত করতে কাজ করবেন। একইসঙ্গে তিনি হুমকি দিয়ে বলেছেন, হামাসকে নিরস্ত্র করা হবে—সেটা ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শর্ত মেনে হোক বা ইসরায়েলি বাহিনীর সামরিক অভিযানের মাধ্যমেই হোক।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প গাজা যুদ্ধ বন্ধে ২০-দফা প্রস্তাব ঘোষণা করেন। এতে হামাসের অস্ত্র সমর্পণ, গাজার শাসনব্যবস্থায় হামাসের ভূমিকা না থাকা, জিম্মি মুক্তি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার-এর মতো বিষয়গুলো ছিল।

হামাস নিম্নলিখিত মূল বিষয়গুলোতে সম্মতি জানিয়েছে:

  • জিম্মি মুক্তি: ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী হামাস সব জিম্মি মুক্তি এবং বিনিময়ে ইসরায়েলে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির বিষয়ে রাজি।


  • যুদ্ধ ও সেনা প্রত্যাহার: যুদ্ধ বন্ধ ও গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তাবেও সংগঠনটি একমত।


  • ত্রাণ ও পুনর্গঠন: যুদ্ধবিরতির সঙ্গে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বৃদ্ধি ও গাজা পুনর্গঠন নিয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাবে তাদের কোনো দ্বিমত নেই।


  • শাসনভার হস্তান্তর: হামাস গাজার শাসনভার একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি সংস্থার কাছে হস্তান্তর করতে রাজি, তবে তাতে বিদেশিদের অংশগ্রহণ মানা হবে না। এই সংস্থাটি ফিলিস্তিনিদের জাতীয় ঐকমত্য এবং আরব ও ইসলামি বিশ্বের সমর্থনের ভিত্তিতে গঠিত হতে হবে।


তবে হামাস অস্ত্র সমর্পণ এবং গাজার শাসনব্যবস্থায় কোনো ভূমিকা না রাখার শর্ত দুটি নিয়ে নীরবতা বজায় রেখেছে। হামাস নেতা মুসা আবু মারজুক আল-জাজিরাকে জানান, ইসরায়েলি দখলদারত্ব পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা অস্ত্র সমর্পণ করবেন না।

ট্রাম্পের প্রস্তাবে হামাসের এই শর্তসাপেক্ষ সম্মতিকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উৎসাহব্যঞ্জক বলেছেন এবং সব পক্ষকে ‘এই সুযোগ কাজে লাগাতে’ আহ্বান জানিয়েছেন। মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার ও মিসর মনে করছে, এর মধ্য দিয়ে সংঘাত বন্ধের পথ প্রশস্ত হলো। ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের নেতারাও একে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ’ হিসেবে দেখছেন। ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লেন মনে করেন, শান্তিচুক্তি এখন নাগালের মধ্যে।

অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা শান্তির জন্য প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করবে। নেতানিয়াহু বিবৃতিতে বলেন, ‘হামাসের প্রতিক্রিয়ার আলোকে ইসরায়েল সব জিম্মির অবিলম্বে মুক্তির জন্য ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রথম ধাপ তাৎক্ষণিক বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে।’

তবে এসব বিবৃতির পরেও গাজায় ইসরায়েলি ট্যাঙ্কের গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ইসরায়েলের হামলায় আরও ৫৫ ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ বাড়ছে।

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.