× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

চীন কি সামরিক সক্ষমতায় যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে?

ন্যাশনাল ট্রিবিউন ডেস্ক

০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:৪৮ পিএম । আপডেটঃ ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪:৩২ পিএম

ড্রোন প্রদর্শন করেছে পিপলস লিবারেশন আর্মির ড্রোন গ্রুপ

সাম্প্রতিক সামরিক প্রদর্শনীতে চীনের চোখধাঁধানো সমরাস্ত্র প্রদর্শন তাদের সামরিক সক্ষমতা নিয়ে নতুন করে আলোচনা উসকে দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা বিশ্বে এমন ধারণা প্রচলিত ছিল যে চীন কেবল পশ্চিমা প্রযুক্তির নকল করে, মেধা সম্পদ চুরি করে এবং সরকারি অনুদানের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। রোবটিকস, বৈদ্যুতিক যান, পারমাণবিক চুল্লি, সৌরশক্তি, ড্রোন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে চীন এখন উদ্ভাবক ও নেতা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে।

সামরিক শক্তির নতুন অধ্যায়:

৩ সেপ্টেম্বর বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত সামরিক কুচকাওয়াজ চীনের সামরিক শক্তির এক ঝলক দেখিয়েছে। এই প্রদর্শনী প্রমাণ করে, সামরিক প্রযুক্তিতে চীন অনেক দূর এগিয়েছে। এখন আর বলা যাবে না যে চীনের সামরিক বাহিনী (পিএলএ) শুধু অন্যদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে বা বিদেশি সরঞ্জাম নকল করছে। তারা এখন উদ্ভাবন করছে এবং নিজেদের প্রযুক্তিগত মান বাড়াচ্ছে। এর ফলে দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের হাতে থাকা আঞ্চলিক সামরিক ভারসাম্য এখন পরিবর্তন হচ্ছে।

লেজারভিত্তিক আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সামনে এনেছে চীনের সামরিক বাহিনী


প্রদর্শনীর মূল আকর্ষণ:

বিজয় দিবসের এই কুচকাওয়াজ ছিল চীনের সামরিক শক্তির ভবিষ্যৎ প্রদর্শনের একটি অংশ। সাধারণত চীন তাদের অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম সহজে দেখায় না, কিন্তু এবার তারা সেই নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করেছে।

  • যুদ্ধবিমান ও ড্রোন: এই প্রদর্শনীতে চীনের ক্রমবর্ধমান বিমানবাহী জাহাজের বহরের জন্য তৈরি নতুন যুদ্ধবিমানগুলো দেখানো হয়েছে। তাদের বহরে তিনটি বিমানবাহী জাহাজ রয়েছে এবং আগামী বছরগুলোতে আরও একটি পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন সুপারক্যারিয়ার যুক্ত হতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জেরাল্ড ফোর্ড শ্রেণির মতোই বড় ও সক্ষম। এছাড়াও, নতুন চার ধরনের 'লয়াল উইংম্যান' ড্রোনের উন্মোচন করা হয়েছে। এগুলো পাইলটচালিত বিমানের পাশাপাশি উড়ে এবং তাদের নির্দেশে কাজ করে।
  • ক্ষেপণাস্ত্র ও সাবমেরিন: কুচকাওয়াজে চার ধরনের নতুন জাহাজবিধ্বংসী এবং ভূমি থেকে ভূমিতে হামলার ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা প্রদর্শন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে একটি নতুন মনুষ্যবিহীন সাবমেরিন ও টর্পেডোরও উন্মোচন করা হয়।
  • যুদ্ধ সরঞ্জাম: চীনের সামরিক বাহিনী একটি লেজারভিত্তিক আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সামনে এনেছে। পাকিস্তান-ভারতের সাম্প্রতিক বিমানযুদ্ধে পাকিস্তানের চীনা সরঞ্জামগুলোর কার্যকারিতা তাদের সামরিক সক্ষমতাকে আরও নির্ভরযোগ্য প্রমাণ করেছে।


প্রযুক্তিগত অগ্রগতি:

গত এক বছরে প্রকাশিত বিভিন্ন তথ্য চীনের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ওপর জোর দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন স্টিলথ কমব্যাট বিমানের পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের ছবি ও ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে। একটি নতুন শক্তিচালিত বার্জও তৈরি করছে চীন, যা অপ্রস্তুত উপকূলীয় এলাকায় ভারী সামরিক যান খালাস করতে সাহায্য করবে। বাণিজ্যিক উপগ্রহের ছবি থেকে জানা গেছে, বেইজিংয়ের বাইরে চীন একটি নতুন সামরিক কমান্ড সেন্টার নির্মাণ করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের পেন্টাগনের চেয়েও বড়।

১৯৯০-এর দশক থেকে পিএলএ সম্ভবত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যেকোনো সামরিক বাহিনীর চেয়ে দ্রুত প্রযুক্তিগত রূপান্তরের মধ্য দিয়ে গেছে। চীন সম্পূর্ণ দেশীয় একটি সামরিক শিল্প খাত গড়ে তোলার দিকে মনোনিবেশ করছে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে একটি বিশ্বমানের সামরিক শক্তি হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা ঘোষণা করেছে।

কুচকাওয়াজে পিপলস লিবারেশন আর্মির নারী সেনারা


চীনের লক্ষ্য কী?

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, এই বিশাল সামরিক শক্তি দিয়ে চীন আসলে কী করতে চায়? একটি সম্ভাবনা হলো, তারা এমন একটি বাহিনী তৈরি করছে যা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করবে। গত ফেব্রুয়ারিতে যখন পিএলএ নৌবাহিনীর একটি বহর অস্ট্রেলিয়ার চারপাশে প্রদক্ষিণ করে, তখন দূরবর্তী অস্ট্রেলিয়াও চীনের নতুন সক্ষমতার বার্তা পায়।

তবে এটাও ঠিক, গত ৯ মাসে উন্মোচিত বেশিরভাগ অস্ত্র বা সরঞ্জাম এমনভাবে তৈরি হয়েছে, যা প্রাথমিকভাবে তাদের নিজেদের আশপাশের এলাকায় অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে। আন্তমহাদেশীয় পাল্লার বোমারু বিমান মোতায়েন করা থেকে তারা এখনো বহু বছর দূরে। তাই বলা যায়, চীন বিশ্বব্যাপী শক্তি প্রদর্শনের চেয়ে তাদের আঞ্চলিক অবস্থানকে দৃঢ় করার দিকেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছে।

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.