ছবি: সংগৃহীত
বগুড়ায় অন্তত ৬ দশক আগ থেকে শিল্প-কারখানার প্রসার। এখানকার উৎপাদিত কৃষি যন্ত্রাংশসহ বিভিন্ন পণ্য যে শুধু সারাদেশে যায় তা নয়। বিদেশেও রপ্তানি হয় নিয়মিত। প্রতিবছর জেলা থেকে হাজার কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন হয়। তবে শিল্পমালিকদের আক্ষেপ জেলায় গড়ে ওঠেনি কোনো শিল্পপার্ক। ব্যবসার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)-এর পাশাপাশি বৃহৎ পরিসরে আরেকটি বিশেষায়িত শিল্প পার্ক করার কথা। এই পরিকল্পনা সম্পন্ন হওয়ার কথা আরও ১০ বছর আগে। কিন্তু প্রকল্পটি আজও আলোর মুখ দেখেনি।
তবে বিসিক বলছে, নতুন করে প্রকল্পটির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। প্রকল্পটি সরকারের সবুজ তালিকায় উঠেছে। নতুন শিল্প পার্ক হলে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। সেখান থেকে সরকার আরও অন্তত হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পাবে। ১৯৬৪ সালে বগুড়ার ফুলবাড়ি এলাকায় সাড়ে ১৪ একর জমিতে প্রথম গড়ে তোলা হয় বিসিক শিল্প নগরী। ওইসময় সবগুলো প্লটই বিক্রি হয়ে যায়। এরপর চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮০ সালে দ্বিতীয় দফায় আরও প্রায় ১৫ একর জমি সম্প্রসারণ করা হলে ওইবারও সব প্লট বরাদ্দ হয়ে যায়।
পরবর্তীতে স্থান সংকটসহ নানা কারণে ফুলবাড়ি এলাকার বিসিকের জায়গা বাড়ানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু উদ্যোক্তাদের চাহিদার প্রেক্ষাপটে জেলায় দ্বিতীয় শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা উঠে আসে। বর্তমানে বগুড়ায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনে (বিসিক) বছরে অন্তত হাজার কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন হয়। এ থেকে গত বছর সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১৬৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৬ সালে প্রকাশিত অর্থনৈতিক শুমারি প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, স্বাধীনতার আগে বগুড়ায় মাত্র ১ হাজার ৫৪২টি শিল্প প্রতিষ্ঠান ছিল। আর ২০১৫ সালের মধ্যে জেলায় কুটির, মাঝারি এবং বৃহৎ ধরনের কলকারখানার সংখ্যা ১ লাখ ২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
জেলায় পাঁচ ধরনের শিল্প-কলকারখানায় ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৭৫১ নারী-পুরুষ স্থায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজের সুযোগ পেয়েছেন। ২০০০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বগুড়ায় জুট মিল, পেপার মিল, রাইস ব্র্যান অয়েল মিল, টাইলস্ কারখানা, ওষুধ কারখানা, সেচযন্ত্র প্রস্তুতকারক ইন্ডাস্ট্রি এবং যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারক লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেটাল ইন্ডাস্ট্রির মতো শিল্প গড়ে উঠেছে বিচ্ছিন্নভাবে। বিচ্ছিন্নভাবে কলকারখানা গড়ে উঠায় যেমন কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে। তেমনি পরিবেশের ভারসাম্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। মূলত এটিই দ্বিতীয় শিল্পপার্ক গঠনের প্রধান উদ্দেশ্য। এই দ্বিতীয় শিল্প পার্ক হবে পরিবেশবান্ধব। এখানে নিজস্ব বিদ্যুৎ স্টেশন, ফায়ার সার্ভিসের ব্যবস্থা থাকবে। গ্যাসলাইন ও পুকুর থাকবে আধুনিক শিল্প পার্কে।
বগুড়ার বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল মালেক বলেন, আমরা যা করছি নিজেদের উদ্যোগেই করছি। শিল্পপার্কে স্থাপিতের পাশাপাশি আমাদের আরও কিছু সুবিধা দরকার। আমাদের আহ্বান একটাই আমাদের ঋণের সুদের পরিমাণ কমানো। না হলে আমাদের পক্ষে এই সুদের হারে ক্যাপিটাল মেশিনারিজ স্থাপন সম্ভব না। জেলার বিসিক সূত্র বলছে, বগুড়া বিসিক দ্বিতীয় শিল্প পার্ক স্থাপনের কাজ শুরু করে ২০১৪ সালে। শহরের শাকপালা এলাকায় ১৫০ একর জমিতে এই পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই এলাকা মৌজা রেট বেশি এবং নীচু হওয়ার কারণে তা বাতিল করে বিসিক। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে বগুড়ার শহরের পশ্চিমে শাজাহানপুর উপজেলায় ৩০০ একর জমিতে দ্বিতীয় শিল্প পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এখানে ১ হাজার প্লট বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হবে জানানো হয়। এখানে ১৫৩ একর প্রস্তাব করা আছে। কোনো কারণে বড় প্রকল্প না হলে তখন ১৫৩ একরের এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। এটির ডিপিপি চূড়ান্ত করা আছে বলে বিসিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বগুড়া বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক একেএম মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘দ্বিতীয় শিল্পনগরী একনেকে উচ্চ অগ্রাধিকার পর্যায়ে রয়েছে। এর আগে ভিসিবিলিটি স্টাডি হয়েছিল। পরবর্তীতে এটা আরও ডায়নামিক করে গড়ে তোলার কথা রয়েছে। এ বিষয়ে আরও একটি ফিল্ড লেবেলের স্টাডি হবে। দ্বিতীয় শিল্পপার্কে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান, পরিবেশের দূষণ হ্রাসের লক্ষ্যে সেন্ট্রাল ইটিপি, কৃষি জমি রক্ষায় সব ধরনের শিল্পকারখানাকে এখানে স্থাপনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বলছে, বগুড়া শিল্প নগরী হিসেবে পরিচিতি পায় ৬০ এর দশকে। তখন এখানে কটন স্পিনিং মিল, সিগারেটের কারখানা, ম্যাচ ফ্যাক্টরি ও সিরামিকসহ বড় অনেক কলকারখানা গড়ে ওঠে। সেখানে এখন বগুড়া শহরের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অন্তত দেড় হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কল-কারখানা যুক্ত হয়েছে। এর বাইরে বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলায় আবাদি জমিতেও কলকারখানা হচ্ছে।
বগুড়ার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদুর রহমান মিলন মনে করেন শুধু বিসিক উত্তরাঞ্চলের জন্য আবশ্যক নয়। তার ভাষ্য, এখন বিসিক গঠন করার চেয়ে প্রয়োজন শিল্পাঞ্চল স্থাপন। যার ফলে উদ্যোক্তা তৈরি হবে। বগুড়ায় পাকিস্তান আমলেই শিল্পনগরীর মর্যাদা পেয়েছিল। কিন্তু সেই অর্থে জেলায় উদ্যোক্তা বা বৃহৎ শিল্প গড়ে উঠেনি। মাসুদুর রহমান বলেন, বগুড়ায় দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরী গঠনের কথা চলছে, কিন্তু দেখতে হবে এখানে কাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পদের নাকি বৃহৎ শিল্পকারখানাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। বর্তমান সময়ে আমাদের বেশি প্রয়োজন সব ফ্যাক্টরিকে এক জায়গায় একীভূত করা। কারণ আমাদের কৃষি জমির পরিমাণ কমছে। মোটাদাগে বলতে চাই আমাদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশন হচ্ছে না। সেটি করতে হবে।
বিষয় : বগুড়া বিশেষায়িত শিল্পপার্ক
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh