সংগৃহীত
নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী আবদুর রহিমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
গত বুধবার গাজীপুরের কালিয়াকৈর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির গহিন বনে মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা দুটি ড্রাম থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল অস্ত্র-বিস্ফোরক।
সিটিটিসি বলছে, অর্থের বিনিময়ে জঙ্গিদের অস্ত্র সরবরাহ করে আসছিলেন রহিম।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে আজ শুক্রবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এতে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জামাতুল আনসারের মাস্টারমাইন্ড ও সংগঠনের প্রধান শামিন মাহফুজকে গত বছরের জুনে গ্রেপ্তারের পর জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র-গুলির উৎস, অর্থায়ন সম্পর্কে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
এর আগে একই বছরের ৮ জানুয়ারি শামিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মো. ইয়াছিন এবং অস্ত্র সরবরাহকারী কবির আহাম্মদকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে অস্ত্র-গুলি সরবরাহকারী হিসেবে পাহাড়ের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) পাশাপাশি স্থানীয় আবদুর রহিমের নামও আসে।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, শামিন মাহফুজ কক্সবাজার ও বান্দরবানে নওমুসলিমদের নিয়ে কাজ করার আড়ালে জামাতুল আনসার গড়ে তোলেন। তখন স্থানীয় অস্ত্র সরবরাহকারী কবির আহাম্মদ ও আবদুর রহিমকে তিনি সংগঠনে যুক্ত হওয়ার দাওয়াত দেন। তারা সংগঠনের হয়ে কাজ করতে রাজি হন এবং অস্ত্র-গুলি সরবরাহ শুরু করেন।
এর মধ্যে শামিন ও কবির গ্রেপ্তার এবং পাহাড়ে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হলে আবদুর রহিম ও তার সহযোগীরা আত্মগোপনে যায়। দীর্ঘ চেষ্টার পর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার সিটিটিসির একটি দল গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অভিযান চালায়। এ সময় রহিমকে গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নাইক্ষ্যংছড়িতে অস্ত্র উদ্ধারে যায় সিটিটিসি।
মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা দুটি ড্রামের ভেতর পাওয়া যায় একটি ৭.৬৫ এমএম বিদেশি পিস্তল, চারটি দেশি বন্দুক, তিনটি দেশি বারুদভর্তি অস্ত্র, একটি দেশি ওয়ান শুটারগান, দেশি ধারালো অস্ত্র, ১৬ রাউন্ড গুলি, ১১টি কার্তুজ, ২৪টি শর্টগানের খোসা, দুটি বাইনোকুলার, একটি গ্যাস মাস্ক, মোবাইল সিগন্যাল বুস্টার, দুটি ওয়াকিটকি, এসিডসদৃশ ছয় লিটার তরল পদার্থ, চার্জার লাইট, রিচার্জেবল ব্যাটারি, ৬০ ফুট ইলেকট্রিক তার, তারসহ অ্যান্টেনা, হাতুড়ি, করাত, ফ্রেমসহ হেক্সো ব্লেড, চারটি ইলেকট্রিক বাল্ব ও হোল্ডার এবং একটি ত্রিপল। এসব অস্ত্র-গুলি জামাতুল আনসারকে সরবরাহের জন্য রাখা হয়েছিল।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, আবদুর রহিম ২০১৯ সালের দিকে ‘রহিম ডাকাত’ গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়ে রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
তার বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র, ডাকাতি, অপহরণ, বনভূমি ধ্বংসসহ বিভিন্ন অভিযোগে নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের রামু থানায় ১২টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, পাহাড়ে সশস্ত্র প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া সবার তালিকা পেয়েছি। তাদের প্রায় সবাই গ্রেপ্তার হয়েছে। এমনকি যারা প্রশিক্ষণের দাওয়াত পেয়েছেন, তাদেরও নাম পেয়েছি। তাদের অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে জামাতুল আনসারের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কেউ নেই। তাদের নতুন করে সংগঠিত হওয়ার কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।
পাহাড়ে আইইডির সরঞ্জাম সরবরাহের নেপথ্যে কি রহিম? জানতে চাইলে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, তার কাছে যেহেতু রাসায়নিক পাওয়া গেছে এবং প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে আইইডি প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়েও তথ্য পেয়েছি, তাই আমরা এ বিষয়ে সতর্ক আছি।
তিনি আর কোথায় কোথায় রাসায়নিক সরবরাহ করেছেন, সে বিষয়ে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। দেশে বা দেশের বাইরে তার কোনো নেটওয়ার্ক আছে কিনা, তাও জানার চেষ্টা করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh