না ফেরার দেশে চলে গেছেন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ। বৃহস্পতিবার জোহরের নামাজ বাদ মোহাম্মদপুর জামে মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর ওই মসজিদেরই কবরস্থানে তার বাবা শহীদ সলিম উল্লাহ তাকে দাফন করা হয়। তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।
শেষবার সাদীকে দেখতে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, সংগীতশিল্পী খুরশীদ আলম, অভিনেতা খায়রুল আলম সবুজ, গাউসুল আলম শাওন, কবির বকুল, অনিমা রায়সহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বহু পরিচিত মানুষ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।
এর আগে বুধবার রাত ৯টার দিকে সাদি মহম্মদের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়। তার ছোট ভাই নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ জানান, ইফতার সেরে সাদি সংগীত চর্চা করেন। এর কিছু সময় পর হঠাৎ দেখেন ঘরের দরজা বন্ধ। তখন দরজা ভেঙে সাদির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
গত বছরের ৮ জুলাই সাদি মহম্মদের মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ বার্ধক্যজনিত রোগে মারা যান। এরপর থেকেই ট্রমার মধ্যে ছিলেন এই রবন্দ্রিসংগীতশিল্পী। মানসিকভাবে স্বাভাবিক ছিলেন না তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, মা হারানোর বেদনা নিতে পারেননি সাদি মহম্মদ।
একাধারে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী, শিক্ষক ও সুরকার হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন সাদি মহম্মদ। তার গানের সুরে বুঁদ হয়ে থাকতেন শ্রোতা-দর্শকরা।
১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন সাদি মহম্মদ। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে শহীদ পিতার সন্তান। তার বাবার নাম শহীদ সলিম উল্লাহ। মায়ের নাম জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ। ১৯৭৩ সালে বাবা-মায়ের ইচ্ছায় বুয়েটে ভর্তি হয়েছিলেন সাদি মহম্মদ। তবে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মন বসাতে পারেননি এই সংগীতশিল্পী।
১৯৭৫ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াকালে গানের টানে স্কলারশিপ নিয়ে শান্তিনিকেতনে সংগীত নিয়ে পড়তে চলে যান সাদি মহম্মদ। বিশ্বভারতী থেকে রবীন্দ্রসংগীতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। সেই থেকে গানের জগতে পথচলা শুরু সাদি মহম্মদের।
২০০৭ সালে ‘আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে’ অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০০৯ সালে তার ‘শ্রাবণ আকাশে’ ও ২০১২ সালে তার ‘সার্থক জনম আমার’ অ্যালবাম প্রকাশিত হয়।
এছাড়া ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি হত্যা করে তার বাবা সলিমউল্লাহকে। তার বাবার নামে ঢাকার মোহাম্মদপুরের সলিমউল্লাহ রোডের নামকরণ করা হয়েছে।