× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

উত্তাল পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর, চার দিনে নিহত ১৫, থমকে গেছে জীবনযাত্রা

ন্যাশনাল ট্রিবিউন ডেস্ক:

০৩ অক্টোবর ২০২৫, ২২:৪০ পিএম । আপডেটঃ ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০০:১০ এএম

মুজাফফরাবাদের উত্তপ্ত রাস্তায় বিক্ষোভের আগুন, তবুও সেই পথেই চলছে মানুষের নিত্যদিনের চলাচল। ছবি: এএফপি

পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে (আজাদ কাশ্মীর) থমথমে পরিস্থিতি। টানা চার দিনের অচলাবস্থা ও সংঘর্ষে অঞ্চলটি এখন উত্তাল। গত কয়েক দিনের বিক্ষোভ, যা মূলত অর্থনৈতিক দাবিকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল, তাতে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে তিনজন পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছেন।

বিক্ষোভের মুখে গতকাল বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় সরকার একটি উচ্চ পর্যায়ের আলোচক কমিটি গঠন করে। কমিটির সদস্যরা রাজধানী মুজাফফরাবাদ পৌঁছেছেন এবং আজ শুক্রবার থেকে আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের চেষ্টা করবেন। তারা বৈঠক করবেন জম্মু–কাশ্মীর জয়েন্ট আওয়ামী অ্যাকশন কমিটির (জেএএসি) সঙ্গে। ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজভিত্তিক সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী জেএএসি এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের অসন্তোষের প্রধান কণ্ঠস্বর।

অধিকারকর্মী শওকত নওয়াজ মীরের নেতৃত্বে জেএএসি গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে এই অচলাবস্থা শুরু করেছে। এতে আজাদ কাশ্মীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পুরোপুরি অচল হয়ে পড়েছে।


  • মুজাফফরাবাদের সব জমজমাট বাজার সম্পূর্ণ বন্ধ।
  • রাস্তায় গণপরিবহন চলছে না।
  • স্থবিরতার কারণে এখানকার প্রায় ৪০ লাখ মানুষ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।


পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাশ্মীর সরকার যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা মুঠোফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন না। সরকার এক বিবৃতিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কথা বলেছে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো ‘প্রচার’ ও ‘ভুয়া খবর’-এ বিভ্রান্ত না হতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তাদের দাবি, এটি নির্দিষ্ট একটি অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা।

গত দুই বছরে এ নিয়ে তৃতীয় দফা বড় বিক্ষোভে নামল জেএএসি। তাদের অভিযোগ, সরকারের সঙ্গে আলোচনায় ৩৮ দফা দাবির ব্যাপারে কোনো সমঝোতা হয়নি, যা নতুন আন্দোলনের মূল কারণ। স্থানীয় সরকার ও তৃণমূলভিত্তিক আন্দোলনের দীর্ঘ দুই বছরের দ্বন্দ্বের জেরেই বর্তমান এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এর মূল শিকড় প্রোথিত ২০২৩ সালের মে মাসে, যখন প্রথমবারের মতো বিদ্যুতের বিল বৃদ্ধি, ভর্তুকিপ্রাপ্ত গমের তীব্র ঘাটতি এবং আটা পাচারের অভিযোগ সামনে আসে।

২০২৩ সালের আগস্টে এসব বিচ্ছিন্ন অভিযোগ সংগঠিত প্রতিরোধে রূপ নেয় এবং সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন অঞ্চলের প্রতিনিধিরা মুজাফফরাবাদে জড়ো হয়ে জেএএসি গঠন করেন। এটি চরম আকার ধারণ করে ২০২৪ সালের মে মাসে। ওই সময় বিক্ষোভকারীরা মুজাফফরাবাদের দিকে দীর্ঘ মিছিল শুরু করলে সহিংস সংঘর্ষে কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হন। পরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ গুরুত্বপূর্ণ দাবিগুলো মেনে নেওয়ার পরই সহিংস বিক্ষোভ শেষ হয়।

জেএএসির ৩৮ দফা দাবির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দাবি হলো:

১. ক্ষমতাসীন অভিজাতদের বিশেষ সুবিধা বিলুপ্ত করা: এটি পূর্ববর্তী বিক্ষোভের সময়ও বারবার করা হয়েছে। মন্ত্রীসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের জন্য দেওয়া সরকারি গাড়ি, ব্যক্তিগত সহকারী, নিরাপত্তা প্রহরী এবং সীমাহীন জ্বালানির সুবিধা বাতিল করা।

২. শরণার্থীদের জন্য সংরক্ষিত আসন বিলোপ: স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের আইনসভায় শরণার্থীদের জন্য নির্ধারিত ১২টি সংরক্ষিত আসন বাতিলের দাবি জানিয়েছে জেএএসি। তাদের ভাষ্যমতে, ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর থেকে আসা শরণার্থীরা এখন শক্তিশালী রাজনৈতিক জোট তৈরি করছেন এবং উন্নয়ন তহবিলের ওপর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছেন।

৩. অন্যান্য দাবি: বিনা মূল্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, আইনসভা কাঠামোতে পরিবর্তন আনা, কর ছাড়, কর্মসংস্থানের উন্নয়ন এবং পূর্ববর্তী আন্দোলনে আটক কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার।


স্থানীয় প্রশাসন ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত আধা সামরিক বাহিনী এবং অন্য অঞ্চল থেকে পুলিশ মোতায়েন করেছে। জেএএসি এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করে বলেছে, স্থানীয় পুলিশ থাকায় পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ড থেকে আধা সামরিক বাহিনীর কোনো প্রয়োজন নেই।

পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অর্থমন্ত্রী আবদুল মজিদ খান স্বীকার করেছেন, সরকার জেএএসির ৩৮ দফা দাবির অধিকাংশ মেনে নিলেও দুইটি বিতর্কিত বিষয়—শরণার্থীদের জন্য সংরক্ষিত আসন বিলোপ এবং ক্ষমতাসীন অভিজাতদের বিশেষ সুবিধা বাতিল—এখনো মীমাংসা হয়নি। মন্ত্রী মজিদ খান এই সংরক্ষিত আসন বাতিলের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, কারণ এই শরণার্থীরা দেশভাগের সময় ভারতে সব সম্পদ ফেলে এখানে এসেছেন।

গতকাল কোনো সমাধান ছাড়াই সরকারি প্রতিনিধি ও জেএএসির সদস্যদের মধ্যকার প্রথম দফার আলোচনা শেষ হয়। আজ শুক্রবার পরবর্তী দফার আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আবদুল মজিদ খান আশা প্রকাশ করেছেন যে আলোচনায় যথাযথ অগ্রগতি হলে সরকার দ্রুত ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা পুনঃস্থাপন করবে। তিনি বলেন, 'মুজাফফরাবাদে আলোচনা কমিটি উপস্থিত থাকায় আমি আশাবাদী। শিগগিরই এই স্থবির অবস্থার সমাধান হবে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।'

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.