ঝাড়খণ্ডে এক নির্বাচনী জনসভায় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন আগামী বুধবার। ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ’ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক এবারের নির্বাচনের বিশেষ দিক। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা কয়েক মাস ধরে দাবি করে আসছেন, এখানে বাংলাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যদিকে রাজ্যের শাসক দল ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চার (জেএমএম) নেতৃত্বাধীন হেমন্ত সরেনের সরকারের পাল্টা দাবি, বিজেপির এ দাবি ভিত্তিহীন।
গত কয়েক মাসে ঝাড়খণ্ডে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী নিয়ে যাঁরা প্রচারণা চালিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা এবং বিজেপি সরকারের একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তাঁরা ধারাবাহিকভাবে জনসভায় দাবি করেছেন, বাংলাদেশ থেকে মানুষ বেআইনিভাবে ঝাড়খন্ডে প্রবেশ করছে। এর ফলে রাজ্যের আদিবাসী জনসংখ্যা কমছে। রাজ্যে আদিবাসী জনসংখ্যা কমার প্রধান কারণ হিসেবে এই অনুপ্রবেশকে চিহ্নিত করে সেটাকেই নির্বাচনে প্রধান বিষয় হিসেবে সামনে এনেছে বিজেপি।
বিজেপির টানা অভিযোগের একপর্যায়ে রাজ্যের হাইকোর্ট ঝাড়খন্ড সরকারকে একটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন তথ্যানুসন্ধান (ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং) কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। রাজ্যে বসবাসকারী বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করাই এই কমিটির প্রধান কাজ।
কিন্তু গত ২০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের দেওয়া সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেনের নেতৃত্বাধীন জেএমএম সরকার।
এ অবস্থায় নির্বাচনের চার দিন আগে গত শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট আগামী ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন স্থগিত করেন। ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্য সরকারের বক্তব্য নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অভিমতও জানতে চেয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের এ নির্দেশের কারণে হেমন্ত সরেন সরকারকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই কমিটি গঠন করতে হবে না।
এদিকে রাজ্য সরকার নিজেদের আবেদনে রাজ্যের ছয়টি জেলার ডেপুটি কমিশনারদের প্রতিবেদন যুক্ত করেছে। এতে বলা হয়েছে, একমাত্র পূর্ব ঝাড়খন্ডের সাহিবগঞ্জ জেলায় দুটি বেআইনি অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে। জেলার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা এর বাইরে আর কোনো বেআইনি অনুপ্রবেশের ঘটনা পাননি। এ দুটি ঘটনার ক্ষেত্রেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকারের এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য জানতে চেয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া ও আহসানউদ্দিন আমানুল্লার বেঞ্চ।
তবে আইন যে পথেই যাক না কেন, বুধবারের নির্বাচনের আগে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের কারণে আদিবাসী জমি দখল হয়ে যাওয়ার বয়ানের ভিত্তিতেই পুরোপুরি প্রচারণা চালিয়েছে বিজেপি। এমনকি সামাজিক মাধ্যমে তাদের একটি প্রচারণামূলক ভিডিও চিত্রে দেখা যাচ্ছে, হেমন্ত সরেন, কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী এবং বিহারের রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা তেজস্বী যাদব একসঙ্গে বসে মুসলমান তোষণের পরিকল্পনা করছেন।
ভারতের আদিবাসী কমিশনেরও একই বক্তব্য
অনুপ্রবেশের কারণে আদিবাসীদের জমি দখল হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ভারতের আদিবাসী কমিশন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের কারণে ঝাড়খণ্ডের সাঁওতাল পরগনার’ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জনবিন্যাস পাল্টে যাচ্ছে।
আদিবাসী কমিশনের এক সদস্য আশা লাকরা ভারতের একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই অনুপ্রবেশকারীরা ঠিক কখন এসেছে, তা আমরা বলতে পারি না। তবে আপনি যদি বারহাইত সাঁওতালি উত্তর ও দক্ষিণের মতো অঞ্চলগুলো দেখেন, তাহলে বিষয়টি বুঝতে পারবেন। সবই আদিবাসী গ্রাম। আজ সেখানে আদিবাসীদের সংখ্যা কমে গেছে। এটি প্রমাণ করে যে অনুপ্রবেশ ঘটেছে এবং এটি গত দুই দশক বা এর বেশি সময়ে ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আমাদের প্রতিবেদনে এটি বলেছি।’
প্রসঙ্গত, বারহাইত ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপিবিরোধী জোট জেএমএমের অন্যতম নেতা হেমন্ত সরেনের নির্বাচনী কেন্দ্র। আশা লাকরা পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির যুগ্ম কার্যনির্বাহী পরিচালক।
গত সেপ্টেম্বরেই ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ঝাড়খণ্ডের হাইকোর্টের কাছে একটি প্রতিবেদন দিয়েছিল। অনুপ্রবেশবিষয়ক সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, রাজ্যে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে। ১৯৫১ সালের পরে ব্যাপক হারে আদিবাসী জনসংখ্যা কমেছে। কিন্তু অনুপ্রবেশের কারণেই যে আদিবাসী জনসংখ্যা কমেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে খুব নির্দিষ্টভাবে কিছু জানায়নি।
রাজ্যটিতে এরই মধ্যে ‘ঝাড়খন্ড জানাধিকার মহাসভা’ নামের একটি আদিবাসী অধিকার মঞ্চ তৈরি হয়েছে। তারা রাজ্যের মুখ্য সচিব ও পুলিশের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং অন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন। তাঁদের দাবি, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব রাজ্যে ঘৃণার বাতাবরণ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন।
এমন এক পরিস্থিতিতে বুধবার ঝাড়খণ্ডে বিধানসভা নির্বাচন শুরু হতে চলেছে। দুই দফায় ভোট গ্রহণের পরে ২৩ নভেম্বর ফল ঘোষণার কথা রয়েছে। আগামী বুধবার পশ্চিমবঙ্গ, আসামসহ ভারতের আরও দু-একটি জায়গায় কয়েকটি আসনে বিধানসভার উপনির্বাচন হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh