একদিনে গাজায় নৃশংস হামলায় কমপক্ষে ১৫১ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল। অন্যদিকে প্রায় আড়াই মাস পরে সেখানে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্য প্রবেশের অনুমোদন দিয়েছে তারা। তারা বলেছে, গাজায় অনাহারী মানুষের পরিস্থিতি যাতে আরো বৃদ্ধি না পায় তার জন্য ‘বেসিক অ্যামাউন্ট অফ ফুড’ বা নির্দিষ্ট পরিমাণে খাদ্য প্রবেশের অনুমোদন দিয়েছে। এ খবর দিয়ে অনলাইন বিবিসি বলছে, ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্সেসের (আইডিএফ) সুপারিশ এবং হামাসের বিরুদ্ধে নতুন করে ভয়াবহ সামরিক অভিযানকে সমর্থনের প্রয়োজনে এ অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অফিস এক বিবৃতি দিয়েছে। গাজাজুড়ে আইডিএফ তীব্র স্থল হামলা শুরুর কয়েক ঘন্টা পরে এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গাজার বিরুদ্ধে সব রকম ত্রাণ পৌঁছানো অবরুদ্ধ করে রাখে ইসরাইল। এর ফলে আন্তর্জাতিক তীব্র চাপে পড়ে তারা। এমনকি গাজার মানুষ অনাহারে আছে বলে মন্তব্য করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ত্রাণ বিষয়ক এজেন্সিগুলো সতর্ক করেছে গাজার ২১ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষ অবস্থার মুখোমুখি। ফুটেজ প্রকাশ পায় মানুষ খাদ্যের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে। শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে। বাস্তব পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। সেখানকার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরার জন্য আন্তর্জাতিক কোনো সাংবাদিককে গাজায় প্রবেশ করতে দেয়নি ইসরাইল। ফলে মানুষের দুর্ভোগ পশ্চিমের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া যতটুকু তুলে ধরছে তাতেই এমন অবস্থা।
এ অবস্থায় ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল ব্যারট ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানান গাজায় অবিলম্বে, ব্যাপক পরিমাণে এবং বাধা ছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ পৌঁছার অনুমতি দিতে। কিন্তু নেতানিয়াহুর অফিস থেকে বলা হয়েছে, গাজার মানুষের অনাহারের সংকট যাতে মেটানো যায় তার জন্য ‘বেসিক’ পরিমাণ খাদ্য পৌঁছাতে দেবে তারা। একই সঙ্গে এতে বলা হয়, এই পরিস্থিতি ইসরাইলের নতুন অভিযান ‘অপারেশন গিডিওনস চ্যারিয়ট’ বিঘ্নিত হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, মানবিক সহায়তা বিতরণে হামাসকে নিয়ন্ত্রণ নিতে দেবে না তারা। এর আগে গাজার উত্তরাঞ্চলে একটি হাসপাতাল সহ বিভিন্ন স্থানে তীব্র হামলা চালায় আইডিএফ। ইসরাইল বলেছে, তাদের লক্ষ্য হামাসকে পরাজিত করা এবং গাজায় জিম্মিদের মুক্ত করা। হামলা হয়েছে দক্ষিণের শহর খান ইউনিসে, বেইত লাহিয়া, জাবালিয়া শরণার্থী শিবির সহ গাজার উত্তরের বিভিন্ন শহরে।
খান ইউনিস থেকে একজন নারী বলেছেন, সেখানে পরিস্থিতি ভয়াবহ। তিনি বোমার শব্দে দূরে সরে গেছেন। দেখা দিয়েছে আটা, গ্যাস ও খাদ্যের মারাত্মক সংকট। গাজার প্রধান ইমার্জেন্সি সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স বলেছে, দক্ষিণে আল মাওয়াসি ক্যাম্পে রোববার দিবাগত রাতভর হামলা হয়েছে। এতে কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন একশ মানুষ। এর আগে এই ক্যাম্পকে নিরাপদ জোন ঘোষণা করা হয়েছিল। রোববার লোকজনকে সরে যেতে চূড়ান্ত নির্দেশ দেয় ইসরাইলি সেনারা। তারা জানায়, যেখান থেকে রকেট হামলা হয়েছে সেসব স্থানে তারা শক্তিশালী হামলা চালাবে। লোকজনকে অবিলম্বে আল মাওয়াসি ক্যাম্পে সরে যেতে বলা হয়।
গাজার উত্তরাঞ্চলে তিনটি হাসপাতাল এখন বিকল হয়ে গেছে। তারপরও হামলা অব্যাহত আছে। এর মধ্যে বেইত লাহিয়ায় ইন্দোনেশিয়া হাসপাতালের মেডিকেল স্টাফরা বলেছেন, হাসপাতালের বাইরে অবস্থান নিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। তারা হাসপাতালে গুলি ছুড়ছে। তারা বলেছেন, চারজন ডাক্তার, আটজন নার্সসহ এ সময় হাসপাতালের ভিতরে অবস্থান করছিলেন ৫৫ জন। বাকিরা সব চলাচলে অক্ষম রোগী। সকালে হামলার পর হাসপাতাল ছাড়ার সক্ষমতা নেই তাদের। প্রায় ৫০ মিনিট পর হাসপাতাল এলাকা ছেড়ে যায় সেনারা।
অন্যদিকে আইডিএফ বলেছে, ইন্দোনেশিয়া হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় গাজার উত্তরাঞ্চলে ‘সন্ত্রাসীদের অবকাঠামোতে’ লড়াই করছে তাদের সেনারা।
বিষয় : ফিলিস্তিনি হত্যা ইসরাইল গাজা
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh