× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

৪৯ বছর পর মাদারীপুরে মাকে খুঁজে পেলেন নরওয়ের এলিজাবেথ

ন্যাশনাল ট্রিবিউন রিপোর্ট

৩১ মার্চ ২০২৪, ০৪:৪৫ এএম । আপডেটঃ ৩১ মার্চ ২০২৪, ০৪:৪৬ এএম

ছবি: সংগৃহীত

সালটা ১৯৭৫। ১৩ বছর বয়সী কিশোরী ফিরোজা বেগমের বিয়ে হয়ে যায় তত দিনে। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পাঁচ মাস পরেই স্বামীকে হারান। নিজের বাবাও মারা যান। বাবা আর স্বামী হারিয়ে অভাব আর দারিদ্র্যের চরম বাস্তবতার মুখে পড়েন ফিরোজা। 

এসবের মধ্যেই ১৯৭৫ সালের ১৫ জুলাই ফিরোজার কোলজুড়ে আসে এক কন্যাসন্তান। নামে রাখেন মৌসুমী। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে দুঃখ-কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করেন ফিরোজা। কিন্তু পারেননি তিনি।

অভাবের তাড়না সইতে না পেরে একই বছরের ৩০ আগস্ট ঢাকার মোহাম্মদপুরে সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত শিশুসদনে বিনা শর্তে নিজের সন্তানকে রেখে যান ফিরোজা বেগম। মৌসুমীর বয়স যখন চার মাস, তখন নরওয়ের এক নিঃসন্তান দম্পতি ঢাকায় এসে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে শিশুটিকে দত্তক নেন। 

পরে নতুন বাবা-মায়ের সঙ্গে মৌসুমী পাড়ি জমায় নরওয়েতে। মৌসুমির নাম দেওয়া হয় এলিজাবেথ রয়েড। ফিরোজা বেগমের শিশুসদনে রেখে যাওয়া সেই সন্তানের বয়স যখন ২২ বছর, তখন তিনি জানতে পারেন তাঁর মা বাংলাদেশি। 

তবে এ বিষয়ে আর কোনো তথ্য ছিল না তাঁর কাছে। মাকে খুঁজে পাওয়ার তৃষ্ণায় কেটে গেছে বহু বছর। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে অবশেষে এলিজাবেথ ফিরোজা সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমেই জানতে পেরেছেন তাঁর গর্ভধারিণী মা ফিরোজা বেগমের সন্ধান।

৪৯ বছরের অপেক্ষা শেষ হলো গত বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ)। মা-মেয়ের দেখা হলো মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার মাদবরেরচর ইউনিয়নের পোদ্দারচর এলাকার ফিরোজা বেগমের বাড়িতে। এ সময় মাকে কাছে পেয়ে এলিজাবেথ ফিরোজা জড়িয়ে ধরেছেন, কান্নায় আবেগে আপ্লুত হয়েছেন মা-মেয়ে। এলিজাবেথ বাংলা ভাষা না জানায় কেউ কারও মুখের ভাষা বুঝতে না পারলেও আবেগ-অনুভূতি দিয়েই ভাবের আদান-প্রদান করেন তাঁরা। মাকে কাছে পেয়ে বারবার মুখে মুখ মেলান আর দুজনের চেহারার মিল খুঁজছিলেন এলিজাবেথ। 

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মায়ের সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা সময় কাটানোর পর বিকেলেই স্বামী হেনরিক ফাজালসেটের সঙ্গে ঢাকায় ফিরে যান এলিজাবেথ।

ফিরোজা বেগম বলেন, মায়ের জন্য নরওয়ে থেকে নতুন জামা-পায়জামা, কসমেটিকসসহ বিভিন্ন উপহার নিয়ে এসেছেন তাঁর মেয়ে এলিজাবেথ ফিরোজা ওরফে মৌসুমী। বাড়িতে এসে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব বাজার করে দিয়েছেন মেয়ে ও জামাতা। আর নরওয়ে থেকে তাঁর মাকে যেন দেখতে পারেন, এ জন্য কিনে দিয়েছেন একটি স্মার্টফোন।

৫০ বছর পরে সেই ছোট্ট মৌসুমীকে এলিজাবেথ রূপে দেখতে পাবেন, এমনটা স্বপ্নেও ভাবেননি ষাটোর্ধ্ব ফিরোজা বেগম। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় তিনি বলেন, ‘আমার মাইয়াডা যে বাইচা আছে, এত বড় হইছে, তাই তো কোনো দিন চিন্তা করি নাই। আমার মাইয়াডা ফিরা আইছে, বুকে জড়াইয়া ধরতে পারছি, এইডা ভাবলেই আমার কলিজা ছিঁড়া যাচ্ছে। আমার বুকের ধনরে আল্লাহ তুমি ফিরাইয়া দিছ, তোমার কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া।’

ফিরোজা বেগম শনিবার বিকেলে ঢাকায় গেছেন। রোববার দুপুরে তাঁর মেয়ে এলিজাবেথের সঙ্গে দেখা হবে। এলিজাবেথ তাঁকে শিগগিরই নরওয়েতে নিয়ে যাবেন বলে জানালেন।

শিবচরের মাদবরচর ইউনিয়নের পোদ্দারচর গ্রামের মৃত বছির সরদারের স্ত্রী ফিরোজা বেগম। স্বামী মারা যাওয়ার কয়েক বছর পরে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তবে সেই ঘরে কোনো সন্তান নেই ফিরোজা বেগমের। আগে ঢাকায় বসবাস করলেও এখন স্বামীসহ পোদ্দারচরে বসবাস করছেন।

মাদবরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক বলেন, ‘মা আর মেয়ের একত্র হওয়াটা যেন এখনো চোখে ভাসছে। তাদের গল্পটা হৃদয় জুড়িয়ে দিয়েছে। ৪৯ বছর পর মেয়ে তাঁর মাকে ফিরে পেয়েছে। মেয়ে মায়ের টানে সেই সুদূর নরওয়ে থেকে আমাদের এলাকায় এসেছে। সত্যিই সবকিছু রূপকথার গল্পের মতো মনে হচ্ছে। তবে এটিই সত্যি।’

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.