রিহাব হোসেন।
প্রাকৃতিক জীবনকে হ্যাঁ বলুন, দূষণকে না বলুন'—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এক দুরন্ত অভিযাত্রা সম্পন্ন করেছেন তরুণ পরিবেশকর্মী রিহাব হোসেন। পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে কক্সবাজারের টেকনাফ পর্যন্ত হেঁটে পাড়ি দিয়েছেন ১০৭৪ কিলোমিটার পথ। তার এই একক পদযাত্রা শেষ করতে সময় লেগেছে মাত্র ২৭ দিন। এই দুঃসাহসিক ভ্রমণের সময় রিহাব প্রতিদিন মানুষের মধ্যে প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা ছড়িয়েছেন এবং পথে পথে রোপণ করেছেন ৬৭টি চারাগাছ।
-6919cbd6c0e07.jpg)
২০২৫ সালের ১৬ অক্টোবর সকাল ৬টা ১০ মিনিটে রিহাব তার যাত্রা শুরু করেন। প্রথম দিন তার কাঁধে ছিল ২২ কেজি ওজনের ব্যাগ, যা পরবর্তীতে বেড়ে ২৫ কেজি হয়ে যায়। এই ২৫ কেজির ব্যাগ নিয়ে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত একাকী পায়ে হেঁটে পাড়ি দেওয়া প্রথম ব্যক্তি হলেন রিহাব। এই যাত্রায় রিহাবকে সহযোগিতা করেছে পরিবেশবাদী সংগঠন 'গ্রীন ভয়েস'। তিনি এই সংগঠনের হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক।

রিহাব হোসেন ন্যাশনাল ট্রিবিউনকে জানান, ২৭ দিনের এই যাত্রার প্রথম ১৬ দিন উত্তরবঙ্গের মানুষের অফুরন্ত ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন। পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও এবং তেঁতুলিয়ার মানুষ তাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা দিয়েছে। এই সময়ে তার থাকা বা খাওয়ার জন্য কোনো টাকা খরচ হয়নি। স্থানীয়রা তাকে কখনো নিজেদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে, কখনোবা হোটেলের খাবার খাইয়ে আপ্যায়ন করেছেন। গ্রামের পথ দিয়ে হাঁটার সময় অনেক মা-খালা তাকে গল্প শেষে চিঁড়া ভাজা, মুড়ি, চানাচুর, বিস্কুট, পাপড়সহ নানা ধরনের খাবার বেঁধে দিয়েছেন। রাতে কখনো নদীর পাশে তাঁবু খাটিয়ে, কখনো মাদ্রাসা বা মসজিদের স্বল্প পরিসর জায়গায়, আবার কখনো পেট্রোল পাম্পে রাত কাটিয়েছেন। পরিচিত বড় ভাইদের বাসাতেও কিছুদিন থাকার সুযোগ হয়েছে তার।
রিহাব বলেন, এই পথে হাঁটতে গিয়ে দুইবার ছিনতাইকারীদের কবলে পড়তে হয়। ভ্রমণের ১২ দিনের মাথায়, রাত সাড়ে ৯টায় পাবনাতে প্রথম ছিনতাইয়ের শিকার হন। ছিনতাইকারীরা তার কাছে থাকা ২৮০ টাকা ও মোবাইলটি কেড়ে নেয়। তবে নিজেকে দেশ ভ্রমণকারী হিসেবে পরিচয় দেওয়ার পর তারা ২০ টাকা এবং মোবাইলটি ফেরত দেয়। এই ঘটনার পরদিন তিনি ফেরিতে যমুনা নদী পার হয়ে মানিকগঞ্জ পৌঁছান, কারণ ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ যমুনা সেতু পায়ে হেঁটে পার হওয়ার অনুমতি পাননি।
দ্বিতীয়বারের মতো ছিনতাইয়ের শিকার হন ১৫ দিনের মাথায়, যখন তিনি ঢাকা থেকে দাউদকান্দির দিকে যাচ্ছিলেন। ঢাকা থেকে ৪৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটের দিকে দাউদকান্দি ব্রিজে পৌঁছালে দুজন ছিনতাইকারী তার গলায় ছুরি ধরে সব টাকা ও মোবাইল নিয়ে নেয়। সবকিছু দিয়ে দেওয়ার পরেও তাকে শারীরিকভাবে মারধর করা হয়।
এই দুর্ঘটনার পর বাকি পথটুকু রিহাবকে অনেক ভয় নিয়ে একা পাড়ি দিতে হয়েছে, সহজে কাউকে বিশ্বাস করতে পারেননি।
-6919cc1e20a5e.jpg)
এই সব বাধা পেরিয়ে, প্রায় প্রতিদিন গড়ে ৫০ কিলোমিটার পথ হাঁটার পর, রিহাব হোসেন তার গন্তব্যে পৌঁছান।
রিহাব জানান, সবচেয়ে বেশি পথ হেঁটেছেন একদিনে—১১ ঘণ্টা ৪০ মিনিটে ৭৩ কিলোমিটার, যা ছিল পেকুয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত।
২০২৫ সালের ১১ নভেম্বর, ভোর ৫টা ১৪ মিনিটে তিনি টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ জিরো পয়েন্টে তার ঐতিহাসিক যাত্রা শেষ করেন।
নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার তকিপুর গ্রামের বাসিন্দা রিহাব হোসেন, হাবিবুল্লাহ বাহার ইউনিভার্সিটি কলেজের লাইব্রেরী ও ইনফরমেশন সাইন্স বিভাগের ছাত্র। তার বাবার নাম মনিরুজ্জামান এবং মাতার নাম রুজিনা আক্তার।
বিষয় : রিহাব হোসেন। গ্রীন ভয়েস
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
