পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে শুক্রবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে তোলা হয় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে | ছবি—সংগৃহীত
ঢাকার বনানীতে সেতু ভবনে নাশকতা ও ভাঙচুরের মামলায় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে শুক্রবার তাকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
এদিকে নুরের আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকারমহানগর হাকিম শাকিল আহম্মদ জামিন নামঞ্জুর করে নুরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে গত ২১ জুলাই তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিল ঢাকার একটি মহানগর হাকিম আদালত।
শুক্রবার নুরের পক্ষে জামিন চেয়ে শুনানি করেন আইনজীবী খাদেমুল ইসলাম, মো. পারভেজ ও বিপ্লব পোদ্দার।
নুরের আইনজীবীরা সাংবাদিকদের বলেন, গত ২১ জুলাই নুরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছিল। রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক আবু সাইদ মিয়া।
আবেদনে বলা হয়, ভিপি নুর কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও আসিফ মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি তাদের আট দফা কর্মসূচি লিখে দেন। এ আন্দোলনকে ঘিরে পরবর্তী ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তাই তাকে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখা একান্ত প্রয়োজন।
নূরের আইনজীবী মো. পারভেজ সাংবাদিকদের বলেন, “শুনানির সময় নুরকে এজলাসে তোলা হয়। প্রথমে তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। পরে কাঠগড়ায় তার দাঁড়াতে কষ্ট হওয়ায় আমাদের আবেদনে তাকে এজলাসের আসনে বসানো হয়।”
রিমান্ডে নিয়ে নুরকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে তার আইনজীবীরা আদালতে অভিযোগ তোলেন। শারীরিক অবস্থা ও সার্বিক বিবেচনায় তারা জামিন চান তারা।
আইনজীবী পারভেজ বলেন, “নুরকে প্রহারের ঘটনা শুনানিতে বলা হলে আদেশের পর বিচারক তার খাসকামরায় ডেকে নিয়ে রিমান্ডে কী কী করা হয়েছে, তার কাছে তা জানতে চান।”
কারাগারে নুরের চিকিৎসার আবেদন করা হলে বিচারক বলেন, “আমি তাকে জিজ্ঞাসা করে পরে চিকিৎসার বিষয়ে অদেশ দেব।”
আইনজীবীরা সাংবাদিকদের বলেন, পরে তারা আর চিকিৎসার বিষয়ে বিচারক কী আদেশ দিলেন, তা জানতে পারেননি।
আদালতে উপস্থিত ছিলেন নুরের স্ত্রী মারিয়া আক্তার লুনা ও বাবা ইদ্রিস হাওলাদার। তারা নুরের ওপর নির্যাতন বন্ধের দাবি করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, “গত ১৮ জুলাই প্রতিদিনের মত সেতু ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসের কার্যক্রম করতে থাকেন। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অজ্ঞাতনামা ২৫০/৩০০ জন আসামি কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও নাশকতার লক্ষ্যে বেআইনি জনতাবদ্ধে আবদ্ধ হয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল নিয়ে আমাদের অফিসের সামনে এসে সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
“সেতু ভবনের সিনিয়র সচিবসহ কর্মকর্তাদের পদ-পদবি ধরে খোঁজাখুঁজি করে হুমকি প্রদর্শন ও ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে অন্তর্ঘাতমূলক ভীতি সৃষ্টি করে সেতু ভবন লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। একপর্যায়ে আসামিরা আমাদের অফিসের মূল ফটক ভেঙে অনধিকার প্রবেশ করে সেতু ভবনের নিচ তলায় ভবনের সামনে রক্ষিত জিপ, কার, বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, পিকআপ, মোটরসাইকেল, নিরাপত্তা ভবন, সিসি ক্যামেরা, পার্কিং শেড, ক্যানটিন, গাড়িচালকদের কক্ষ, আনসার শেড, মুজিব কনার, জেনারেটরস কক্ষসহ মূল ভবন ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ ঘটায়।”
অভিযোগে আরও বলা হয়, “এ সময়ে সেতু ভবনের সিনিয়র সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীরাসহ ভেতরে থাকা অফিস স্টাফ ও নিরাপত্তাকর্মী আসামিদের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম থেকে সরে যেতে অনুরোধ করলে আসামিরা তাদের মারধর করে ও গুরুতর জখম করে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, পরবর্তী সময় আসামিরা নিচ তলার আনসার শেড, ড্রাইভার শেড থেকে চেয়ার টেবিলসহ অন্যান্য আসবাবপত্র এবং সেতু ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে নিচতলা হতে ১১ তলা পর্যন্ত অফিসে ভাঙচুর করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে অফিসে রক্ষিত কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ফাইল কেবিনেট, এসি, ফ্যান, পানির ফিল্টার, চেয়ার, টেবিল, আসবাবপত্রসহ অন্যান্য সরকারি ও ব্যক্তিগত মালামাল সামগ্রী চুরি করে এবং প্রত্যেক ফ্লোরে অগ্নিসংযোগ ঘটায়।
আসামিদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ও অগ্নিসংযোগে সেতু ভবনের নিচতলা হতে ১২ তলা পর্যন্ত ফ্লোরে রক্ষিত পদ্মা সেতু প্রকল্প, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বহুলেন সড়ক টানেল-প্রকল্প, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প সেতু বিভাগের আওতাধীন সব প্রকল্পের প্রধান কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদি, এফডিআর ইনস্ট্রুমেন্ট, টেন্ডার সিকিউরিটি ডকুমেন্টস, ইন্টারনেট সার্ভার, শতাধিক কম্পিউটার ও কম্পিউটার সামগ্রী, আসবাবপত্র, কম্পিউটার, জেনারেটর, ফায়ার এক্সটিংগুইশারসহ যাবতীয় নথিপত্র এবং সেতু ভবনের পার্কিংয়ে তা থাকা ৩২টি জিপ গাড়ি, ৯টি পিকআপ, ৭টি মাইক্রোবাস, ১টি মিনিবাস, ৫টি মোটরসাইকেল, ১টি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দিলে ভস্মীভূত হয় আনুমানিক ৩০০ কোটি টাকার মালামাল। তাৎক্ষণিক বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মারফত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ইউনিটকে বলা হয়।
এ ঘটনায় সেতু ভবনের কেয়ারটেকার রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে বনানী থানায় মামলা করেন।
একই মামলায় বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তারের পর পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য আন্দালিব রহমান পার্থকে। গ্রেপ্তার হয়েছেন আরও কয়েকজন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh