× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

যেভাবে উদ্ধার হলেন বান্দরবানের অপহৃত সেই ব্যাংক ম্যানেজার

ন্যাশনাল ট্রিবিউন প্রতিবেদক

০৫ এপ্রিল ২০২৪, ২৩:৪৬ পিএম । আপডেটঃ ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ২৩:৪৭ পিএম

ছবি: সংগৃহীত

বান্দরবানের রুমা উপজেলায় সোনালী ব্যাংকের শাখার অপহৃত ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গত ২ এপ্রিল বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলায় তারাবির নামাজ চলাকালে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফন্ট (কেএনএফ) হামলা চালিয়ে ব্যাংকের ভোল্টের চাবি না পেয়ে ম্যানেজারকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। অপহরণের ৪৮ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) র‍্যাবের মধ্যস্থতায় ব্যাংক ম্যানেজারকে উদ্ধার করা হয়। জানা যায়, অপহরপণের পর তাকে দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে যায় কেএনএফের সদস্যরা।

শুক্রবার র‍্যাব সদর দপ্তরের প্রেস ব্রিফিংয়ে লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আলী মঈন ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ব্যাংক থেকে ম্যানেজারকে বের করে চোখ বেঁধে টানা দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা কোনো এক পাহাড়ের ঝিরিপথে হাঁটিয়ে নিয়ে যায় কেএনএফ সন্ত্রাসীরা। এ সময় তার সঙ্গে ১০/১২ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী ছিল। এরপর পথে তারা ম্যানেজারের চোখের বাঁধন খুলে দেয়। তাকে কিছু সময়ের জন্য বিশ্রামের সুযোগ দেয়। এরপর আবার হাঁটা শুরু করে। এক পর্যায়ে রাত আনুমানিক ৩টা ৩০ মিনিটের দিকে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে ম্যানেজারকে ঘুমানোর সুযোগ দেওয়া হয়। তবে ম্যানেজার যাতে পালিয়ে যেতে না পারেন সেজন্য তারা পাহারা দেয়। 

কমান্ডার মঈন বলেন, ঘটনার পরদিন ৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ব্যাংক ম্যানেজারকে সামান্য নাস্তা দিয়ে আবারও হাঁটিয়ে পাহাড়ি ঝিরিপথ দিয়ে আরেক পাহাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে প্রায় ৩০/৩৫ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী অবস্থান করছিল। এ সময় তারা কলার পাতায় করে ম্যানেজারকে গরম ভাত, ডাল ও ডিম ভাজি খেতে দেয়। পরে সেখান থেকে হাঁটিয়ে অন্য জায়গায় নিয়ে যায়। পরে ম্যানেজারকে ১৫/২০ মিনিট বিশ্রামের সুযোগ দেওয়া হয় । 
সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তারা ধাপে ধাপে বিশ্রাম এবং হাঁটার পর ভিন্ন এক জায়গায় গিয়ে পৌঁছায়। সেখানে তারা ম্যানেজারকে আবারও গরম ভাত, ডাল ও ডিম খেতে দেয়। 

র‍্যাব মুখপাত্র বলেন, পুরোটা সময় নিজেদের মধ্যে বম ভাষায় কথা বললেও ম্যানেজারের সঙ্গে শুদ্ধ বাংলা ভাষায় কথাবার্তা বলতো কেএনএফ সদস্যরা। সবসময় তাকে ২/৩ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী ঘিরে রাখতো এবং ১২/১৩ জন তার আশপাশে অবস্থান করতো। এরপর রাত ৮টার দিকে সন্ত্রাসীরা ম্যানেজারকে একটি টং ঘরে নিয়ে যায় এবং সেখানে তাকে নুডলস খেতে দেয়, তবে ম্যানেজার খাননি। ওই রাতে টং ঘরে ম্যানেজারের সঙ্গে পাহারারত ৫ জন সন্ত্রাসী ঘুমায়।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ৩ এপ্রিল রাত আনুমানিক ৮টা থেকে পরদিন বিকেল ৩টা পর্যন্ত কেএনএফ সন্ত্রাসীরা প্রায় একই জায়গায় ছিল। এরপর বিকেল ৩টার পর প্রায় এক ঘণ্টা হেঁটে তাকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখান থেকে এক ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে ব্যাংক ম্যানেজারকে মোটরসাইকেলে করে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। অপহরণের পর সন্ত্রাসীরা ম্যানেজারকে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দেয়। পাশাপাশি কোনো প্রশাসনিক বা আইনি সহায়তা যাতে না নেয় সে বিষয়ে ম্যানেজারের পরিবারকে সর্তক করা হয়। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হওয়ায় ওই সূত্র ধরে র‍্যাব তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তার অবস্থান শনাক্ত করে। পরে র‍্যাবের মধ্যস্থতায় ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে বান্দরবানের রুমা বাজার ও বেথেলপাড়া মধ্যবর্তী কোনো এক স্থান থেকে উদ্ধার করা হয় বলে জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক।

র‍্যাব এবং অপহৃত ম্যানেজার নেজামের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, ম্যানেজার নেজাম চাবি দিতে অস্বীকৃতি জানালে, সন্ত্রাসীরা ভোল্ট ভাঙতে চেষ্টা করে। ম্যানেজার তাদের জানান, ভল্টে আঘাত করলে সেন্সরের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক বিষয়টি সোনালী ব্যাংকের হেড অফিস জেনে যাবে। তখন তারা ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং পাহাড়ি এলাকায় পৌঁছানোর পর তার চোখ বেঁধে ফেলে। এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ব্যাংক ম্যানেজারের স্ত্রী মাইসুরা ইসফাত এবং তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা রুমা উপজেলায় অবস্থান করছিলেন। ব্যাংক ম্যানেজারকে উদ্ধারের পর তাকে র‍্যাবের একটি গাড়িতে চড়িয়ে রাত সোয়া ৯টার দিকে নিয়ে আসা হয় বান্দরবান জেলা সদরের মেঘলা এলাকায় অবস্থিত র‍্যাব ১৫ কার্যালয়ে।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আমরা এখানে কিছু কৌশল অবলম্বন করেছি, যেগুলো এখনও চলমান আছে। তারা গত তিন-চারদিনে বেশ কয়েকটি অপরাধ সংঘটিত করেছে। তারা একই সময়ে অন্য ব্যাংকে এবং পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়েছে। তাদের বেশকিছু গোষ্ঠী আছে, যারা একসঙ্গে হামলা চালায়। এমন অবস্থায় আজ থেকেই সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হবে।

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.