লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ারে ২০১৭ সালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭২ জন নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে করা সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনে এই বিপর্যয়ের জন্য সরকার ও ভবন নির্মাণে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অবহেলাকে দায়ী করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার সাত বছর পর বুধবার তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এই প্রতিবেদনে ভবনের বাইরের অংশে দাহ্য ক্ল্যাডিং স্থাপনের সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলিকেও দায়ী করে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে।
২০১৭ সালের ১৪ জুন স্থানীয় সময় ভোররাতে লন্ডনের অন্যতম এক অভিজাত এলাকার ২৩ তলা একটি আবাসিক ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে লণ্ডনের একটি আবাসিক ভবনে হওয়া সবচেয়ে প্রাণঘাতী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এটি।
রয়টার্স জানায়, ভবনের রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ও দাহ্য উপাদানযুক্ত পদার্থ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে এই অগ্নিকাণ্ডের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। যেসব কোম্পানি ভবনের আবরণের জন্য ব্যবহার করা তাদের দাহ্য পণ্যগুলোকে অসৎভাবে ‘নিরাপদ’ দাবি করে সেগুলো বাজারজাত করেছে তাদেরও দায়ী করা হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় ও জাতীয় কর্তৃপক্ষকে তাদের ব্যর্থতার জন্য দায়ী করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান মার্টিন মুর-বিক বলেন, 'সহজ সত্য হলো, প্রতিটি মৃত্যুই এড়ানো যেত।’
তিনি তৎকালীন সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার সমালোচনা করেন। বহুতল ব্লকগুলোতে অগ্নি নিরাপত্তা নিয়ে বছরের পর বছর নিষ্ক্রিয়তার জন্য অপ্রস্তুত দমকল বাহিনীর সমালোচনাও করেন।
মুর-বিক বলেন, "এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাই একই দায়বদ্ধতা বহন করে না, তবে আমাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সকলেই কোনও না কোনওভাবে এই অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ী। বিশেষ করে, অদক্ষতা, অসততা এবং লোভ এর জন্য দায়ী।”
প্রায় ১,৭০০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অগ্নিকাণ্ড 'কয়েক দশকের ব্যর্থতার' চূড়ান্ত পরিণতি।
বেঁচে যাওয়া ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন গ্রেনফেল ইউনাইটেড বলেছে, “কর্পোরেট লোভ থেকে আমাদের রক্ষা করার পাশাপাশি জীবন রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব হওয়া উচিত।
"কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে, তারা কর্পোরেশনগুলিকে সহায়তা করেছে, তাদের মুনাফা অর্জনে সহায়তা করেছে।”
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ভুক্তভোগী ও বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
তিনি বলেন, দেশ তার নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আজ সত্য প্রকাশের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত একটি দিন, তবে এই দিনকে অবশ্যই ন্যায়বিচারের দিনের দিকে নিয়ে যেতে হবে।
যুক্তরাজ্যের পুলিশ জানিয়েছে, ৫৮ জন ব্যক্তি এবং ১৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
অগ্নিকাণ্ডে মা, বোন, ভগ্নিপতি ও তিন ভাতিজিকে হারানো ৪৬ বছর বয়সী হিসাম চৌকাইর বলেন, “এই তদন্ত আমার পরিবারের প্রাপ্য ন্যায়বিচারকে বিলম্বিত করেছে।”
এর আগে, ২০১৯ সালে তদন্তের প্রথম প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভবনের ৫ম তলায় একটি রেফ্রিজারেটরে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত। পরে তা অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। মূলত ২০১৬ সালে ভবনটিতে সৌন্দর্যবর্ধন ও বৃষ্টিপ্রতিরোধক হিসেবে একধরণের আবরণ ব্যবহার করা হয়েছিল, তাতে দাহ্য অ্যালুমিনিয়াম উপাদান ছিল।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh