একদিনের ব্যবধানে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখওয়া প্রদেশে আবারও বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবারের সবশেষ হামলায় প্রদেশের লোয়ার কুররাম অঞ্চলের ওচাট এলাকায় বেসামরিক শিয়াদের দুটি গাড়ি বহরে হামলায় অন্তত ৩৮ জন নিহত হয়েছেন বলে পুলিশের বরাত দিয়ে জানিয়েছে দ্য ডন।
আহমাদি শাহ পুলিশ স্টেশনের কর্মকর্তা কলিম শাহ ডন ডটকমকে জানিয়েছেন, হামলায় তিন নারীসহ ৩৮ জন নিহত ও ১১ জন আহত হয়েছেন।
প্রদেশের মুখ্য সচিব নাদিম আসলাম চৌধুরী রয়টার্সকে বলেছেন, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
হতাহতের একই সংখ্যা জানিয়েছেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি।
ইসলামাবাদ হাই কোর্টের বাইরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “গত সপ্তাহটি কঠিন এবং মন খারাপ করার মত ছিল, এখন আবার কুররামে ৩৮ জন নিহত হলো। ইদানিং প্রতিদিনই আমরা নতুন নতুন ঘটনা দেখতে পাচ্ছি।
কুররামের হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা কেপি (খাইবার পাখতুনখওয়া) কর্তৃপক্ষ, সেখানকার আইজিপি এবং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগযোগ রক্ষা করে চলেছি। তাদের সহায়তা দরকার।
“এটি (কেপি) আমাদের একটি প্রদেশ, আমাদের দেশের অংশ। আমরা একে ছেড়ে যাব না। আমরা যতটুকু পারি তাদেরকে সহায়তা দেব।”
গেল সপ্তাহে খাইবার পাখতুনখওয়া প্রদেশে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দু’টি পৃথক হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর এক ডজনেরও বেশি সদস্য নিহত হন।
এর মধ্যে তিরা উপত্যকার বাগ-মায়দান মারকাজের কাছে একটি সামরিক ক্যাম্পে গত রোববার রাতে বন্দুকধারীরা হামলা চালানোর পর দুই পক্ষের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়, যা দুই দিন ধরে চলে।
দুই দিনের বন্দুকযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর মঙ্গলবার থমথমে পরিস্থিতির মধ্যে তিরার দোকানপাটগুলো খুলে। ওইদিনই প্রদেশটির বান্নু জেলার জানিখেল এলাকার মালি খেল চেকপয়েন্টের কাছে এক আত্মঘাতী হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য নিহত হন।
বৃহস্পতিবারের সবশেষ ঘটনাটির বর্ণনায় প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র ব্যারিস্টার সাইফ বলেছেন, হামলার শিকার বহরে সবমিলিয়ে প্রায় ২০০টির মতো গাড়ি ছিল।
“সন্ত্রাসীরা প্রথমে বহরের নিরাপত্তা থাকায় পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে, পরে বহরের দুই পাশ থেকে গুলি চালানো হয়।”
খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা।
হামলার ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যারিস্টার সাইফ।
কুররামের ডিসি জাভেউল্লাহ মেহসুদ বলেছেন, কুররামে সন্ত্রাসীরা মূলত শিয়া গোষ্ঠীদের দুটি আলাদা বহরকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল।
“দুটি বহরে অন্তত ৪০টি করে পুলিশের নিরাপত্তায় ছিল।”
ডিসি মেহসুদ আরও বলেন, “হামলার সময় প্রাণ বাঁচাতে স্থানীয় বাড়িঘরে আশ্রয় নয় বহরের লোকজন। হামলাকারীদের ধরতে ওই এলাকায় আমাদের অভিযান চলছে।”
তিনি ডনকে বলেছেন, অতীতের হামলাগুলো সাম্প্রদায়িক হলেও এখন বেসামরিকদেরও লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। তাই সন্ত্রাসবাদকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কুররামে স্থানীয় জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ভূমি নিয়েও বিরোধ রয়েছে।
কুররামে হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি। একই সঙ্গে তিনি নিহতদের জন্য শোক প্রকাশ করেছেন।
পাকিস্তান পিপলস পার্টির মিডিয়া সেলের এক্স অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে তিনি বলেছেন, “নিরীহ নাগরিকদের ওপর এই কাপুরুষোচিত এবং আমানবিক।”
ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলে তিনি জানান। আহতদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিতেরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফও ঘটনার নিন্দা জানিয়ে আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছেন।
একই সঙ্গে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
খাইবার পাখতুনখওয়া প্রদেশের মুখমন্ত্রী আলী আমিন গান্দারপুরও ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
ঘটনার পর তিনি মুখ্য সচিব, প্রদেশের আইনমন্ত্রী এবং স্থানীয় পার্লামেন্টের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধি দলকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছেন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে।
মুখ্যমন্ত্রী প্রদেশের সব মহাসড়কের নিরাপত্তা জোরদারে হাইওয়ে পুলিশকেও নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি হামলায় নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন।
বিষয় : পাকিস্তান খাইবার পাখতুনখওয়া হামলা
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh