সুদানের পোর্ট সুদানে বন্যার পানি একটি নালা তৈরি করেছে, পেছনে লোহিত সাগর পর্বতমালা দেখা যাচ্ছে। ছবি—রয়টার্স
সুদানের পূর্বাঞ্চলীয় লোহিত সাগর রাজ্যে বাড়তে থাকা পানির চাপে একটি বাঁধ ধসে অন্তত ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং বহু মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন, সোমবার জানিয়েছে জাতিসংঘ।
রোববার প্রবল বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যার চাপে পোর্ট সুদান থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে থাকা আরবাত বাঁধ ভেঙে পড়ে, এতে ২০টির মতো গ্রাম ভেসে যায়।
রয়টার্স জানায়, গৃহযুদ্ধ কবলিত দেশটির রাজধানীর কার্যক্রম এখন পোর্ট সুদান শহর থেকেই চালানো হচ্ছে। এখানে দেশটির সরকার, কূটনীতিক, সাহায্য সংস্থাগুলোসহ হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
হোয়াটসঅ্যাপে কর্মীদের প্রতি দেওয়া এক বার্তায় লোহিত সাগর রাজ্যের পানি সম্পদ কর্তৃপক্ষের প্রধান ওমর ঈসা হারুন বলেছেন, “এলাকাটিকে আর চেনা যায় না। বৈদ্যুতিক খুঁটি ও পানির পাইপগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে।”
দুর্যোগ মোকাবেলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ১৫০ থেকে ২০০ জনের মতো নিখোঁজ রয়েছেন।
তিনি জানান, বাঁধ ভেঙে নেমে আসা ঢলের পানিতে তিনি সোনার খনির শ্রমিকদের মৃতদেহ ও তাদের নষ্ট হয়ে যাওয়া যন্ত্রপাতি দেখেছেন।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে লিবিয়ার দের্না শহরে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর যে ব্যাপক মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনা ঘটেছিল আরবাতের দুর্যোগেও ওই রকমই কিছু ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
সোমবার রয়টার্সের এক সাংবাদিক আরবাতের পথ ধরে যাওয়ার সময় লোকজনকে এক মৃত ব্যক্তিকে কবর দিতে দেখেছেন। ওই লোকজন কবরটি ভেসে আসা গাছের গুঁড়ি দিয়ে ঢেকে দিচ্ছিল যেন সেটি কাদার স্রোতে ধুয়েমুছে না যায়।
কর্মকর্তারা জানান, এবার স্বাভাবিক সময়ের আগেই ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হয় আর তা টানা কয়েকদিন ধরে চলছে, এ সময় বাঁধটি ভেঙে যাচ্ছিল আর পলি তৈরি হচ্ছিল।
বাঁধটি পোর্ট সুদান শহরের পানির প্রধান উৎস ছিল। পোর্ট সুদান দেশটির প্রধান সমুদ্র বন্দর। দেশটির প্রধান বিমানবন্দরও এই শহরে অবস্থিত। খাদ্যাভাবে থাকা সুদানের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তাগুলো এই বন্দর দিয়েই দেশটিতে প্রবেশ করে।
সুদানের পরিবেশবাদী সমিতি এক বিবৃতিতে বলেছে, “সামনের দিনগুলোতে পোর্ট সুদানে সুপেয় পানির অভাব দেখা দেওয়ার হুমকি তৈরি হয়েছে।”
স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে উদ্ধৃত করে জাতিসংঘ জানিয়েছে, বন্যায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এই সংখ্যা শুধু আরবাত বাঁধের পশ্চিমের এলাকাগুলোর, পূর্বের এলাকাগুলো অত্যন্ত দুর্গম হওয়ায় সেখানকার পরিস্থিতি জানা যায়নি।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কিছু মানুষ তাদের বন্যাকবলিত বাড়িঘর ছেড়ে পর্বতের দিকে চলে গিয়েছিল, কিন্তু এখন সেখানে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
সোমবার সরকারের বর্ষা মৌসুম টাস্কফোর্স জানায়, বন্যায় সুদানজুড়ে ১৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর সুদানে বৃষ্টির কারণে অন্তত এক লাখ ১৮ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
২০২৩ সালের এপ্রিলে সুদানের সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক র্যাপিড ফোর্সেসের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই শুরু হয়। এর আগে থেকেই দেশটির বাঁধ, সড়ক ও সেতুগুলোর দশা নাজুক হয়ে ছিল। লড়াই শুরু হওয়ার পর উভয়পক্ষই তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সম্পদের সিংহভাগ যুদ্ধের পেছনে ব্যয় করতে শুরু করে, এতে আবকাঠামো মারাত্মক অবহেলার শিকার হচ্ছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh