‘সাইয়ারা’ সিনেমার দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
মোহিত সুরি পরিচালিত ‘সাইয়ারা’ মুক্তির পর থেকেই যেন ঢেউ তুলেছে দর্শকের হৃদয়ে। শুধু হৃদয়েই নয়, বক্স অফিসেও উঠেছে রীতিমতো জোয়ার। ছবির মুক্তির সাত দিনের মধ্যেই আয় ছুঁয়েছে প্রায় ২৭৮ কোটি টাকা (বাংলাদেশি মুদ্রায়), যা নির্মাণ ব্যয়ের তিন গুণেরও বেশি। প্রেম, সংগীত আর তারুণ্যের সংমিশ্রণে তৈরি এই সিনেমা এখন দক্ষিণ এশিয়ায় আলোচনার শীর্ষে।
নবাগত আহান পান্ডে আর অনীত পাড্ডা অভিনীত ছবিটি প্রযোজনা করেছে যশরাজ ফিল্মস। ভারতে মুক্তি পেয়েছে ১৮ জুলাই। এর নির্মাণ ব্যয় ছিল আনুমানিক ৫৭ কোটি টাকা। প্রথম দিনেই আয় করে ২৭ কোটি টাকার বেশি, দ্বিতীয় দিনে ৩৯ কোটি, তৃতীয় দিনে ৪১ কোটি টাকা। সপ্তম দিনে কিছুটা ভাটা পড়লেও মোট আয় গিয়ে ঠেকেছে ভারতে প্রায় ২৭৯ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সাফল্য বিগত কয়েক বছরের রোমান্টিক ঘরানার ছবির মধ্যে সবচেয়ে চমক জাগানো।
তরুণ প্রজন্মের জন্য নির্মিত এই ছবির গল্প যতটা আবেগঘন, তার চেয়েও বেশি আলোচনায় এসেছে ছবির মূল জুটি আহান-অনীত। বহুদিন পর বলিউডে এমন এক জুটি পাওয়া গেল, যাঁদের সঙ্গে দর্শক নিজেকে মিলিয়ে দেখতে পারছে। সিনেমার গানে যেমন প্রেম আছে, তেমনি রয়েছে স্নিগ্ধতা। রোমান্সের দৃশ্যগুলোতেও এসেছে আধুনিক স্পর্শ। ফলে শুধু প্রেক্ষাগৃহেই নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বইছে সাইয়ারা–জোয়ার। গান, সংলাপ, দৃশ্য—সবই ভাইরাল।
‘সাইয়ারা’ সিনেমার দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
এই সাফল্যের অন্যতম আকর্ষণ আহান পান্ডে। বলিউড অভিনেতা চাঙ্কি পান্ডের ভাতিজা হয়েও প্রচার ও গসিপ থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন তিনি। ক্যারিয়ারের প্রথম ছবিতেই অনন্য এক পরিচিতি পেয়েছেন। প্রচারের মাঠে তাঁকে নামায়নি প্রযোজকেরা। ফলে ‘সাইয়ারা’ মুক্তির আগে বা পরে কোনো গণমাধ্যমেও দেখা যায়নি তাঁকে। অথচ তাঁর পুরোনো ভিডিও, কথাবার্তা, হাসিমুখ ছড়িয়ে গেছে নেট দুনিয়ায়। ভিডিওগুলোতে একমুহূর্তেই ‘হার্টথ্রব’ হয়ে উঠেছেন আহান। অনেকেই বলছেন, কোরিয়ান পপ কালচারের দাপটের মাঝেও বলিউডে নতুন এক তারকা জন্ম নিয়েছেন।
অন্যদিকে পাঞ্জাবি কন্যা অনীত পাড্ডার পথচলা একটু দীর্ঘ। ২০২২ সালে রেভতির ‘সেলাম ভেংকি’ ছবিতে ছোট একটি চরিত্রে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। এরপর ‘বিগ গার্লস ডোন’ট ক্রাই’ সিরিজে মূল চরিত্রে কাজ করেছেন। কিন্তু পরিচিতির আলো জ্বালল সাইয়ারা–ই। আহানের মতো অনীতকেও রাখা হয়েছে প্রচারের বাইরে। তবে প্রেক্ষাগৃহে কিংবা অনলাইনে, তাঁদের রসায়ন নিয়ে মুগ্ধতার শেষ নেই।
‘সাইয়ারা’ সিনেমার দৃশ্যে আহান পান্ডে এবং অনীত পড্ডা। ছবি: সংগৃহীত
এদিকে ‘সাইয়ারা’–কে ঘিরে চলছে বলিউড তারকাদের প্রশংসার ঝড়। আমির খান, আলিয়া ভাট, অনিল কাপুর, রণবীর সিং, শিল্পা শেঠি, শ্রদ্ধা কাপুর, বরুণ ধাওয়ান, অনন্যা পান্ডে, সন্দীপ রেড্ডি ভাংগা, কার্তিক আরিয়ান—অনেকে তাঁদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ছবির দুই নবাগতকে। কেউ গানের ভিডিও শেয়ার করছেন, কেউ নিজের অনুভূতি লিখছেন, কেউ–বা সরাসরি জানিয়েছেন, বহুদিন পর এমন প্রেমের ছবি মন ছুঁয়ে গেছে।
তবে ‘সাইয়ারা’র সাফল্য নিয়ে রয়েছে ভিন্নমতও। কেউ কেউ বলছেন, অতিরিক্ত প্রচারকৌশল আর জনসংযোগের চাপেই ছবিটি এতটা আলোচনায়। ইউটিউব ও ফেসবুকে ইতিমধ্যে দেখা যাচ্ছে নানা নেতিবাচক ভিডিও, যেখানে বলা হচ্ছে—ছবিটি যতটা না শক্তিশালী, তার চেয়ে বেশি ‘বিক্রি’ হচ্ছে গ্ল্যামারাইজড মার্কেটিংয়ে ভর করে। তবে এসব সমালোচনা ছাপিয়েও সত্য এটাই—ছবির নির্মাতা মোহিত সুরি আবারও প্রমাণ করলেন, আবেগ আর ভালো গল্প থাকলে রোমান্টিক ছবি দিয়েও এখনো বক্স অফিস কাঁপানো সম্ভব।
‘সাইয়ারা’ এখন শুধু সিনেমা নয়, একধরনের ‘কালচারাল ফেনোমেনন’ বলছেন কেউ কেউ। নেট–দুনিয়ায় ছবির গান, সংলাপ, দৃশ্য নিয়ে তৈরি হচ্ছে অসংখ্য রিলস। জেন–জি প্রজন্মের মনে তৈরি হয়েছে গভীর আবেশ। যেন সারা দুনিয়াই এখন ‘সাইয়ারা’ জ্বরে কাবু।
প্রশ্ন রয়ে যায়, এই সাফল্য কি দীর্ঘস্থায়ী হবে? নাকি কিছুদিন পর এই উন্মাদনা ফিকে হয়ে যাবে? আপাতত সে উত্তর সময়ই দেবে। তবে এক সপ্তাহ পেরোতেই এটা বলা যায়, ‘সাইয়ারা’ ২০২৫ সালের বলিউডের সবচেয়ে বড় চমকগুলোর একটি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh