ভূমিকম্পে ধসে পড়া বাড়ির সামনে এক আফগান শিশু। ছবি: রয়টার্স
পাঁচ দিনের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো ভূমিকম্পের আঘাতে বিপর্যস্ত আফগানিস্তান এখন এক ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখোমুখি। আন্তর্জাতিক সহায়তা বাড়ানোর জন্য দেশটির ক্ষমতাসীন তালেবান সরকার এবং একাধিক দাতা সংস্থা বিশ্বের কাছে জরুরি আবেদন জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৫৬ মিনিটে দেশটির দক্ষিণ-পূর্বে এই তৃতীয় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। জার্মানির রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সেসের মতে, এর মাত্রা ছিল ৬.২, যদিও বিবিসির প্রতিবেদনে মাত্রা ৫.৬ বলা হয়েছে। এই কম্পনের কেন্দ্রস্থল ছিল পাকিস্তান সীমান্তের নিকটবর্তী শিওয়া জেলায় এবং উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে।
আফগানিস্তানের ইতিহাসে অন্যতম প্রাণঘাতী ভূমিকম্পটি আঘাত হানে গত রোববার। এরপর মঙ্গলবার আরও একটি ভূমিকম্পে দেশটি কেঁপে ওঠে। রোরববারের ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ইতিমধ্যে ২ হাজার ২০০ ছাড়িয়ে গেছে বলে নিশ্চিত করেছে তালেবান প্রশাসন। আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৬৪০ জনের বেশি মানুষ। আগের দুটি ভূমিকম্পে কুনার ও নানগারহার প্রদেশের বহু গ্রাম মাটির সঙ্গে মিশে গেছে এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সংস্থাগুলো আফগানিস্তানে জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য, ওষুধ, চিকিৎসা ও আশ্রয় সামগ্রী পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (আইএফআরসি) জানিয়েছে, প্রায় ৮৪ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বেঁচে যাওয়া অনেকেই আশ্রয়হীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক দাতব্য সংস্থা ইসলামিক রিলিফ ওয়ার্ল্ডওয়াইড জানিয়েছে, কুনারের কিছু ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামে মোট বাসিন্দাদের দুই-তৃতীয়াংশই হতাহত হয়েছে এবং ৯৮ শতাংশ বাড়িঘর সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস হয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও অনেকে আটকা পড়ে থাকতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে এবং মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক স্থানে হেলিকপ্টার নামানো যাচ্ছে না, তাই কমান্ডো সদস্যদের আকাশপথে নামানো হয়েছে। দেশটির ৪ কোটি ২০ লাখ মানুষের জন্য জরুরি ভিত্তিতে উদ্ধার সরঞ্জাম ও ত্রাণ সামগ্রীর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ওষুধ ও জরুরি সরঞ্জামের জন্য তাদের প্রায় ৩০ লাখ ডলারের তহবিল ঘাটতি রয়েছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির হাতে মাত্র চার সপ্তাহের জন্য ত্রাণ মজুদ আছে। নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের প্রধান জ্যাকোপো ক্যারিডি বলেন, “শুধু তাৎক্ষণিক সাহায্য নয়, দীর্ঘমেয়াদে আফগানদের ভবিষ্যতের জন্যও দাতাদের এগিয়ে আসতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, "এই ভূমিকম্প যেন এক কঠিন সতর্কবার্তা হয়, একের পর এক সংকটে জর্জরিত আফগানিস্তানকে একা ফেলে রাখা যাবে না।"
বিষয় : আফগানিস্তান কুনার নানগারহার ভূমিকম্প
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh