× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

ইরানে কী কারণে হামলা চালালো ইসরায়েল?

ন্যাশনাল ট্রিবিউন ডেস্ক

১৭ জুন ২০২৫, ২১:৫৭ পিএম । আপডেটঃ ১৮ জুন ২০২৫, ০১:৪০ এএম

ইরানের সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলায় নিহতের সংখ্যা আড়াইশ ছুঁই ছুঁই। পাল্টা হামলায় অবশ্য ইসরায়েলেরও কিছু মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। অনেকেরই ধারণা, খুব সহসাই থামবে না হামলা-পাল্টা হামলা। তাই প্রশ্ন, কী এমন হলো যে ইরানে হামলা চালিয়ে বসলো ইসরায়েল?

বিষয়টি নিয়ে আলজাজিরা ইরানিয়ান অ্যাফেয়ার্সের ওপর গবেষণা করা শিক্ষক ও লেখক অরিল গোল্ডবার্গের একটি বিশ্লেষণধর্মী আর্টিকেল প্রকাশ করেছে।

তার ভাষ্যমতে, ইসরায়েল দাবি করছে, এটি ছিল একটি ‘প্রিভেন্টিভ স্ট্রাইক’। অর্থাৎ ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে—এই আশঙ্কায় আগেভাগে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ। কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি। বরং ধারণা করা হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরেই এই হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল তেলআবিব।

যদি এটি ‘প্রিভেন্টিভ’ হয়, তবে তাৎক্ষণিক কোনো হুমকির অস্তিত্ব থাকা জরুরি। কিন্তু ইরানের এমন কোনো তাৎক্ষণিক হুমকি দেখা যায়নি। ১২ জুন প্রকাশিত আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএ-এর রিপোর্টকেও ইসরায়েল হামলার অজুহাত হিসেবে দেখাতে চাইছে। কিন্তু ওই রিপোর্টে নতুন কিছু ছিল না। বরং পুরনো অভিযোগেরই পুনরাবৃত্তি।

ইসরায়েলের আরেকটি দাবি, তারা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ‘ডিক্যাপিটেট’ করতে চায়, অর্থাৎ নেতৃত্বহীন করে দিতে চায়। কিন্তু এককভাবে ইসরায়েলের পক্ষে তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। বিশ্লেষকদের মতে, এটি বাস্তবে একটি কৌশলগত লক্ষ্য নয় বরং রাজনৈতিক বার্তা।

ইসরায়েল সেনাবাহিনী শুধু পারমাণবিক স্থাপনায় নয়, বরং সামরিক ঘাঁটি, তেল ডিপো, গ্যাস ফিল্ড এবং সরকারি ভবনেও হামলা চালাচ্ছে। একই সঙ্গে একাধিক উচ্চপর্যায়ের ইরানি কর্মকর্তাকে টার্গেট করে হত্যা করছে। সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সর্বোচ্চ নেতার উপদেষ্টা আলি শামখানির হত্যার খবরও শোনা যাচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শামখানির মতো নেতাকে হত্যা করে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় বাধা তৈরি করাই হতে পারে ইসরায়েলের উদ্দেশ্য। এটি ইসরায়েলের পুরনো কৌশল—নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে হত্যা করে গোটা কাঠামো ভেঙে ফেলা।

আরেকটি বিষয় হতে পারে—তেহরানে ‘রেজিম চেঞ্জ’ বা সরকার পরিবর্তনের পরিকল্পনা। এ নিয়ে খোলাখুলি বক্তব্যও দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি ইরানিদের ‘অত্যাচারী সরকারের বিরুদ্ধে’ রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

তবে এমন চিন্তা যে বাস্তবতাবিবর্জিত, তা বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ, বহু ইরানি ইসলামী সরকারের সমালোচক হলেও দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে তারা ঐক্যবদ্ধ। বাইরের শক্তির চাপ ইরানিদের আরও বেশি দেশপ্রেমিক করে তোলে। যেমন, ইসরায়েলেও অনেক নেতানিয়াহুবিরোধী এখন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সরকারকে সমর্থন দিচ্ছেন।

তাহলে কি কেবল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই ইসরায়েল এই হামলা চালিয়েছে?

অনেকের মতে, গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে যখন সমালোচনা বাড়ছে, তখন ইরানে হামলা একটি কৌশল। একদিকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি গাজা থেকে সরানো, অন্যদিকে নিজের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও অন্যান্য মামলার চাপ থেকে বাঁচা।

বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো এখনও ইরানকে হুমকি মনে করে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইসরায়েল আবারও ‘নিরাপত্তা’র অজুহাতে নিজের আগ্রাসন বৈধ করার চেষ্টা করছে।

ইসরায়েলের এই ‘নিরাপত্তা’ আসলে একটি পুরনো ধারণার সম্প্রসারণ—যেখানে ইসরায়েল নিজেকে ‘অজুহাতহীন হত্যার’ অধিকারী ভাবতে চায়। গাজা, ইয়েমেন, লেবানন, সিরিয়া এবং এখন ইরান—সবখানেই সেই একই কৌশল।

নেতানিয়াহু হয়তো আশা করছেন, এই হামলার মাধ্যমে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান মজবুত করবেন এবং আন্তর্জাতিক বিচার এড়িয়ে যাবেন। ইসরায়েলি সমাজের একটি অংশ এখন তার পাশেই আছে। তবে এর দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা সময়ই বলবে।

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.