× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

গাজাগামী ৪০ দেশের ত্রাণবহরকে ঘিরে ফেলেছে ইসরায়েলি নৌবাহিনী

ন্যাশনাল ট্রিবিউন ডেস্ক:

০২ অক্টোবর ২০২৫, ০০:৫৩ এএম । আপডেটঃ ০২ অক্টোবর ২০২৫, ০০:৫৬ এএম

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা অভিমুখী আন্তর্জাতিক ত্রাণবাহী নৌবহর 'গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা'-তে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের তীব্র আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। ফ্লোটিলার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইতোমধ্যে তাদের নৌযান 'আলমা'কে ইসরায়েলি সেনারা দুই দিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। অল্প সময়ের মধ্যেই তারা পুরো বহরে হস্তক্ষেপ করতে পারে।

ইসরায়েলের হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করেই 'গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা' ত্রাণের বিশাল বহর নিয়ে গাজার উপকূলের দিকে এগিয়ে চলেছে। এই বহর থেকে জানানো হয়েছে, উপকূলের কাছাকাছি এলাকায় প্রায় ২০টিরও বেশি ইসরায়েলি যুদ্ধজাহাজ দেখা গেছে, যা তাদের থেকে মাত্র ৫.৫ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে।

ফ্লোটিলার স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ইয়াসেমিন আকর আল–জাজিরাকে জানিয়েছেন, ইসরায়েলিরা আলমা নামের জাহাজটিকে ইতোমধ্যে ঘিরে ফেলেছে। যেকোনো মুহূর্তে তারা জোরপূর্বক এই নৌবহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল নাগাদ ইসরায়েলি নৌবাহিনী সুমুদ ফ্লোটিলার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

সমুদ্রপথে গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার এই বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় ৪০টিরও বেশি বেসামরিক নৌযান যুক্ত রয়েছে। প্রায় ৪৪টি দেশের ৫০০ জনের বেশি মানুষ এই বহরে অংশ নিয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়ামসহ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচিত প্রতিনিধি, আইনজীবী, অধিকারকর্মী, চিকিৎসক ও সাংবাদিক।

এই বহরের অন্যতম পরিচিত মুখ সুইডিশ জলবায়ু অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ এবং বর্ণবাদবিরোধী অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি ম্যান্ডলা ম্যান্ডেলা।

বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণ:

'মিডিয়া ফ্লোটিলায়' বাংলাদেশ থেকে যোগ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। গত মঙ্গলবার ইতালির একটি বন্দর থেকে তিনি ফ্লোটিলার প্রধান নৌযান 'কনশানস'-এ উঠেছেন। যাত্রা শুরুর পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বহরের আয়োজকরা গতকাল জানিয়েছেন, আগের দিন রাতে তাদের কয়েকটি নৌযান সাইবার হামলার শিকার হয়, যার ফলে সেগুলোর যোগাযোগব্যবস্থা সাময়িকভাবে বিকল হয়ে যায়। এর পাশাপাশি দুটি ইসরায়েলি যুদ্ধজাহাজ 'আলমা' ও 'সাইরাস' নামের দুটি নৌযানের দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে এসে ভীতি সৃষ্টি করে। এই ত্রাণবাহী আন্তর্জাতিক নৌবহরটিকে সামনে অগ্রসর না হওয়ার হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিয়ন সার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি বহরে থাকা ত্রাণ শান্তিপূর্ণভাবে সাইপ্রাস বা এই অঞ্চলের অন্য যেকোনো বন্দরের মাধ্যমে গাজায় স্থানান্তরের আহ্বান জানান। ফ্লোটিলার পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই শত্রুতাপূর্ণ কর্মকাণ্ড ৪০টিরও বেশি দেশের নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের চরম বিপদের মুখে ফেলে দিয়েছে।’ তবে গাজার দিকে তাঁদের যাত্রা অব্যাহত থাকবে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও নিরাপত্তার আহ্বান

  • ইতালি ও স্পেন যেকোনো উদ্ধারকাজ বা মানবিক সহায়তার জন্য এই বহরে নৌবাহিনীর জাহাজ মোতায়েন করেছে, যদিও তারা সামরিক কোনো কর্মকাণ্ডে জড়াবে না বলে জানিয়েছে। তুরস্কের ড্রোনও নৌবহরকে অনুসরণ করছে।


  • যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সুমুদ ফ্লোটিলার সুরক্ষা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে। তাদের দাবি, রাষ্ট্রগুলোর উচিত ফ্লোটিলার নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করা এবং ইসরায়েলের বেআইনি অবরোধের সমাপ্তি দাবি করা।


  • মার্কিন কংগ্রেসের ২০ সদস্য, যাদের মধ্যে আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজ, রাশিদা তালিব ও ইলহান ওমর প্রমুখ রয়েছেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে নৌবহরের সুরক্ষা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন।


  • স্পেন, ইতালি ও গ্রিসও বহরে থাকা অধিকারকর্মীদের কোনো ধরনের ক্ষতি না করার আহ্বান জানিয়েছে।


  • ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস ২০০৭ সালে গাজায় ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইসরায়েল সমুদ্রপথে অবরোধ শুরু করে। এরপর থেকে বেশ কয়েকবার এই অবরোধ ভাঙার চেষ্টা হয়েছে।

এর আগে গত জুন মাসে গাজার দিকে ত্রাণ নিয়ে যাওয়া 'ম্যাডলিন' নামে একটি নৌযান আন্তর্জাতিক জলসীমায় আটক করে ইসরায়েলি সেনারা। ওই নৌযানে গ্রেটা থুনবার্গসহ ১২ জন অধিকারকর্মী ছিলেন। পরে জুলাই মাসে 'হান্দালা' নামে আরও একটি নৌযান আটক করা হয়, যাতে ১০টি দেশের ২১ জন ছিলেন। ইসরায়েলের এসব পদক্ষেপ সে সময় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে গাজায় নির্বিচার হামলার পাশাপাশি ইসরায়েল সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ করেছে। যদিও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে তারা কিছু ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছিল, তবে সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি ভেঙে গত ১৮ মার্চ থেকে আবার সর্বাত্মক হামলা শুরু করার পাশাপাশি অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় ত্রাণ প্রবেশও বন্ধ করে দেয় দেশটি।

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.