ছবি: সংগৃহীত
গ্রাহক হয়রানি ও দালালদের মাধ্যমে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ যাচাইয়ে কুষ্টিয়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ছদ্মবেশে অভিযানে গিয়েছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এনফোর্সমেন্ট টিমের সদস্যরা। অভিযানে পাসপোর্ট অফিসে চরম অব্যবস্থাপনার সত্যতা পেয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা। বুধবার (২৬ জুন) দুদকের কুষ্টিয়া কার্যালয়ের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট থেকে এ অভিযান চালানো হয়। দুদকের সহকারী পরিচালক নীল কমল পালের সমন্বয়ে গঠিত টিম এ অভিযান চালায়। সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কুষ্টিয়া পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে গণমাধ্যম নিউজ প্রকাশিত হয়। নিউজের ফলে বিভিন্ন ভুক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে পাসপোর্ট অফিসে অভিযান চালিয়েছে দুদক।
কুষ্টিয়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দুর্নীতি-অনিয়মের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে গত ১৯ মার্চ পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের কাছে হেনস্তার শিকার হন এক সাংবাদিক। এ সময় প্রায় এক ঘণ্টা তাকে আটকে রেখে হেনস্তার পাশাপাশি মানসিক নির্যাতন করা হয়। পাসপোর্ট অফিসের রেকর্ড কিপার হাসানুজ্জামান ওরফে হাসানের নেতৃত্বে কয়েকজন আনসার সদস্য ওই সাংবাদিককে নানান হুমকি-ধমকি দেন এবং জোরপূর্বক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেনের অফিস কক্ষে আটকে রাখেন। পরে কুষ্টিয়ার সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা তাকে উদ্ধার করেন।
দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম জানিয়েছেন, কুষ্টিয়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে গ্রাহক হয়রানি ও দালালদের মাধ্যমে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ আসে দুদকে। অভিযোগের পর বুধবার সেখানে অভিযান চালানো হয়। দুদকের সদস্যরা গ্রাহক হয়ে ওই অফিসের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। একইসঙ্গে সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে তথ্য নেন। অভিযানের সময় সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আনসার সদস্যদের অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেবাপ্রার্থীরা যেন কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে পরামর্শ দেওয়া হয়। স্থানীয় পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালককে সেবার মানোন্নয়ন ও গ্রাহক ভোগান্তি কমানোর জন্য উদ্যোগ গ্রহণ এবং পাসপোর্ট অফিসের আশপাশে অবস্থিত কম্পিউটার দোকানকেন্দ্রিক গড়ে ওঠা দালালচক্র নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত তদারকির পরামর্শও দেওয়া হয়। এ বিষয়ে কমিশনে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়ার সহকারী পরিচালক শহীদুল ইসলাম মোড়লের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে কার্যালয়টিতে কর্মরত কয়েকজন বলেন, গ্রাহক হয়রানি ও দালালদের মাধ্যমে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে পাসপোর্ট অফিসে অভিযান পরিচালনা করা হয়। আমরা অনিয়মের চিত্র দেখতে পেয়েছি। এখানে মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অনিয়ম রোধে সেবাপ্রত্যাশীদের সচেতন করেছি, পাসপোর্ট অফিসের দায়িত্বরত সহকারী পরিচালককে অনিয়ম বন্ধে পরামর্শ দিয়েছি, তিনি যেন কার্যকর ভূমিকা রাখেন। সহকারী পরিচালক আশ্বস্ত করেছেন তিনি অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে কঠোর হবেন।
কুষ্টিয়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে কল কেটে দেন। পরে একধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
কুষ্টিয়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে প্রতিদিনই কমবেশি বিভিন্ন বয়সী মানুষের আনাগোনা থাকে। তবে সেবা নিতে আসা লোকজনের অভিযোগ, কুষ্টিয়া পাসপোর্ট অফিসে দালাল ছাড়া সেবা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে সরাসরি গেলে সেবা মেলে না। কিন্তু দালালদের অতিরিক্ত টাকা দিলেই দ্রুত মিলে কাঙ্ক্ষিত পাসপোর্ট পাওয়ার সেবা। আর অতিরিক্ত টাকা না দিলে বা দালাল না ধরলে আবেদন জমা দেওয়া থেকে শুরু করে পাসপোর্ট হাতে পাওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
বিষয় : কুষ্টিয়া পাসপোর্ট অফিস অনিয়ম দুদক
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh