হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এর নেতৃত্বে সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো আলেপ্পো দখল নেয়। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ নগরী আলেপ্পোতে আবার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সিরিয়ার সেনাবাহিনী বলছে, হায়াত তাহরির আল-শাম বিদ্রোহীদের হামলায় গতকাল শনিবার বেশ কয়েকজন সেনা নিহত হয়েছেন। তাই বাধ্য হয়ে সেখানে তাঁরা নতুন সেনা মোতায়েন করেছেন।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে গতকাল শনিবার এ তথ্য জানানো হয়। তবে সিরিয়ার একটি সেনা সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলো সেনা প্রত্যাহারের খবর অস্বীকার করেছে। বলেছে, সিরিয়ার সেনারা এখনো তাদের অবস্থানে লড়াই করে যাচ্ছে।
এদিকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সংকট সমাধানে সিরিয়া সরকারের অনীহা, রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতার ফলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলেছেন হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের (এনএসসি) মুখপাত্র শন সাভে। উত্তর পশ্চিম সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতনও এর অন্তর্ভুক্ত বলেন তিনি।
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস এর বরাত দিয়ে এএফপির খবরে বলা হয়েছে, সর্বশেষ এই লড়াইয়ে অন্তত ৩২৭ জন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই যোদ্ধা। তবে ৪৪ জন বেসামরিক নাগরিকও রয়েছেন।
আলেপ্পোর ঐতিহাসিক একটি দুর্গের কাছে দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তি সিরিয়ার বিরোধী দলের পতাকা ওড়াচ্ছেন। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
গত বুধবার থেকে হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতৃত্বে সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো আকস্মিক হামলা শুরু করে। প্রায় এক দশক পর তারা সরকার নিয়ন্ত্রিত ছোট শহরগুলোর দখল নিতে থাকে এবং আলেপ্পোয় পৌঁছে যায়। আলেপ্পোর বেশির ভাগ বিদ্রোহীদের দখলে চলে গেছে।
২০১৬ সালে বিদ্রোহীদের কাছ থেকে উত্তরাঞ্চলীয় এই নগরের পুনর্দখল নিয়েছিল প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বাহিনী এবং তাঁর মিত্র রাশিয়া, ইরান ও আঞ্চলিক শিয়া বিদ্রোহীরা।
গত কয়েক বছরের মধ্যে প্রেসিডেন্ট আসাদকে এত বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়নি। আসাদের পক্ষে তাঁর মিত্র রাশিয়া বিদ্রোহীদের ওপর বিমান হামলা চালিয়েছে।
এইচটিএস একসময় নুসরা ফ্রন্ট নামে পরিচিত ছিল। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, তুরস্ক এবং আরও কয়েকটি দেশ নুসরা ফ্রন্টকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। গত ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র আলেপ্পোর পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল (এনএসসি)।
‘আমি আলেপ্পোর সন্তান, আট বছর আগে ২০১৬ সালে বাস্তুচ্যুত হয়েছিলাম। আমরা মাত্রই ফিরে এসেছি, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। এটা অসাধারণ এক অনুভূতি।’
আলী জুমা, বিদ্রোহী যোদ্ধা
একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া (সংকটের সমাধানে) সিরিয়া সরকারের অনীহা এবং রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতার ফলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলেছেন এনএসসির মুখপাত্র শন সাভেট। তিনি বলেন, সেটাই এখন প্রকাশ্যে আসছে, উত্তর পশ্চিম সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতনও এর অন্তর্ভুক্ত। এখন ‘নিষিদ্ধ ঘোষিত একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের’ নেতৃত্বে যে হামলা হচ্ছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু করার নেই বলেও বলেছেন সাভেট। তিনি ‘উত্তেজনা প্রশমন... এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রস্তাব ২২৫৪–এর অধীন গুরুত্বের সঙ্গে বিশ্বাসযোগ্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সংকট সমাধানের তাগাদাও’ দিয়েছেন। ওই প্রস্তাবে একটি যুদ্ধবিরতি এবং রাজনৈতিক উত্তরণের কথা বলা আছে।
সিরিয়ায় ২০১১ সাল থেকে গৃহযুদ্ধ চলছে। আনুষ্ঠানিকভাবে সেই গৃহযুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। তবে কয়েক বছর আগেই দেশটির বেশির ভাগ অংশে সংঘর্ষ থেমে গিয়েছিল। মিত্র ইরান ও রাশিয়ায় সহায়তায় আসাদ বাহিনী সিরিয়ার বেশির ভাগ অংশ এবং সব বড় বড় নগরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল।
২০১৬ সাল থেকে আলেপ্পো সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর দখলে। বিদ্রোহীরা পুনরায় আলেপ্পোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সেখান থেকে আলী জুমা নামে একজন বিদ্রোহী বলেন, ‘আমি আলেপ্পোর সন্তান, আট বছর আগে ২০১৬ সালে বাস্তুচ্যুত হয়েছিলাম। আমরা মাত্রই ফিরে এসেছি। এটা অসাধারণ এক অনুভূতি।’ আলী জুমার এই বক্তব্য টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়েছে।
সিরিয়ার সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও আলেপ্পোর বেশির ভাগ অংশে বিদ্রোহীদের প্রবেশের কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পাল্টা হামলা চালানোর কথাও বলা হয়েছে।
শনিবার আলেপ্পোতে তোলা কয়েকটি ছবি প্রকাশ পেয়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, লোকজন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের প্রয়াত ভাই বাসিল আল-আসাদের উল্টে ফেলা মূর্তির সামনে ছবি তোলার জন্য পোজ দিচ্ছে। বিদ্রোহীদের ট্রাকে করে শহরময় ঘুরে বেড়ানোর ছবিও প্রকাশ পেয়েছে। আলেপ্পোর ঐতিহাসিক একটি দুর্গের সামনে দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তিকে সিরিয়ার বিরোধী দলের পতাকা ওড়াতে দেখা গেছে।
সিরিয়ার সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিদ্রোহীরা বিভিন্ন দিক থেকে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। হামলা প্রতিহত করতে নতুন সেনা মোতায়েন করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে তারা। বিদ্রোহীরা আলেপ্পো বিমানবন্দরের দখল নেওয়ার দাবি করেছে।
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস এর বরাত দিয়ে এএফপির খবরে বলা হয়েছে, সর্বশেষ এই লড়াইয়ে অন্তত ৩২৭ জন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বিদ্রোহী। তবে ৪৪ জন বেসামরিক নাগরিকও রয়েছেন।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থাটি আরও বলেছে, ‘হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এবং মিত্ররা (আলেপ্পো) নগরের বেশির ভাগ অংশ, সরকারি কেন্দ্র এবং কারাগারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। তাদের খুব বেশি প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়নি।’
বিদ্রোহীদের হামলার মুখে সরকারি বাহিনী আলেপ্পো বিমানবন্দর থেকে সরে গেছে বলেও জানিয়েছে সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস। সংস্থাটি থেকে বলা হয়েছে, ‘আলেপ্পো বিমানবন্দরের দখল নেওয়ার পাশাপাশি বিদ্রোহী বাহিনী বিনা বাধায় কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি শহরের দখল নিয়েছে। বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে সিরিয়ার সেনাবাহিনী দেশটির চতুর্থ বৃহৎ নগর হামা থেকে সরে গেছে।’
বিষয় : সিরিয়া বাশার আল-আসাদ গৃহযুদ্ধ
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh