× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

'বাংলাদেশ আইসিটি সার্ভিস' বাস্তবায়নে বিলম্ব, বাড়ছে প্রশাসনিক জটিলতা

ন্যাশনাল ট্রিবিউন প্রতিবেদক

০৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৩:৪৮ পিএম । আপডেটঃ ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৩:৫০ পিএম

ছবি: আইসিটি ক্যাডার

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক সংস্কার, 'বাংলাদেশ আইসিটি সার্ভিস' বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা ও আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়হীনতার কারণে প্রকল্পটি বারবার হোঁচট খাচ্ছে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এটিকে ছয় মাসের মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য বলে চিহ্নিত করলেও, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং প্রথাগত ক্ষমতার বলয়ের কারণে আজও এটি আলোর মুখ দেখেনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিলম্ব সরকারের ই-গভর্ন্যান্স উদ্যোগগুলোর ধারাবাহিক সফলতাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে।

একটি নতুন ক্যাডার সার্ভিস গঠন মানেই দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া, বিধিমালা প্রণয়ন, পদসৃজন এবং বাজেট অনুমোদনের মতো সময়সাপেক্ষ ধাপ অতিক্রম করা। আইসিটি সার্ভিসের ক্ষেত্রে এই জটিলতা আরও প্রকট হয়েছে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়হীনতায়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণে মতভেদ থাকায় বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত অগ্রগতি পায়নি।

দীর্ঘদিন ধরে যথাযথ পদমর্যাদা ও সুনির্দিষ্ট ক্যারিয়ার পথের অভাবে সরকারি দপ্তরগুলোতে কর্মরত হাজারো আইসিটি কর্মকর্তা হতাশাগ্রস্ত। ফলস্বরূপ, তাদের মেধা ও দক্ষতাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ডিজিটাল উদ্যোগ টেকসই হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইসিটি সার্ভিস বাস্তবায়ন না হওয়ায় আইটি জনবলের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না, যা সরকারের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন অভিযাত্রাকে দুর্বল করে দিচ্ছে।


এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক সংস্কারে বাধা দিচ্ছে একটি জটিল চক্র:

  • প্রথাগত ক্ষমতার বলয়: জনপ্রশাসন ক্যাডারসহ বিদ্যমান বিসিএস সার্ভিসের একাংশ প্রযুক্তিনির্ভর এই নতুন ক্যাডার গঠনে সুস্পষ্ট অনীহা দেখাচ্ছে, যা প্রথাগত ক্ষমতার ভারসাম্য হারানোর শঙ্কা থেকে তৈরি।


  • বিদেশি কনসালট্যান্ট নির্ভরতা: আইসিটি সার্ভিস অনুপস্থিত থাকায় সরকারি ডিজিটাল প্রকল্পগুলোতে দেশীয় জনবলের পরিবর্তে বিদেশি পরামর্শক ও সরবরাহকারীদের ওপর নির্ভরতা থেকেই যাচ্ছে।


  • দুর্নীতি ও সুবিধাভোগী চক্র: বিভিন্ন দপ্তরে একই ধরনের প্রকল্প বারবার বাস্তবায়নের সুযোগ থাকায় দুর্নীতি এবং অদক্ষতার একটি চক্র টিকে আছে, যা সংস্কারে বাধা দিচ্ছে।


  • রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি: অতীতে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক সংস্কারগুলো রাজনৈতিক অগ্রাধিকার তালিকার নিচের দিকে নেমে যাওয়ায় এটিও দীর্ঘমেয়াদি সংকটে পড়েছে।


চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই সন্ধিক্ষণে, বাংলাদেশ আইসিটি সার্ভিস শুধু একটি নতুন ক্যাডার নয়—এটি সরকারের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন অভিযাত্রার কেন্দ্রে থাকা একটি অত্যাবশ্যকীয় প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি। এটি বাস্তবায়িত হলে:

  • ই-সেবার টেকসই বাস্তবায়ন: প্রশিক্ষিত ও মর্যাদাপ্রাপ্ত আইসিটি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সরকারি ডিজিটাল সেবা আরও কার্যকর ও দীর্ঘস্থায়ী হবে।


  • সাইবার নিরাপত্তা বৃদ্ধি: দক্ষ ও নিবেদিত জনবল সরকারি নেটওয়ার্ক ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-নিরাপত্তা কাঠামোকে শক্তিশালী করবে।


  • বিদেশি নির্ভরতা হ্রাস: দেশীয় দক্ষতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ তৈরি হওয়ায় বিদেশি কনসালট্যান্টদের ওপর আর্থিক নির্ভরতা কমবে।


  • সমন্বিত প্রশাসনিক দক্ষতা: একাধিক প্রতিষ্ঠানের বিচ্ছিন্ন প্রকল্পের পরিবর্তে একক পরিকল্পনায় একটি সমন্বিত বাস্তবায়ন কাঠামো তৈরি হবে।


সংশ্লিষ্ট জানাচ্ছেন, যৌথ উদ্যোগ, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় এবং বলিষ্ঠ রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে আইসিটি সার্ভিস বাস্তবায়ন বাংলাদেশের প্রশাসনিক ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে পারে।

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.