পাকিস্তানের সামরিক শক্তির প্রতীক দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র শাহিন-৩।২৫ মার্চ, ২০২১। ফাইল ছবি: এএফপি
সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্প্রতি স্বাক্ষরিত প্রতিরক্ষা চুক্তিকে ঘিরে পারমাণবিক সক্ষমতা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা তুঙ্গে উঠেছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য এই জল্পনাকে আরও উসকে দিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে একটি টিভি টক শোতে অংশ নিয়ে আসিফ ইঙ্গিত দেন, এই নতুন চুক্তির অধীনে পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতা (অস্ত্র ও প্রযুক্তি) সৌদি আরবকে দেওয়া হতে পারে। তিনি বলেন, 'আমাদের যা আছে এবং যে সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি, তা এই চুক্তির অধীনে সৌদি আরবকে দেওয়া হবে।' যদিও তিনি একই সঙ্গে জোর দিয়ে বলেন যে পাকিস্তান একটি দায়িত্বশীল পারমাণবিক শক্তি।
পারমাণবিক অস্ত্র কি চুক্তির আওতায়?
১৭ সেপ্টেম্বর রিয়াদে 'কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি' (Strategic Mutual Defence Agreement - SMDA) স্বাক্ষরিত হয়, যেখানে খাজা আসিফ উপস্থিত ছিলেন। তাই তার মন্তব্যকে প্রথম স্পষ্ট ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছিল যে পাকিস্তান প্রয়োজনে সৌদি আরবকে পারমাণবিক সহায়তা দিতে পারে।
তবে এর কিছুক্ষণ পরই রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি তার পূর্ববর্তী বক্তব্য থেকে সরে আসেন। আসিফ বলেন, 'পারমাণবিক অস্ত্র এই চুক্তির অংশ নয়।'
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের 'কৌশলগত নীরবতা'
এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার 'কৌশলগত নীরবতা' অবলম্বন করে। সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাফকাত আলী খান চুক্তি-সংক্রান্ত কোনো প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেননি। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এই চুক্তির ফলে কি ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হওয়ার জন্য পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের পারমাণবিক নীতিতে পরিবর্তন আসছে?
দু’বার প্রশ্ন করা হলেও শাফকাত আলী খান সরাসরি কোনো জবাব দেননি। তিনি শুধু বলেন, 'যেকোনো নীতির মতোই এই নীতিও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে এবং এটি পরিবর্তনশীল।' তিনি আরও বলেন, 'আমি এখানে নীতির নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে মন্তব্য করতে আসিনি, তবে আমাদের অবস্থান সবার জানা।'
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবরই বলে আসছে, তাদের কৌশলগত কর্মসূচি এবং পারমাণবিক সক্ষমতা শুধু ভারতের দিক থেকে আসা হুমকি মোকাবিলায় ব্যবহার করা হবে এবং এটি অন্য কোনো দেশের জন্য হুমকি নয়।
শাফকাত আলী খান আরও জানান, ১৯৬০-এর দশক থেকে পাকিস্তান ও সৌদি আরবের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অন্যতম প্রধান ভিত্তি হলো প্রতিরক্ষা সহযোগিতা। নতুন কৌশলগত চুক্তি এই দীর্ঘদিনের সম্পর্ককে আনুষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই চুক্তিটি প্রতিরক্ষামূলক এবং তৃতীয় কোনো দেশকে লক্ষ্য করে করা হয়নি।
সৌদি কর্মকর্তারাও কি পারমাণবিক সহায়তা ইঙ্গিত দিয়েছেন?
চুক্তির পর সৌদি আরবের একজন কর্মকর্তা এক পশ্চিমা সংবাদ সংস্থাকে ইঙ্গিতে বলেছিলেন, এই চুক্তির আওতায় রিয়াদ পারমাণবিক সুরক্ষা পাবে। পরবর্তীতে সৌদি বিশ্লেষকরাও এই দাবিকে আরও জোরালো করেন। চুক্তির যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটি 'দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা উন্নত করতে এবং যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিরোধব্যবস্থা শক্তিশালী করার' একটি উদ্যোগ।
এদিকে, লন্ডনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ইঙ্গিত দেন যে আরও কিছু দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে এমন কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে আগ্রহী। তিনি বলেন, 'এটি করতে কয়েক মাস সময় লেগেছে, রাতারাতি স্বাক্ষর হয়নি।'
ইসহাক দার এই চুক্তিকে 'ঐতিহাসিক' উল্লেখ করে বলেন, 'নিষেধাজ্ঞার মতো কঠিন সময়ে সৌদি আরব সব সময় আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে যখন আমাদের আইএমএফের সহায়তার প্রয়োজন ছিল, তখন তাদের সমর্থন ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।'
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh