যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় অনাহার পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠছে। ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনা পরিত্যাগ করতে পারেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তাদের দাবি, ফিলিস্তিনি ‘জঙ্গিরা’ কোনো চুক্তি চায় না এটি পরিষ্কার হয়ে গেছে।
নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, গাজা থেকে তাদের জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা এবং ফিলিস্তিনি ছিটমহলটিতে হামাসের শাসন অবসানের লক্ষ্য অর্জনে ‘বিকল্প’ উপায় নিয়ে সতর্কভাবে পর্যালোচনা করছে তারা।
রয়টার্স বলছে, গাজায় ইসরায়েলের আরোপিত অবরোধ ও ২১ মাস ধরে চলা নির্বিচার হামলার মধ্যে ভূখণ্ডটিজুড়ে অনাহার ছড়িয়ে পড়ছে এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে অধিকাংশ বাসিন্দা গৃহহীন হয়ে আছেন।
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন হামাস নেতাদের এখন ‘খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হবে’।
সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, “হামাস আসলে কোনো চুক্তি করতে চায় না। আমার মনে হয়, তারা মরতে চায়। আর এটি খুব খারাপ। আর এটি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছবে যেখানে আপনাকে কাজটি শেষ করতে হবে।”
রয়টার্স লিখেছে, দুই নেতার এসব মন্তব্যে মনে হচ্ছে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় নাজুক হতে থাকা অনাহার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ যখন তীব্র হয়ে উঠছে তখন অন্তত স্বল্প সময়ের মধ্যে লড়াইয়ে বিরতির জন্য আলোচনা ফের শুরু করার মতো খুব অল্প বা তেমন কোনো পরিসর আর নেই।
অবিলম্বে গাজায় অনাহার বন্ধের দাবি জানিয়ে নিউ ইয়র্কে বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ গাজার অবনতি হতে থাকা মানবিক পরিস্থিতিতে ঘোষণা করেছেন, প্যারিস স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিমা দেশ হতে যাচ্ছে।
ব্রিটেন ও জার্মানি জানিয়েছে, তারা এখনও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত নয়, তবে তারা পরে ফ্রান্সের সঙ্গে যোগ দিয়ে গাজায় অবিলম্বে অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার জানিয়েছেন, শুধুমাত্র আলোচনার মাধ্যমে পৌঁছানো একটি শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে তারা সরকার ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিবে।
ট্রাম্প মাক্রোঁর পদক্ষেপকে বিবেচনার অযোগ্য বলে গণ্য করেছেন। তিনি বলেছেন, “তিনি কী বলেছেন তা কোনো ব্যাপার না। তিনি খুব ভালো মানুষ। আমি তাকে পছন্দ করি, কিন্তু তার বিবৃতির কোনো গুরুত্ব নেই।”
বৃহস্পতিবার ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র কাতারে চলতে থাকা গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনা থেকে তাদের প্রতিনিধিদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের বিষয়ে হামাস তাদের প্রতিক্রিয়া জমা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর এ ঘটনা ঘটে।
বৃহস্পতিবার কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে জানিয়েছিলেন যে ইসরায়েলি প্রতিনিধিদের প্রত্যাহার শুধুমাত্র পরামর্শের জন্য এবং এর অর্থ এই নয় যে আলোচনা একটি সংকটে পড়েছে। কিন্তু নেতানিয়াহুর মন্তব্যে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে ইসরায়েলের অবস্থান রাতারাতি আরও কঠোর হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, এই অচলাবস্থার জন্য হামাস দায়ী। আর নেতানিয়াহু বলেছেন, উইটকফ ঠিক বলেছেন।
ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
হামাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাসেম নাইম ফেইসবুকে বলেছেন, আলোচনা গঠনমূলক ছিল। তিনি উইটকফের মন্তব্যের সমালোচনা করে বলেছেন, ইসরায়েলের পক্ষ হয়ে চাপ প্রয়োগের লক্ষ্যে তিনি এ মন্তব্য করেছেন।
মধ্যস্থকারী কাতার ও মিশর বলেছে, সর্বশেষ আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে। ‘স্থগিত’ এই প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক অংশ বলে দাবি করেছে তারা। তারা জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মধ্য দিয়ে একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতিতে ৬০ দিনের জন্য লড়াই বন্ধ রাখার, গাজায় আরও ত্রাণ সরবরাহ এবং অবশিষ্ট ৫০ জিম্মির মধ্যে কিছুজনকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
যদি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছানো না যায় তাহলে ইসরায়েল কবে গাজা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করবে এবং ৬০ দিনের অস্ত্রবিরতির পর কী হবে এসব নিয়ে মতবিরোধে আলোচনা আটকে আছে।
ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতমার বেন গাভির নেতানিয়াহুর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ রাখা এবং ফিলিস্তিনি ছিটমহলটি পুরোপুরি দখল করার আহ্বান জানিয়েছেন।
সামাজিক মাধ্যম এক্স এ এক পোস্টে তিনি বলেছেন, “হামাসের সম্পূর্ণ নির্মূল, দেশত্যাগকে উৎসাহিত করে (ইহুদি) বসতিস্থাপন কর।”
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh