আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি। ছবি: সিএনএন
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের দীর্ঘ ১৩ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে এক নাটকীয় অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছেন আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের এই মোড় ঘোরানো ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলের নজর পড়েছে আল-জোলানির ওপর। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে তার জীবনের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।
৪২ বছর বয়সী আল-জোলানি হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতা। এই ইসলামপন্থি গোষ্ঠীটি একসময় আল-কায়েদার সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ইদলিব প্রদেশে বছরের পর বছর প্রভাব ধরে রেখেছিল। সিরিয়ার সংকটে দীর্ঘ অচলাবস্থা ভাঙার ক্ষেত্রে তার সাম্প্রতিক ভূমিকা নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
নভেম্বরের শেষ দিকে হায়াত তাহরির আল-শাম সিরিয়ার সবচেয়ে বড় বিদ্রোহী অভিযান শুরু করে। তারা আলেপ্পো, সিরিয়ার বৃহত্তম শহর দখল করার পর দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয়। এই অভিযানে প্রায় কোনও প্রতিরোধের মুখোমুখি না হয়েই তারা একাধিক প্রদেশ দখল করে।
রবিবার বিদ্রোহীরা রাজধানী দামেস্কে ঘোষণা করে, তারা প্রেসিডেন্ট আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আসাদ সশস্ত্র সংঘর্ষের একাধিক পক্ষের সাথে আলোচনা শেষে দেশ ছেড়েছেন। তবে তার অবস্থান সম্পর্কে কোনও তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
আল-জোলানির প্রকৃত নাম আহমেদ হুসেইন আল-শারা। সৌদি আরবে সিরিয়ান নির্বাসিত পরিবারের সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে তার পরিবার সিরিয়ায় ফিরে আসে। ২০০৩ সালে তিনি ইরাকে গিয়ে আল-কায়েদায় যোগ দেন এবং মার্কিন দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেন।
আরব গণমাধ্যম ও মার্কিন কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, ইরাকে কয়েক বছর মার্কিন কারাগারে বন্দি ছিলেন তিনি। পরে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরুর সময় তিনি আল-কায়েদার সহযোগী নুসরা ফ্রন্ট গঠন করেন। এটি পরবর্তীতে হায়াত তাহরির আল-শামে রূপ নেয়। এ সময় তিনি আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি নামে পরিচিতি লাভ করেন।
আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর আল-জোলানি সিরিয়ায় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দিকে মনোযোগ দেন। তার গোষ্ঠী শাসিত এলাকায় কর আদায়, সীমিত জনসেবা প্রদান এবং অধিবাসীদের জন্য পরিচয়পত্র জারি করেছে বলে একটি জাতিসংঘ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মহল থেকে তারা কর্তৃত্ববাদী শাসন এবং ভিন্নমত দমনের জন্য সমালোচিত হয়েছে।
ইদলিবে আল-জোলানির গোষ্ঠী একটি রক্ষণশীল সুন্নি ইসলামপন্থি মতাদর্শে পরিচালিত সরকার চালানোর কথা বলেছে। তবে সাম্প্রতিক বিদ্রোহী অভিযানের পর তিনি অন্যান্য ধর্ম ও সম্প্রদায়ের সংখ্যালঘুদের প্রতি আশ্বাস দিতে শুরু করেছেন।
আল-জোলানির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সিরিয়ানদের ঐক্যবদ্ধ করা এবং একটি গ্রহণযোগ্য শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা। তার ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব কেমন হবে এবং সিরিয়ার জনগণ তা গ্রহণ করবে কিনা, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক জেরোম ড্রেভন বলেন, এই মুহূর্তটি জেলেনস্কির যুদ্ধকালীন নেতৃত্বের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। যুদ্ধ শুরুর আগে জেলেনস্কির সমালোচনা হয়েছিল। পরে তিনি রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হন। এখন প্রশ্ন হলো, জোলানি কি একই রূপান্তর ঘটাতে পারবেন?
বিষয় : মধ্যপ্রাচ্য বিশ্ব সংবাদ বাশার আল-আসাদ সিরিয়া তুরস্ক
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh