× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

কুড়িগ্রামে বন্যা

নৌকা দেখলেই ছুটে আসছেন বানভাসি মানুষ, ত্রাণের আকুতি

ন্যাশনাল ট্রিবিউন প্রতিবেদক

০৬ জুলাই ২০২৪, ০৮:২৫ এএম । আপডেটঃ ০৬ জুলাই ২০২৪, ১০:০৬ এএম

নৌকা দেখলেই ত্রাণের আশায় ছুটে আসছেন বানভাসি মানুষ। গতকাল শুক্রবার বিকেলে নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নের চর কাপনায়—সংগৃহীত

উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে কুড়িগ্রামের ধরলা, তিস্তা নদী, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলায় ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তিন শতাধিক চরের দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

পানিবন্দী থাকায় চরের বাসিন্দারা কাজে যেতে পারছেন না। তাঁদের ঘরের খাবারও শেষ হয়ে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে চরগুলোতে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত ত্রাণ পাচ্ছেন না বন্যাদুর্গতরা। নৌকা দেখলেই ত্রাণের আশায় ছুটে আসছেন বানভাসি মানুষ।

আজ শনিবার দুপুর ১২টায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, কুড়িগ্রামের সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। জেলার প্রধান নদ-নদীগুলোর মধ্যে ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম সদর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৭১ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৬৫ সেন্টিমিটার ও হাতিয়া পয়েন্টে ৬৯ সেন্টিমিটার এবং দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তার পানি বাড়লেও বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গতকাল শুক্রবার ও আজ শনিবার নাগেশ্বরী, উলিপুর ও সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উজানের ঢলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। প্রতিদিন ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদের পানি বেড়ে নতুন নতুন চর ও বাড়িঘর ডুবে যাচ্ছে। বানভাসি মানুষের ঘরবাড়িতে কোথাও বুকসমান পানি, কোথাও গলাসমান পানি। তাঁদের কেউ কেউ স্থানীয় বিদ্যালয়, ঈদগাহ মাঠ, কেউ কেউ নৌকা, কলাগাছের ভেলা ও ঘরের মাচায় বাস করছেন।

অনেকের ঘরে চাল, ডাল ও তেল না থাকায় রান্না বন্ধ। অনেকের ঘরে চাল-ডাল থাকলেও চুলা পানিতে ডুবে থাকায় রান্না নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এমতাবস্থায় নৌকার ইঞ্জিনের শব্দ শুনলেই ত্রাণের আশায় ছুটে আসছেন মানুষ। সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম শুরু হলেও এখনো ৬০ শতাংশ মানুষ ত্রাণ পাননি।

অনেকের ঘরে চাল, ডাল ও তেল না থাকায় রান্না বন্ধ। অনেকের ঘরে চাল-ডাল থাকলেও চুলা পানিতে ডুবে থাকায় রান্না নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এমতাবস্থায় নৌকার ইঞ্জিনের শব্দ শুনলেই ত্রাণের আশায় ছুটে আসছেন মানুষ। সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম শুরু হলেও এখনো ৬০ শতাংশ মানুষ ত্রাণ পাননি।

একদিকে খাদ্যসংকট, অন্যদিকে দীর্ঘদিন বসতবাড়িতে পানি থাকায় বন্যাকবলিত মানুষ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। মানুষের পাশাপাশি গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।

কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন মো. মঞ্জুর এ মুর্শেদ বলেন, জেলায় বন্যাকবলিত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে ৭৩টি ইউনিয়নে একটি করে এবং প্রতি উপজেলা ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নিজস্ব দলসহ মোট ৮৩টি চিকিৎসা দল কাজ করছে। বন্যার্ত মানুষের দ্রুত সেবা নিশ্চিত করতে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।

গতকাল বিকেলে তথ্য সংগ্রহের কাজে নাগেশ্বরীর নুনখাওয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কাপনার চর ও আজ সকালে সাহেবের আলগার চরে গেলে চরের বানভাসি মানুষ নদীর পাড়ে এসে নৌকা ঘিরে ধরেন।

কাপনার চরের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় রাজমিস্ত্রি করে কোনোমতে ১১ জনের সংসার চলে। ঈদে বাড়িতে আসার পর বন্যায় আটকা পড়েন। এরপর ফিরে যেতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘বানের পানি যে এত বাড়বে, কল্পনাও করি নাই। পানি সামান্য কমার পর আবার বেড়ে চলছে। হাতে কোনো কর্ম নেই। ঘরে খাবার নেই। বউ-বাচ্চা নিয়ে কোনোমতে একবেলা খেয়ে না খেয়ে আছি। এখনো কোনো ত্রাণ পাইনি।’

সাহেবের আলগা ইউনিয়নের আইরমারীর চরের বাসিন্দা মাসুদ রানা বলেন, ‘সাত দিন থাকি ঘরত একবুক পানি। ছাওয়া-পোয়া নিয়ে পাশের স্কুল ঘরত উঠছি। এ্যাটাইও পানি উঠছে। সারা দিন চৌকির ওপর বসি থাকি। এল্যাও হামার এটে কাঈও ত্রাণ নিয়ে আসে নাই। সগাই ত্রাণের জন্যি সারা দিন নদীর ভিতি (দিকে) চায়া থাকে। নৌকা দেখলেই কলার ভেলা নিয়ে কাছত যায়। ত্রাণ না পায়া ফিরি আইসে। ভাই হামার এ্যাত্তি কী ত্রাণ দিবের নয়?’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ সাংবাদিকদের বলেন, জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ বরাদ্দ আছে। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় চেয়ারম্যানদের সঙ্গে সমন্বয় করে ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত ২৯১ মেট্রিক টন চাল, ২১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ও স্থানীয়ভাবে ১৫ হাজার ৩২০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। যেসব চরে ত্রাণ পৌঁছায়নি, সেখানে দ্রুত পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে।

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.