ভারতের শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানির ছোট ছেলে অনন্ত আম্বানির প্রাক্-বিয়ের অনুষ্ঠান হয় ১ থেকে ৩ মার্চ—রয়টার্স
বছরের সেরা বিয়ের সময় এসে গেছে।
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানির ছেলে অনন্ত আম্বানি এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে প্রেমিকা রাধিকা মার্চেন্টকে বিয়ে করবেন। তাঁদের প্রাক্বিবাহ অনুষ্ঠানের জাঁকজমকের চিত্র সারা বিশ্ব দেখেছে; এবার তাঁদের বিয়ের মূল অনুষ্ঠান। ভারতীয়রা এমনিতে জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ের অনুষ্ঠান দেখে অভ্যস্ত। কিন্তু অনন্তের বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে যা হচ্ছে, তা দেখে রীতিমতো তাক লেগে যাচ্ছে ভারতীয়দের।
সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, এশিয়ার অন্যতম শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানি পরিবার ভারতের জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ের অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে। এখন ভারতে যে হারে অতি ধনী বাড়ছে, তার চেয়ে বেশি হারে জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ের অনুষ্ঠান বাড়ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিবাহবিষয়ক পরিকল্পনা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান দ্য নট ওয়ার্ল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিম চি বলেন, ভারতের বিয়ের অনুষ্ঠানের জগতে আম্বানিদের অনুষ্ঠানের বহুবিধ প্রভাব অনুভূত হচ্ছে। তারা যেমন নতুন প্রবণতার জন্ম দিচ্ছে, তেমনি বিয়ের অনুষ্ঠানের পণ্য সরবরাহকারীদের চাহিদা বাড়িয়ে দিচ্ছে। ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরার সঙ্গে অর্থনীতিতেও গতি সঞ্চার করছে এ ধরনের অনুষ্ঠান।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান জেফরিসের তথ্যানুসারে, মহামারির পর ভারতের বিবাহশিল্পের বড় ধরনের উত্থান হয়েছে। এই শিল্পের বার্ষিক আকার এখন ১৩০ বিলিয়ন বা ১৩ হাজার কোটি ডলার; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিবাহশিল্পের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হলেও ভারতের এই শিল্প এখনো চীনের চেয়ে ছোট।
জেফরিসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের মানুষ এমনিতে ব্যয়ের ক্ষেত্রে সচেতন হলেও বিয়ের অনুষ্ঠানে তারা ব্যয় করতে ভালোবাসে। যে শ্রেণির মানুষই হোক না কেন, সবার মধ্যেই এই প্রবণতা আছে।
ভারতের বিয়ের অনুষ্ঠানের গড় খরচ ১৫ হাজার ডলার, যদিও তাদের বার্ষিক পারিবারিক আয় ৫ হাজার ডলার। অর্থাৎ বার্ষিক পারিবারিক আয়ের তিনগুণ অর্থ বিয়ের অনুষ্ঠানে ব্যয় হয়।
শুধু মর্যাদার বিষয় নয়
বিশ্বের অনেক দেশেই বিয়ের অনুষ্ঠানে বড় ধরনের ব্যয় করা হয়। কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে বিষয়টি শুধু ব্যয়ের নয়; এর সঙ্গে ক্ষমতা ও মর্যাদার বিষয় জড়িয়ে আছে।
দক্ষিণ এশিয়ার মানুষেরা সন্তানের বিয়েতে জীবনের সঞ্চয়ের বড় একটি অংশ ব্যয় করেন। কিন্তু ভারতের অনেক বিয়ের অনুষ্ঠানের জাঁকজমক এত বেশি যে সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, এর সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক উত্থানের সম্পর্ক আছে।
ভারতের বিবাহানুষ্ঠানবিষয়ক পরামর্শক সীমা তাপারিয়া বলেন, গত এক দশকে ভারতের সব শ্রেণির মানুষের বিয়ের অনুষ্ঠানে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। ভারতের ধনীরা এখন বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করছেন। বলিউডের নামীদামি তারকাদের দাওয়াত দেওয়ার পাশাপাশি বিখ্যাত গায়ক-গায়িকাদের নিয়ে গানের অনুষ্ঠান করছেন, প্রায় সব ধনী এখন এই পথে হাঁটছেন।
এদিকে ভারতের বিবাহানুষ্ঠান আয়োজনকারী এজেন্সি মোতওয়ানে এন্টারটেইনমেন্ট অ্যান্ড ওয়েডিংয়ের অনুষ্ঠান পরিকল্পনাকারী আদিত্য মোতওয়ানে সিএনএনকে বলেন, ভারতের বিবাহানুষ্ঠান এখন ধনীদের যোগাযোগ, সম্পর্ক ও সম্পদের ক্ষমতা প্রদর্শনের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এটা মানুষকে দেখানো; এ ধরনের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আপনি জীবনের একটি স্তরে প্রবেশ করেছেন।
নট ওয়ার্ল্ডওয়াইডের তথ্যানুসারে, ভারতের বিয়ের অনুষ্ঠানে গড়ে ৩২৬ অতিথি আমন্ত্রিত হন; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে যা মাত্র ১১৫ জন।
ধনীদের বেলায় এই সংখ্যাটা বহুলাংশে বেড়ে যায়। ধনীদের বিয়ের অনুষ্ঠানে হাজার হাজার অতিথি থাকেন; এমনকি এসব বিয়ে এখন বিদেশের দামি জায়গায় হচ্ছে। মানুষ দামি দামি উপহার দিচ্ছে। চলতি বছরের মার্চ মাসে ভারতের জামনগরে অনন্ত আম্বানির তিন দিনব্যাপী প্রাক্বিবাহ অনুষ্ঠানে ১ হাজার ২০০ ক্ষমতাবান অতিথি উপস্থিত ছিলেন, যেমন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ ও মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস।
২০২৭ সালের মধ্যে বিশ্বের তৃতীয়-বৃহত্তম অর্থনীতি হবে ভারত। স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেওয়া হচ্ছে, তখন ভারতে এমন জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ের অনুষ্ঠান বাড়বে।
আবাসন খাতের পরামর্শক সংস্থা নাইট ফ্রাঙ্কের তথ্যানুসারে, ২০২৮ সালের মধ্যে ভারতে তিন কোটি ডলারের বেশি সম্পদধারী মানুষের সংখ্যা ৫০ শতাংশ বাড়বে। এর চেয়ে বেশি হারে আর কোথাও বাড়বে না। এ ছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের মধ্যবিত্তের সংখ্যা ৬০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। দেশটির মানুষ যত ব্যয় করে, তার ৮০ শতাংশের বেশি তারাই ব্যয় করবে।
বিবাহবিষয়ক পরিকল্পনাকারী প্রতিষ্ঠান শাদি স্কোয়াডের সহপ্রতিষ্ঠাতা টিনা থারওয়ানি বলেন, মধ্যবিত্তের সংখ্যা বৃদ্ধির অর্থ হলো, তাদের ব্যয়যোগ্য অর্থের পরিমাণও বৃদ্ধি পাওয়া। এই অর্থ অনিবার্যভাবে জাঁকজমকপূর্ণ পার্টি ও উৎসবে ব্যয় হবে।
জেফরিসের তথ্যানুসারে, ভারতের বিলাসবহুল বিয়ের অনুষ্ঠানে গড়ে দুই থেকে চার লাখ ডলার ব্যয় হয়। এই অর্থে বিশ্বের যেকোনো দেশে পাঁচ তারকা হোটেল ভাড়া করে ভালো খাবার দেওয়া যায়।
তবে ভারতের ধনীরা এখন দেশের বাইরে হরেক রকম স্থানে বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করছেন। অবশ্য বিয়ের অনুষ্ঠান যেন দেশের মধ্যে হয়, তা নিশ্চিত করতে ধনীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।
বিষয় : মুকেশ আম্বানি অনুষ্ঠান বিয়ে ভারত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh