পোলিও টিকা খাওয়ানো হচ্ছে এক শিশুকে। ফাইল ছবি
গাজার ৯০ শতাংশ এলাকা টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনতে চায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ছবি—এএফপি
গত অক্টোবরে হামাস ইসরায়েলে ঢুকে ইসরায়েলিদেরকে হত্যা ও জিম্মি করার পর গাজা উপত্যকায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় শিশুদের পোলিও টিকা দেওয়ার জন্য কিছু সময়ের জন্য 'মানবিক কারণে যুদ্ধ বন্ধ' রাখতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল।
জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এ তথ্য জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনে ডব্লিউএইচও’র প্রতিনিধি রিক পিপারকর্ন বলেছেন, পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে গাজায় এই পোলিও টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে।
এর মূল্য লক্ষ্য, গাজা’র প্রায় ছয় লাখ ৪০ হাজার শিশুকে টিকাদান করা।
উপত্যকার কেন্দ্র, দক্ষিণ ও উত্তর অংশে ভিন্ন ভিন্ন ধাপে এই কর্মসূচি পালিত হবে। প্রতিটি ধাপে টানা তিনদিন সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধ থাকবে।
গাজার প্রথম পোলিও আক্রান্ত ব্যক্তি ২৫ বছর ধরে এই রোগে ভুগছেন। তার সংস্পর্শে আসার পর একটি ১০ মাস বয়সী শিশু আংশিকভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়। জাতিসংঘের কর্মকর্তা একথা জানানোর কয়েকদিনের মাথায় এই সম্মতি এল।
মুখে খাওয়ার পোলিও ভ্যাকসিন টাইপ-টু’র প্রায় এক দশমিক ২৬ মিলিয়ন ডোজ ইতোমধ্যে গাজায় রয়েছে এবং আরও প্রায় চার লাখ ডোজ শীঘ্রই পৌঁছাবে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই ক্যাম্পেইনটি পরিচালনা করবে। তবে তাদের সহযোগিতা করবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, ইউএনআরডব্লিউএ। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য দুই হাজারেরও বেশি কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
গাজা উপত্যকার ৯০ শতাংশ এলাকাকে এই টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনাটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্য। এর উদ্দেশ্য, অতিসত্বর গাজায় এই ভাইরাসের সংক্রমণ বন্ধ করা।
এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য যদি আরও একদিন প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে যুদ্ধবিরতিও আরও একদিনের জন্য চলবে। চুক্তিতে এ বিষয়টিও উল্লেখ আছে।
পোলিও ভাইরাস খুব সংক্রামক। পয়ঃনিষ্কাশন ও দূষিত পানির মাধ্যমে এটি ছড়ায়।
এর কারণে দেহের কোনও অঙ্গে বিকৃতি দেখা দিতে পারে। এটি পক্ষাঘাত সৃষ্টি করতে পারে, যা সবচেয়ে মারাত্মক। সাধারণ পাঁচ বছরের কম শিশুরা বেশি পোলিও আক্রান্ত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সংঘাতের আগে গাজা ও পশ্চিম তীরে টিকাদানের হার বেশি ছিল। ২০২২ সালে আনুমানিক ৯৯ শতাংশ এলাকায় টিকা দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, গত বছর এটি ৮৯ শতাংশে নেমে এসেছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গত জুলাই মাসে বলেছিলো যে তারা তাদের সেনা সদস্যদেরকে পোলিও টিকা দেওয়া শুরু করেছে।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের কর্মকর্তা বাসেম নাইম বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “গাজা উপত্যকার সাড়ে ছয় লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি শিশুর সেবা ও সুরক্ষার জন্য এই টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে সহায়তা করতে প্রস্তুত।”
তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন যে তিন দিন যুদ্ধ বন্ধ রাখাটা "যুদ্ধবিরতি নয়"।
জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর জেমস কারিউকি এই টিকাদান কর্মসূচির পরিকল্পনাকে "দৃঢ়ভাবে" স্বাগত জানিয়েছেন।
তবে তিনি বলেছেন যে ৯০ শতাংশ এলাকায় টিকাদানের আওতায় আনার জন্য বিরতিগুলো আরও দীর্ঘ হওয়া প্রয়োজন।
“টিকাদান কার্যক্রমের সময় হাজার হাজার শিশু টিকাদানের কেন্দ্রগুলোতে জড়ো হয়। তাই তখন তাদের সবাইকে সুরক্ষিত করতে হবে,” তিনি যোগ করেন।
ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে গঠিত সংগঠন হোস্টেজেস ফ্যামিলি ফোরাম-এর মুখপাত্র অধ্যাপক হাগাই লেভিন স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যে যারা এখনও বন্দি রয়েছেন, তাদেরকেও যেন টিকাদান করা হয়।
গত অক্টোবরে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ঢুকে নজিরবিহীন হামলায় ১২শ ইসরায়েলিকে হত্যা এবং ২৫২ জনকে জিম্মি করে নিয়ে গিয়েছিল হামাস। তার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় এই সামরিক অভিযান শুরু করেছে।
গাজা উপত্যকার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, সাতই অক্টোবর থেকে গাজায় ৪০ হাজার ৫৩০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh