যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
হঠাৎ করেই সাংবাদিকদের ফোন করাটা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি অভ্যাসে পরিণত করেছেন। আর তিনি সম্ভবত ক্যামেরার সামনে সাক্ষাৎকারের চেয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে ফোনে কথা বলাটাই বেশি পছন্দ করেন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ছিল আমার পালা। সত্যি বলতে, হোয়াইট হাউস থেকে যখন ফোন এল, তখন আমি ঘুমাচ্ছিলাম।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে গত বছরের ১৩ জুলাই পেনসিলভানিয়ার বাটলার শহরে ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। পাঁচ দিন ধরে বেশির ভাগ সময় আমার মাথায় একটি চিন্তাই ঘুরছিল। তা হলো, ওই ঘটনার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে মার্কিন প্রেসিডেন্টের একটি সাক্ষাৎকার নেওয়ার সুযোগ কি পাব?
বাটলারে ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছিলাম। সেগুলো বিশ্বজুড়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছিল। হয়তো ট্রাম্পেরও নজরে এসেছিল। ভেবেছিলাম, এই সূত্র ধরে তাঁর সাক্ষাৎকার নেওয়া যেতে পারে। গত রোববার রাতে আমাকে বলা হয়েছিল, কিছুক্ষণ পর ট্রাম্প ফোন করবেন। দলবল নিয়ে প্রস্তুতও ছিলাম আমি। তবে সে রাতে প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে ফোন আসেনি।
পুতিনকে বিশ্বাস করেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে দীর্ঘ একটি বিরতি নেন প্রেসিডেন্ট। তারপর বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, আমি প্রায় কাউকে বিশ্বাস করি না।'
সোমবার রাতে আমি সাক্ষাৎকারের আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। কোনো ছুটি ছাড়া কয়েক সপ্তাহ ধরে রাস্তায় রাস্তায় থাকার কারণে ক্লান্তও ছিলাম। তাই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তখনই ফোনটা বেজে উঠল। ঘুম ঘুম চোখে ফোনটা ধরলাম। ওপারে ছিলেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট। তিনি বললেন, ‘এই যে গ্যারি। আমি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রয়েছি। এই নিন, কথা বলুন।’
আমি ছুটে গেলাম বসার ঘরে। আমার ডিজিটাল রেকর্ডারের খোঁজে হাতড়াতে শুরু করলাম। তখন লাইনটা কেটে গেল। মনে হলো, সুযোগটা কি হাতছাড়া হয়ে গেল? তারপরই আবার ফোন এল। প্রায় ২০ মিনিট ধরে ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বললাম। বাটলারের সেই ভয়াবহ ঘটনা, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে নিয়ে ট্রাম্পের হতাশা, ন্যাটো নিয়ে তাঁর নয়া চিন্তাভাবনা—সবকিছু নিয়েই আলাপ হলো।
বাটলারের ঘটনায় অস্বস্তি
বাটলারে হত্যাচেষ্টা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বোঝা গেল, বিষয়টি নিয়ে আলাপ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না ট্রাম্প। জিজ্ঞাসা করলাম, ওই হত্যাচেষ্টা তাঁকে বদলে দিয়েছে কি না? ট্রাম্পের কথা বলার ইঙ্গিতে বোঝা গেল যে ঘটনাটি নিয়ে তিনি বেশ দুর্বল। এটি নিয়ে যতটা সম্ভব কম ভাবতে চান।
একসময় ট্রাম্প বলেছিলেন, ন্যাটো ‘অচল’ হয়ে গেছে। আমি সেদিকে ইঙ্গিত করলাম। জবাবে ট্রাম্প বললেন, এখন তিনি মনে করেন, পশ্চিমা সামরিক জোটটি তাঁর আগের বক্তব্যের ঠিক বিপরীত দিকে যাচ্ছে।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এ নিয়ে বেশি ভাবতে চাই না। কারণ, যদি ভাবি, বুঝতেই পারছেন, সেটা হয়তো জীবন বদলে দেওয়ার মতো কিছু হতে পারে। আর আমি চাই না, এটা তেমন কিছু হোক।’ পুতিনকে বিশ্বাস করেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে দীর্ঘ একটি বিরতি নেন প্রেসিডেন্ট। তারপর বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, আমি প্রায় কাউকে বিশ্বাস করি না। আমি হতাশ। তবে পুতিনের সঙ্গে কাজ এখনো শেষ হয়ে যায়নি।’
কতজন অভিবাসীকে বিতাড়ন করা হবে, সে প্রশ্নের জবাব নেই
পুতিনের বিষয়ে কথা বলতে বলতে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির দিকে দৃষ্টি ফেরালাম আমি। ট্রাম্পের কাছে জানতে চাইলাম, অবৈধ অভিবাসীদের গণহারে বিতাড়িত করতে তাঁর পরিকল্পনা কাজে আসছে কি না? তিনি জোর দিয়েই বললেন, তাঁর দল ‘চমৎকার কাজ’ করছে। এ সময় মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী প্রবেশ ব্যাপক হারে কমার বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।
ট্রাম্পের প্রশাসনের কয়েকজন অবশ্য এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের ভাষ্য, অভিবাসীদের বিতাড়িত করার কাজ খুবই ধীরে হচ্ছে। জিজ্ঞাসা করলাম, নিজের দ্বিতীয় মেয়াদে কতজন অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠাতে পারলে সফলতা পাওয়া গেছে বলে ধরা হবে? এর কোনো জবাব দিলেন না ট্রাম্প।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বললেন, ‘ভালো কথা। আমি কোনো সংখ্যা উল্লেখ করব না, তবে এই সব অপরাধীকে আমি দ্রুত তাড়িয়ে দিতে চাই। আর আমরা যে সেটা করছি, তা আপনি জানেন। আমরা তাদের এল সালভাদরসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছি।’
পুতিনকে নিয়ে আরও হতাশা
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে নিয়ে আবারও হতাশা প্রকাশ করলেন ট্রাম্প। এর আগেই ৫০ দিনের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারলে মস্কোর অর্থনীতির ওপর আঘাত হানার হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। এই যুদ্ধ দ্রুত থামানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছিলেন। পুতিনকে একটি চুক্তিতে রাজি করাতে না পেরে ট্রাম্পকে বিভ্রান্ত মনে হচ্ছিল।
পুতিনের কথা ও কাজের ফারাকের দিকে আবারও ইঙ্গিত করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘চারবার আমার মনে হয়েছিল, আমরা একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পেরেছি। আর তারপর আপনি বাড়ি যাবেন এবং দেখবেন, এইমাত্র একটি নার্সিং হোম বা কিয়েভের কোথাও হামলা চালানো হয়েছে। আমি বলে উঠেছিলাম, এত যে আলোচনা করলাম, তার কী হলো?’
ন্যাটো নিয়ে নতুন সুর
একসময় ট্রাম্প বলেছিলেন, ন্যাটো ‘অচল’ হয়ে গেছে। আমি সেদিকে ইঙ্গিত করলাম। জবাবে ট্রাম্প বললেন, এখন তিনি মনে করেন, পশ্চিমা সামরিক জোটটি তাঁর আগের বক্তব্যের ঠিক বিপরীত দিকে যাচ্ছে।
ট্রাম্প সবেমাত্র ন্যাটোর প্রধান মার্ক রুত্তের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে দুজনের আলাপ বেশ উষ্ণ হয়েছে। ঘোষণা এসেছে যে ন্যাটোর সদস্যদেশগুলোর কাছে অস্ত্র বিক্রি করবে যুক্তরাষ্ট্র। সেসব অস্ত্র পরে কিয়েভে পাঠানো হবে।
আমাদের কথোপকথনের সময় ট্রাম্প এটি বুঝিয়ে দিলেন যে ন্যাটোর অন্যান্য সদস্যদেশের চেয়ে প্রতিরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র বেশি ব্যয় করে, এ নিয়ে ক্ষোভ ছিল তাঁর। তবে সেই ক্ষোভ এখন তিনি ঝেড়ে ফেলেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এটি খুবই অন্যায্য ছিল। কারণ, ন্যাটোর প্রতিরক্ষা খরচের শতভাগই যুক্তরাষ্ট্রকে বহন করতে হতো। তবে এখন অন্য সদস্যদেশগুলো নিজেদের খরচ নিজেরা দিচ্ছে। আমি মনে করি, এটি আগের চেয়ে অনেক ভালো। আমরা ন্যাটোকে বদলে দিয়েছি।’
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
