দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারির পর দেশটির পার্লামেন্টে প্রবেশের চেষ্টা করেন সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারির পর দেশটির পার্লামেন্ট ঘিরে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সামরিক আইন জারি করে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলের ঘোষণার পর এই আইন বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল পার্ক আন-সু। দেশটিতে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘উদারপন্থী দক্ষিণ কোরিয়াকে উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট বাহিনীর হুমকি থেকে সুরক্ষা দিতে এবং রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন শক্তি নির্মূল করতে আমি জরুরি ভিত্তিতে সামরিক আইন জারি করছি।’ তবে শত্রুদেশ উত্তর কোরিয়া থেকে কী ধরনের হুমকি রয়েছে, তা উল্লেখ করেননি তিনি।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট এমন সময় সামরিক আইন জারির ঘোষণা দিলেন, যখন আগামী বছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে তাঁর দল পিপল পাওয়ার পার্টি এবং বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে তুমুল দ্বন্দ্ব চলছে। গত সপ্তাহে পার্লামেন্টারি কমিটির মাধ্যমে বেশ ছোট আকারের বাজেট পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছেন বিরোধী আইনপ্রণেতারা।
বিরোধীরা দেশের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সব বাজেটে কাটছাঁট করেছেন বলে অভিযোগ এনে ইউন সুক-ইওল বলেন, এই গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই ও জননিরাপত্তার মতো বিষয়গুলো। বাজেটে কাটছাঁটের ফলে দেশ মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হতে যাচ্ছে এবং বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে যাচ্ছে।
এদিকে আজ সামরিক আইন জারির পর সিউলে পার্লামেন্টের জাতীয় পরিষদ ঘিরে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পার্লামেন্টের বাইরে অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা। প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তারের দাবিতে তাঁদের স্লোগান দিতে শোনা যায়। একপর্যায়ে কিছু সময়ের জন্য পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ করেন সেনাসদস্যরা। ভবনের ওপরে হেলিকপ্টার নামতেও দেখা যায়।
এই পরিস্থিতির মধ্যেও আজ রাতে নিরাপত্তা বাহিনীকে এড়িয়ে পার্লামেন্টে প্রবেশ করতে সক্ষম হন ১৯০ জন আইনপ্রণেতা। তাঁরা সামরিক আইনের বিরুদ্ধে ভোট দেন। দক্ষিণ কোরিয়ার সংবিধান অনুযায়ী, পার্লামেন্টের ৩০০ সদস্যের মধ্যে বেশির ভাগ চাইলে সামরিক আইন তুলে নেওয়া যাবে। তবে বর্তমান ঘোলাটে পরিস্থিতির মধ্যে এই ভোট কতটা কাজে আসবে, তা বোঝা যাচ্ছে না।
ইউন সুক-ইওল দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট হলেও পার্লামেন্টে বিরোধীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক সংকট এবং স্ত্রী কিম কেওন হিকে জড়িয়ে বিতর্কের জেরে তাঁর জনসমর্থন এখন তলানিতে। গত সপ্তাহে জরিপকারী প্রতিষ্ঠান গ্যালাপের তথ্য অনুযায়ী, ইউন সুক-ইওলের জনসমর্থন এখন মাত্র ১৯ শতাংশ।
বিষয় : এশিয়া দক্ষিণ কোরিয়া রাজনীতি
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh