ছবি: সংগৃহীত
মটরশুঁটি শীতকালের একটি পরিচিত সবজি। এটি খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টিগুণের দিক থেকেও অনন্য। তবে বর্তমানে ১২ মাসই মটরশুঁটি পাওয়া যায় বাজারে। কাঁচা এবং রান্না করে দুভাবেই খাওয়া যায় মটরশুঁটি। এটি খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি এর পুষ্টিগুণও অনেক।
মটরশুঁটির পুষ্টি, উপকারিতা ও সতর্কতা বিষয়ে জানিয়েছেন ল্যাবএইড আইকনিকের সিনিয়র পুষ্টিবিদ ফাহমিদা হাশেম।
তিনি বলেন, এখন প্রায় সবজি ১২ মাসই পাওয়া যায়। তবে যে মৌসুমে যে সবজি উৎপাদন হয় সেটার পুষ্টিগুণ তখন সবচেয়ে বেশি থাকে। কারণ সেগুলো সংরক্ষণ করা থাকে না। সংরক্ষণ করে রাখা ফল বা সবজির পুষ্টিগুণ একটু কমে যায়।
মটরশুঁটি একটি আমিষসমৃদ্ধ সবজি। যেসব সবজির মধ্যে কিছু পরিমাণ প্রোটিন আছে তারমধ্যে মটরশুঁটি অন্যতম। তবে এটিকে প্রোটিনের ভালো উৎস বলা যাবে না। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম প্রোটিনের ভালো উৎস। কিন্তু সব সবজিতে যে পরিমাণে প্রোটিন থাকে, মটরশুঁটিতে তার থেকে বেশি পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়।
মটরশুঁটিতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার।এ ছাড়া পাওয়া যায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ, ই, কে, ফলিক এসিড, আয়রন, জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়াম।
মটরশুঁটির উপকারিতা:
রোগ-প্রতিরোধ বাড়ায়
শীতকালে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একটু কমে যায়। ফলে জ্বর, কাশি, সর্দি বেশি হয়। শুধু ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় না। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রথমেই গুরুত্ব দিতে হবে প্রোটিনকে, তারপর ভিটামিন এ, জিঙ্ককে। মটরশুঁটির মধ্যে এসব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর এই উপাদানগুলো থাকে। তাই দৈনিক খাদ্যতালিকায় মটরশুঁটি রাখলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
সুগার নিয়ন্ত্রণ করে
মটরশুঁটিতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকায় ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফাইবারের কারণে গ্লুকোজ ধীরে ধীরে রক্তে শোষিত হয়। ফলে রক্তে সুগার হঠাৎ করে বেড়ে যেতে পারে না।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
ফাইবারসমৃদ্ধ হওয়ায় হজমজনিত সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে মটরশুঁটি।
ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়
মটরশুঁটিতে ভিটামিন এ, ই, ও কিছু পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে। এই তিনটি ভিটামিনকে একসঙ্গে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বলে। এ ছাড়া ফ্ল্যাভনয়েড ও ক্যারোটিনয়েড নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে এতে। আমাদের শরীরে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কারণে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেল তৈরি হয়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে তৈরি হওয়া কোষ ধ্বংসকারী ফ্রি-র্যাডিকেলকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। শরীরে ফ্রি-র্যাডিকেলের পরিমাণ কমে গেলে ক্যানসারের ঝুঁকি ও কমে যায়।
হৃদযন্ত্র ভালো রাখে
হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খুবই কার্যকরী। তাই মটরশুঁটিসহ অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ রঙিন শাকসবজি প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখলে হার্ট ভালো থাকবে। এ ছাড়া মটরশুঁটিতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি রক্তের কোলেস্টেরল কমিয়ে হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
মটরশুঁটি লো ক্যালরি, হাই ফাইবারযুক্ত সবজি। এক কাপ মটরশুঁটিতে মাত্র ৬০-৬৫ কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। আবার হাই ফাইবারযুক্ত হওয়ায় দ্রুত পেট ভরে যাবে। যারা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন তারা শীতকালে মটরশুঁটি বিভিন্নভাবে খেতে পারেন।
হাড় ভালো রাখে
মটরশুঁটিতে ভিটামিন কে থাকে। ভিটামিন কের ঘাটতি থাকলে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম অর্থাৎ বোন মিনারেল সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে হাড়ের সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য অস্টিওপোরেসিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য মটরশুঁটি ভিটামিন কের একটি ভালো উৎস।
ত্বক ভালো রাখে
ত্বকের বয়স ধরে রাখতে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের বিকল্প নেই। মটরশুঁটিতে আলফা-লিপোইক এসিড নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা একটি অ্যান্টি-এজিং উপাদান। এই এসিড ত্বককে সুস্থ রাখে, উজ্জ্বল করে এবং ত্বকের দাগ কমাতে সাহায্য করে।
চোখ ভালো রাখে
চোখের স্বাস্থ্যের জন্য মটরশুঁটির কোনো বিকল্প নাই। মটরশুঁটিতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিউটেনিন এবং জিজ্যান্থিন, যা চোখের ম্যাকুলার ডিজেনারেশন সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। বয়স বাড়তে থাকলে চোখে এই সমস্যা দেখা দেয়।
মন ভালো রাখে
মটরশুঁটিতে আছে অ্যামাইনো এসিড ট্রিপ্টোফ্যান। ট্রিপ্টোফ্যান সেরোটোনিন হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে। এই সেরোটোনিন হরমোন আমাদের মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই যাদের মেজাজ খিটখিটে থাকে, মন খারাপ থাকে তারা খাদ্যতালিকায় মটরশুঁটি রাখতে পারেন।
লেখক, ল্যাবএইড আইকনিকের সিনিয়র পুষ্টিবিদ।
বিষয় : মটরশুঁটি ভিটামিন এ ভিটামিন সি ফাইবারসমৃদ্ধ
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh