যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
ভেনেজুয়েলার নাগরিক জসনেক্সি মার্তিনেজ। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের সীমান্তবর্তী শহর এল পাসোর একটি অভিবাসী আশ্রয়কেন্দ্রে থাকেন তিনি। বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই তিনি যুক্তরাষ্ট্র ঢুকেছেন। তবে এরপরও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী আদেশকে কেন্দ্র করে আতঙ্কের মধ্যে আছেন মার্তিনেজ।
গত সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনব্যবস্থায় সংস্কার আনতে বেশ কিছু নির্বাহী পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তে ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করে একটি আদেশে স্বাক্ষর করেছেন এবং ওই এলাকায় আরও সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি বিদেশি অপরাধীদের বিতাড়িত করার অঙ্গীকার করেছেন, যা অনেকের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
সিবিপি ওয়ান অ্যাপ ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছিলেন ২৮ বছর বয়সী নারী মার্তিনেজ। তিনি তাঁর পাঁচ বছর বয়সী সন্তানকে নিয়ে এল পাসো শহরের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে থাকেন।
সিবিপি ওয়ান অ্যাপের আওতায় মেক্সিকোর অভিবাসনপ্রত্যাশীরা সংশ্লিষ্ট সীমান্তে নিযুক্ত মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য সময় নির্ধারণ করতে পারেন। তাঁরা সেখানে অস্থায়ীভাবে অভিবাসনের জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে ট্রাম্প নতুন মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর এই সেবাটি বন্ধ করে দিয়েছেন।
একজন বিচারকের অধীনে অভিবাসনসংক্রান্ত মামলার শুনানি না হওয়া পর্যন্ত মার্তিনেজের যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অধিকার আছে। তবে ট্রাম্পের পদক্ষেপের কারণে তিনিও এখন আতঙ্কে আছেন।
মার্তিনেজ বলেছেন, পুলিশ কর্মকর্তা বা অভিবাসন কর্মকর্তারা অভিযান চালানোর সময় তাঁর কাছে কাগজপত্র চাইতে পারেন। আর কাগজপত্র না দেখাতে পারলে গ্রেপ্তার হওয়ার ভয় পাচ্ছেন তিনি।
মার্তিনেজ যে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকেন, সেটি পরিচালনা করেন কারিনা ব্রেসেডা। ট্রাম্পের নীতিমালাগুলো নিয়ে তিনিও উদ্বেগ জানিয়েছেন। কারিনার আশঙ্কা, অনিবন্ধিত লোকেরা দেখতে কেমন, তাঁদের গায়ের রং কেমন, তাঁরা কেমন পোশাক পরেন, এগুলো নিয়ে যে বদ্ধমূল ধারণা আছে, তার ভিত্তিতে লোকজনকে নিশানা করা হতে পারে।
এল পাসো শহরটিতে ৬ লাখ ৭৮ হাজার মানুষের বসবাস। এর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই লাতিন আমেরিকান বংশোদ্ভূত। ট্রাম্পের পদক্ষেপের কারণে শহরটির বাসিন্দাদের কারও কারও মনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
৩৭ বছর বয়সী মিরনা সেব্রাল ডিএসিএ কর্মসূচির একজন সুবিধাভোগী। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শাসনামলে এই কর্মসূচিটি চালু হয়েছিল। এর আওতায় অনিবন্ধিত অভিবাসনপ্রত্যাশী হিসেবে শিশু বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে আসা কিছু মানুষকে সাময়িকভাবে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়। এই অনুমতি অবশ্যই নবায়ন করে নিতে হয়। তিনি ছোটবেলায় যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে ঢোকেন এবং টেক্সাসে বেড়ে ওঠেন। পরে এক মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁদের দুটি সন্তান আছে। সেব্রালের স্বামী মারা গেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের লক্ষ্যে ট্রাম্প যে নির্বাহী আদেশ দিয়েছেন, তা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন সেব্রাল। যদিও ইতিমধ্যে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ আইনি চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছেন। বলা হচ্ছে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ সাংবিধানিক বিধির লঙ্ঘন।
ট্রাম্পের আদেশের বিষয়ে সেব্রাল বলেন, ‘এটা একেবারেই পাগলামো। এটা আমাদের সংবিধানবিরোধী। কারণ, আপনার বৈধ মর্যাদা আছে কি নেই, সেটা এখানে বিষয় নয়।’
সেব্রালের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী প্রত্যেক মানুষেরই সম–অধিকার আছে।
৬৫ বছর বয়সী জুলিয়েটা টরেসের জন্ম মেক্সিকোতে। তবে কয়েক দশক ধরে তিনি এল পাসোতে বসবাস করছেন।
তাঁর মতে, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব প্রদানের আইন বাতিল করাটা শিশুদের প্রতি অন্যায্য আচরণ।
টরেস বলেন, ‘তারা যদি এখানে জন্ম নিয়ে থাকে তবে তারা এই দেশেরই নাগরিক, এমনকি তারা যদি অনিবন্ধিত অভিবাসী পিতামাতার সন্তানও হয়।’
এল পাসোতে কর্মরত হেক্টর শ্যাভেজ বলেন, উন্নত জীবনের সন্ধানে মার্কিন নাগরিক হতে আগ্রহী অভিবাসীদের এখন তাদের পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
৬১ বছর বয়সী হেক্টর শ্যাভেজ মেক্সিকোর নাগরিক। যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার জন্য তিনি বৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করেছিলেন। তবে সীমান্তের মেক্সিকো অংশে সিউদাদ জুয়ারেজ এলাকায় থাকতে পছন্দ করেন তিনি। কারণ, সেখানকার জীবনযাপনব্যবস্থা অপেক্ষাকৃত সাশ্রয়ী।
শ্যাভেজ মনে করেন, অভিবাসীদের সীমান্তের অপর পাশে থাকা উচিত। তাদের ‘আমেরিকান স্বপ্ন শেষ’।
বিষয় : যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসন ডোনাল্ড ট্রাম্প
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh