থাইল্যান্ডের গোলার আঘাতে কম্বোডিয়ার একটি প্যাগোডা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
কম্বোডিয়ার সঙ্গে দুদিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর সীমান্তবর্তী আটটি জেলায় মার্শাল ল’ জারি করেছে থাইল্যান্ড। শুক্রবার দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম বেচায়াচাই হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, পরিস্থিতি যদি আরও খারাপ হয়, তাহলে তা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।
বৃহস্পতিবার থেকে সীমান্তে বিমান হামলা, কামান ও ট্যাংক নিয়ে তীব্র লড়াই শুরু হয়েছে। সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৬ জন থাই নাগরিক নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও ৪৬ জন। কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও পাঁচজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
থাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৩৮ হাজারের বেশি মানুষকে সীমান্ত এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে সীমান্তবর্তী ওদার মিনচি প্রদেশে কামানের গোলার শব্দ শোনা গেছে।
কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী সামরুং শহর থেকে বাসিন্দারা পরিবার নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় এক ব্যক্তি প্রো বাক (৪১) বলেন, আমি সীমান্তের খুব কাছে থাকি। আমরা ভয়ে আছি। তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে একটি বৌদ্ধ মন্দিরে আশ্রয় নিতে গিয়েছিলেন।
থাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নিকর্নদেজ বালানকুরা বলেছেন, যদি কম্বোডিয়া চায় আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত। মালয়েশিয়ার মধ্যস্থতায় হলেও আমরা আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তবে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত কম্বোডিয়া থেকে কোনও ইতিবাচক সাড়া আসেনি।
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়া বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছে।
এদিকে, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত দাবি করেছেন, থাইল্যান্ড একবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। তিনি জানান, আমরা ব্যাংককের প্রকৃত সদিচ্ছার অপেক্ষায় রয়েছি।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ গভীরভাবে উদ্বেগজনক। বিষয়টি শান্তভাবে ও দায়িত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের বহু অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধপূর্ণ। ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সংঘর্ষে অন্তত ২৮ জন নিহত এবং কয়েক হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন।
২০১৩ সালে জাতিসংঘের একটি আদালতের রায়ে বিরোধ কিছুটা স্তিমিত হয়েছিল। তবে চলতি বছরের মে মাসে কম্বোডিয়ার এক সেনার মৃত্যুতে উত্তেজনা ফের চূড়ায় ওঠে।
থাই সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ছয়টি স্থানে লড়াই হয়েছে। পুরোনো দুটি প্রাচীন মন্দিরের আশপাশেও সংঘর্ষ হয়েছে। ট্যাংক নিয়ে সেনারা লড়েছে। কম্বোডিয়া থাইল্যান্ডের ভেতরে রকেট ও কামান ছুড়েছে। জবাবে থাইল্যান্ড এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে সীমান্তের ওপারে লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়।
উভয় দেশই একে অপরকে সংঘর্ষ শুরুর জন্য দায়ী করছে। থাইল্যান্ড অভিযোগ করেছে, কম্বোডিয়ার গোলায় তাদের একটি হাসপাতাল ও একটি পেট্রোল স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সীমান্ত সংঘর্ষ ঘিরে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ শুক্রবার রাতে একটি জরুরি বৈঠক ডেকেছে। বিশ্লেষকদের মতে, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া উভয়ই পর্যটননির্ভর দেশ হওয়ায় এই সংকট কেবল মানবিক নয়, অর্থনৈতিক সংকটও ডেকে আনতে পারে।
সূত্র: এএফপি
বিষয় : থাইল্যান্ড কম্বোডিয়া
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh