× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

যাত্রাবাড়ী-শনির আখড়ায় পুলিশ হত্যা: ছাত্রদল নেতাসহ গ্রেপ্তার ৬

ন্যাশনাল ট্রিবিউন প্রতিবেদক

২৬ জুলাই ২০২৪, ১০:৫১ এএম । আপডেটঃ ২৬ জুলাই ২০২৪, ১০:৫২ এএম

কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে নাশকতা ও দুই পুলিশ সদস্যকে হত্যায় জড়িত সন্দেহে ডেমরা থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুদ রানা এবং তার সহযোগী ইরফান, আবু বক্কর, রবিউল ইসলাম, সৌরভ মিয়া ও তারেককে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি | ছবি—সংগৃহীত

কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে ঢাকার যাত্রাবাড়ী, রায়েরবাগ, শনিরআখড়া এলাকায় নাশকতা ও দুই পুলিশ সদস্যকে হত্যায় জড়িত সন্দেহে ডেমরা থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুদ রানাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করার তথ্য দিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

গ্রেপ্তার অন্য পাঁচজন হলেন- ইরফান, আবু বক্কর, রবিউল ইসলাম, সৌরভ মিয়া ও তারেক। তারা মাসুদের নেতৃত্বে নাশকতা ও হত্যা মিশনে অংশ নেন বলে দাবি ডিবির।

শুক্রবার দুপুরে ঢাকার মিন্টোরোডে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন ঢাকা মহানগর ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ।

সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের আড়ালে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। তারা বেছে বেছে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে, উদ্দেশ্য ছিল পুলিশের মনোবল ভেঙে দেয়া।

এই নাশকতার জন্য বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের দায়ী করে ডিবির হারুন বলেন, “বিএনপি-জামায়াত অনেকবারই গণতান্ত্রিক সরকারকে অবৈধভাবে ক্ষমতাচ্যুত করা বা দেশকে অকার্যকর করার চেষ্টা বা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা বারবারই ব্যর্থ হয়েছে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে কাজ করা পুলিশের কারণে।

“এ জন্য তারা এবার পুলিশকেই টার্গেট করেছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল একটাই, পুলিশকে ডিমরালাইজড করা। পুলিশকে ডিমরালাইজড করতে পারলে, তারা হয়ত মনে করেছিল আন্দোলন সাকসেসফুল হবে। পুলিশ দুর্বল হলে পিছিয়ে যাবে।”

যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনের মধ্যে গুরুত্ব স্থাপনায় হামলাকারীরা আবাসিক এলাকায় গিয়ে পুলিশ সদস্যদের বাসা খুঁজে বের করার চেষ্টা করে বলে খবর রয়েছে।

এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে হারুন বলেন, “পুলিশ সদস্যদের শুধু পিটিয়ে মারা বা হত্যা করাই নয়, বাসা-বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি করে পুলিশ সদস্যদের খোঁজা হয়েছে। এখন আমরাও বাসা-বাড়িতে জামায়াত-শিবির-বিএনপি চক্রকে খুঁজছি। যেখানেই পাব গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসব।”

ডিবি পুলিশ বলছে, ডেমরা থানা ছাত্রদল আহ্বায়ক মাসুদ রানার নেতৃত্বে পুলিশ হত্যার ‘নীলনকশা’ বাস্তবায়ন করা হয়। একেকজনের ছিল একেক দায়িত্ব। ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সুনির্দিষ্ট প্রমাণসাপেক্ষে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ডেমরা থানার ছাত্রদল নেতা মাসুদ রানার নেতৃত্বে একটি দল সেখানে নাশকতার একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ করেন ডিবির এই কর্মকর্তা। তার বর্ণনা অনুযায়ী, ডেমরা থানা ছাত্রদলের মাসুদ রানা ছিলেন হামলার নেতৃত্বে। তার অধীনে ইরফান, আবু বক্কর, রবিউল ইসলাম, সৌরভ মিয়া ও তারেকসহ ২৫-৩০ জনের একটি দল ছিল। যারা গত ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে পরিকল্পিতভাবে ঢুকে পড়ার জন্য রায়েরবাগে অবস্থান নেয়।

হারুনের বর্ণনা মতে, ইরফান ও বক্কর আরও কয়েকটি দল নিয়ে এসে মাসুদ রানার সাথে যোগ দেয়। মাসুদ রানার নেতৃত্বে তারা রায়েরবাগ-শনির আখড়া এলাকায় অগ্নিসংযোগ এবং মসজিদের মাইকে গুজব ছড়ান, থানা আক্রমণ এবং পুলিশ হত্যায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।

ওই এলাকায় ট্যুরিস্ট পুলিশের এএসআই মোহাম্মদ মুক্তাদির ও ডিএমপির নায়েক গিয়াস উদ্দিনকে হত্যায় ছাত্রদল নেতার নেতৃত্বে এই গ্রুপটির ভূমিকা ছিল অভিযোগ তুলে হারুন বলেন, মাসুদ রানা রায়েরবাগ, শনির আখড়া এলাকায় নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের মধ্যে সমন্বয়ের কাজ করে।

হামলায় তারা কে কোন দায়িত্বে ছিলেন, তার বর্ণনায় হারুন বলেন, ইরফান ও মাসুদের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ পুলিশ সদস্যদের হত্যা ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। আবু বক্কর পুলিশ সদস্যকে মারপিট করে এবং মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। রবিউল হকিস্টিক দিয়ে পুলিশ সদস্যদের মারপিট করে এবং মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগে সহায়তা করে। সৌরভ মিয়া বাঁশের লাঠি দিয়ে পুলিশ সদস্যদের মারপিট করে। তারেক লাঠি দিয়ে পুলিশ সদস্যদের মারপিট করে এবং মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগে সহায়তা করে।

পুলিশের ওপর হামলা চালানোর জন্য তারা এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি করেছেন দাবি করে সাংবাদ সম্মেলনে ডিবির হারুন বলেন, “বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করেছে তারা। উদ্দেশ্য ছিল একটাই- পুলিশকে ডিমরালাইজড করা। যারা পুলিশকে হত্যা করেছে, সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে, মেট্রোরেলসহ সরকারি স্থাপনায় নাশকতা চালিয়েছে; যারা এসবের নেতৃত্ব দিয়েছে, অর্থ দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তারা যেখানেই থাকুক না কেন, কোনো ছাড় দেয়া হবে না।”

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ১৫ জুলাই সহিংসতা শুরু হয়। পরের দিনগুলোতে তা ক্রমেই বাড়তে থাকে। ১৮ জুন থেকে উত্তপ্ত হয়ে যাত্রাবাড়ী ও সংলগ্ন এলাকা শনির আখড়া ও রায়েরবাগ। আন্দোলনের মধ্যে পুড়িয়ে দেওয়া হয় মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজা। সহিংস আন্দোলনের কয়েকটি দিন ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।হতাহত হন অনেকে।

সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত ঢুকে সরকার পতনের চেষ্টায় সহিংসতা চালিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ভবন ও পুলিশের সম্পদ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ক্রমেই সহিংসতা হয়ে ওঠে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে সর্বাত্মক সমর্থনের ঘোষণা দেয় বিএনপি ও তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। শাটডাউনের দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। ছাত্রদের ঘোষিত কর্মসূচি না থাকলেও শাটডাউনের পরের কয়েকদিনও সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ।

এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলছেন, “এই আন্দোলনে সরকারি দলের সন্ত্রাসী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যৌথভাবে জনগণের টাকায় কেনা গুলি, টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড শিক্ষার্থীদেরকে লক্ষ্য করে নিক্ষেপের মাধ্যমে শত শত নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীকে গণহারে হত্যা এবং হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে আহত করেছে, যা দেশবাসীসহ বিশ্ববাসী অবলোকন করেছে।

“এই নির্মম অত্যাচারে দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ হতবাক ও ক্ষুদ্ধ হয়েছে এবং কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলও একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে নৈতিক সমর্থন দিয়েছে এবং সারা দেশে কর্মসূচিও পালন করেছে।”

কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েন এবং কোটা সংস্কারে আদালতের রায়ের পর গত রোববার থেকে আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা কমতে থাকে। বুধবার থেকে গাড়ির চাকা ঘুরছে, কাজের জন্য রাস্তায় নামছে মানুষ। আন্দোলনের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করছেন সরকারপ্রধান ও তার মন্ত্রীরা।

আন্দোলনের মধ্যে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া বিটিভি ভবন শুক্রবার পরিদর্শনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশের আনাচকানাচ থেকে সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন। আগের দিন আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেল পরির্দশনে গিয়ে আবেগাপ্লুত প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর কাছেই অগ্নিসন্ত্রাসীদের বিচার চেয়েছেন।

আন্দোলনে সমর্থন ও অর্থায়ন, সহিংসতায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ঢাকাসহ দেশজুড়ে গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিএনপির অনেক নেতাকর্মী এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেছেন, “সরকার নিজেদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ব্যর্থতা আড়াল করতে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে গ্রেপ্তার করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় দলের যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, বরিশালের জিয়াউদ্দিন সিকদার, নাটোরের রহিম নেওয়াজকে গ্রেপ্তার এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির গ্রেপ্তারকৃত সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন খোকনকে তিন দিন পর আদালতে তোলা হয়েছে।”

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.