× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

কাঁচা দুধ: স্বাস্থ্যকর নাকি ঝুঁকিপূর্ণ?

সামাজিক মাধ্যমের ট্রেন্ডে বাড়ছে বিপদ

ন্যাশনাল ট্রিবিউন ডেস্ক:

১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:৫২ এএম । আপডেটঃ ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:৫৫ এএম

দুধকে অল্প সময়ের জন্য উচ্চ তাপমাত্রায় গরম করে আবার ঠান্ডা করা হলে তা হয় পাস্তুরিত। ছবি: পেক্সেলস

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার একটি খামারে উৎপাদিত কাঁচা দুধ পান করে ২০ জনেরও বেশি মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, যাদের মধ্যে শিশুও ছিল। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। তাদের শরীরে ই-কোলাই ও ক্যাম্পাইলোব্যাক্টার-এর মতো মারাত্মক ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

এই ঘটনার পর আবারও আলোচনায় এসেছে কাঁচা দুধের স্বাস্থ্যঝুঁকি। বিশেষ করে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, যেমন টিকটকে, কাঁচা দুধকে 'সুপারফুড' হিসেবে প্রচার করার প্রবণতা বাড়ছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসচিব রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রও কাঁচা দুধ খাওয়ার পক্ষে কথা বলেছেন, কিন্তু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা।


স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা

সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর অ্যান্থনি অগনজানের মতে, "সামাজিক মাধ্যমের প্রভাবে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক। কাঁচা দুধ যে পাস্তুরিত দুধের চেয়ে ভালো, এর পেছনে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। যারা কাঁচা দুধ খাচ্ছেন, তারা নিজেদের জীবনকেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন।"

১৯৯৮-২০১৮ সালের মধ্যে কাঁচা দুধের কারণে শুধু যুক্তরাষ্ট্রে ২০২টি রোগের প্রাদুর্ভাব হয়েছে। ছবি: পেক্সেলস


কাঁচা দুধ সরাসরি খামার থেকে সংগ্রহ করা হয়, যা কোনো ধরনের প্রক্রিয়াজাতকরণ ছাড়া বাজারজাত করা হয়। অন্যদিকে, পাস্তুরিত দুধ একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় গরম করে দ্রুত ঠান্ডা করা হয়, যা এর মধ্যে থাকা ক্ষতিকর জীবাণু মেরে ফেলে। ১৯০০ সালের শুরুর দিকে এই পাস্তুরাইজেশন পদ্ধতি আবিষ্কার করা হয়। যদিও বাংলাদেশে কাঁচা দুধ বিক্রি করা অবৈধ নয়, তবে এর মানে এই নয় যে এটি নিরাপদ। খামারের পরিবেশ যতই পরিচ্ছন্ন হোক না কেন, গরুর শরীর বা দুধের পাত্রে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে।


কাঁচা দুধে লুকিয়ে থাকা বিপদ

পাস্তুরাইজেশন না হওয়ায় কাঁচা দুধে সালমোনেলা, লিস্টেরিয়া, ব্রুসেলা এবং যক্ষ্মার মতো জীবাণু থাকতে পারে। এই জীবাণুগুলো পেটে ব্যথা, বমি, পাতলা পায়খানা, মাথাব্যথা এবং জ্বরের কারণ হতে পারে। বেশিরভাগ সুস্থ মানুষ এই রোগ থেকে সেরে উঠলেও, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, বয়স্ক এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের জন্য এটি মারাত্মক ঝুঁকির কারণ।

আমেরিকান ফুড ও ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৮ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রে কাঁচা দুধের কারণে ২০২টি রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে, যার ফলে ২৬০০ জনেরও বেশি মানুষ অসুস্থ হয়েছেন এবং ২২৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে।


পুষ্টিগুণ: ধারণা বনাম বাস্তবতা

অনেকের ধারণা, পাস্তুরাইজেশন প্রক্রিয়ায় দুধের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। পাস্তুরিত দুধের পুষ্টিগুণ কাঁচা দুধের মতোই থাকে এবং এটি পান করলে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। মজার বিষয় হলো, কেবল দুধই নয়, কোমল পানীয়, পনির, জুস, দই, ডিমসহ আরও অনেক খাবার পাস্তুরিত করা হয়।

সামাজিক মাধ্যমের জনপ্রিয়তার পেছনে না ছুটে নিজের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি। কোনো ট্রেন্ড অনুসরণ করার আগে অবশ্যই এর সত্যতা এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত।


সূত্র: এভরিডে হেলথ

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.