× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

চাকরি দেওয়ার নামে যুবকদের থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র

ন্যাশনাল ট্রিবিউন রিপোর্ট

১৫ মার্চ ২০২৪, ২৩:৪২ পিএম । আপডেটঃ ১৫ মার্চ ২০২৪, ২৩:৪৩ পিএম

ছবি: সংগৃহীত

সাভারের আশুলিয়ায় অসহায় ও নিরীহ বেকার যুবকদের টার্গেট করে চাকরি দেওয়ার নামে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রতারক চক্র। শুধু তা-ই নয়, আবাসন সুবিধা দেওয়ার নামে বেকার এসব যুবককে আটকে রেখে নির্যাতনেরও অভিযোগ আছে নামসর্বস্ব ভুয়া এই প্রতারক কোম্পানির বিরুদ্ধে। থানায় অভিযোগ করেও সুরাহা না পেয়ে অগত্যা ভুক্তভোগী ও তাদের স্বজনরা বিভিন্ন সময় প্রতারক প্রতিষ্ঠানে ধরনা দিয়ে লাঞ্ছিত ও মারধরের শিকার হচ্ছেন।

এমনই এক ভুক্তভোগী মানিকগঞ্জ জেলার সদর থানার পূর্ব আঁটি গ্রামের ইউছুব দেওয়ানের ছেলে জাহিদ হাসান। তার খালাতো ভাই একই এলাকার মারুফ দেওয়ানসহ এ রকম শত শত ভুক্তভোগীর সন্ধান মিলেছে অনুসন্ধানে। এই প্রতারক চক্র ইতোপূর্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে আটক হলেও নাম ও এলাকা বদলে তারা নতুন নামে শুরু করে প্রতারণা। 

ভুক্তভোগী মানিকগঞ্জের জাহিদ হাসান বলেন, ‘কয়েক মাস আগে জামগড়া এলাকায় খালাতো ভাই মারুফ দেওয়ান ও আমি ৭০ হাজার টাকা চাকরির জন্য দিই। আমাদের মাসিক মোটা অঙ্কের টাকা বেতন দেওয়া হবে এমন প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেন কোম্পানির ম্যানেজার তরিকুল ইসলাম, লিডার রাকিব হাসান জুয়েল ও বাপ্পীসহ বেশ কয়েকজন প্রতারক। এরপর আমাদের একটি মেসে ৪০-৫০ জনকে গাদাগাদি করে থাকতে দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের কোনো বেতন ও কাজ না দিয়ে সারা দিন অহেতুক বিষয়ে ট্রেনিংয়ের নামে সময় পার করতে থাকেন তারা। পরে আমি বেতনের জন্য তাগাদা দিলে আমাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে হুমকি দেন ও লাঞ্ছিত করেন। সাদা কাগজে জোরপূর্বক আমার টিপসই রেখে দেন তারা। পরে সেখান থেকে পালিয়ে মানিকগঞ্জ আমার বাড়িতে চলে আসি। পরে আশুলিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেও এই প্রতারণার কোনো সুরাহা পাইনি।’ 

বরিশালের উজিরপুরের নাসির ব্যাপারীর ছেলে নাদিম হোসেন বলেন, ‘গত মাসে আমার বন্ধু বাপ্পীর মাধ্যমে বিএসএন গ্লোবাল লিমিটেড নামে আশুলিয়ার পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার একটা কোম্পানিতে চাকরির জন্য আসি। তখন আমাকে ভালো বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে কোম্পানির ম্যানেজার তরিকুল ও রাকিবসহ কয়েকজন ৪০ হাজার টাকা নেন। আমার বন্ধু বাপ্পীও ৪০ হাজার টাকা দিয়েছে। কিন্তু চাকরি না দিয়ে আমাদের উল্টাপাল্টা ট্রেনিং করিয়ে তারা শুধু সময় পার করতে থাকেন। বেতন আর কাজের কথা বললে আরও লোক নিয়ে আসতে বলেন। পরে আমি প্রতিবাদ করলে আমাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখান ও লাঞ্ছিত করেন তারা। একপর্যায়ে সেখান থেকে পালিয়ে ঢাকার পল্টনে আমার মামার বাসায় চলে আসি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আশুলিয়ার পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার একটি ফ্ল্যাটে আমাদের ১৬-১৭ জনকে আটকে রেখে নামমাত্র খাবার দেওয়া হতো। কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের হুমকি দেওয়া হতো। অনেকেই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আমার মতো পালিয়ে গেছেন।’।’

ভুক্তভোগী প্রতারিত নাদিমের মামা ঢাকা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমার ভাগিনা ও তার বন্ধুকে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিএসএন গ্লোবাল নামের একটি নামসর্বস্ব কোম্পানি। পরে ওদের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সেখান থেকে কৌশলে ঢাকায় আমার বাসায় পালিয়ে আসে নাদিম। এরপর গত সপ্তাহে আশুলিয়ার পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় ওই প্রতিষ্ঠানে আমিসহ গেলে তারা টাকা পরিশোধ করবে বলে নানা টালবাহানা করে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন নামসর্বস্ব হারবাল প্রোডাক্ট দেখিয়ে চাকরি দেওয়ার নামে এই প্রতিষ্ঠানটি অসহায় যুবকদের সর্বস্বান্ত করছে। এই যুগে এসেও এ রকম প্রতারক প্রতিষ্ঠান কীভাবে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে, তা আমার বোধগম্য নয়। এখনই এদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কখনো ডিএক্সএন আবার কখনো বিএসএনসহ বিভিন্ন নাম ব্যবহার করে অসহায় ও নিরীহ যুবকদের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। কয়েক মাস এক এলাকায় অবস্থান করার পর তাদের প্রতারণা জানাজানি হয়ে গেলে ও অফিসে ভুক্তভোগীরা আসতে শুরু করলে দ্রুত স্থান পরিবর্তন করে তারা। সঙ্গে পাল্টে ফেলে প্রতিষ্ঠানের নামও। 

কোনো বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ও নাম মাত্র ভুয়া প্রোডাক্ট দেখিয়ে ট্রেনিংয়ের নামে অসহায় যুবকদের ভর্তি করে টাকা আত্মসাৎ করাই তাদের কাজ। স্থানীয় প্রভাবশালী বাড়ির মালিকদের বেশি ভাড়ার লোভ দেখিয়ে ফ্লোর ভাড়া নেয় চক্রটি। এসব ঘটনায় ভুক্তভোগীরা পরে এই প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করলে তাদের হতে হয় লাঞ্ছিত। ঘটে অপ্রীতিকর বাগবিতণ্ডা এবং মারামারির মতো ঘটনাও।।

প্রায় এক সপ্তাহ আগে আশুলিয়ার ডেণ্ডাবর এলাকায় মো. ইদ্রিসের বাড়ির দোতলায় বিএসএন গ্লোবাল লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পেয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা গেলে তাদের প্রথমে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন প্রতিষ্ঠানের লিডার রাকিবসহ কয়েকজন। এ সময় ভুয়া প্রতিষ্ঠানের কথা জানতে পেরে সেখানে আরও ভুক্তভোগী ও তাদের স্থানীয় লোকজন জড়ো হলে ম্যানেজার তরিকুল কৌশলে পালিয়ে যান। এ সময় প্রতারক কোম্পানির পক্ষে ভবন মালিক ইদ্রিস ও তার ছেলে রাকিবসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালীর রোষানলে পড়েন তারা। 

পরে প্রতারক কোম্পানির সত্যতা পেয়ে নিজেরাই তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার কথা জানান ভবন মালিক ও তার ছেলেরা (ভিডিও বক্তব্য আছে)। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা প্রতারক প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে আশুলিয়া থানাকে অবহিত করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ ঘটনার পর ভুক্তভোগীদের টাকা লেনদেনসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে প্রতারক কোম্পানির লোকজন স্থানীয় রিয়াজ নামে এক যুবকের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়লে ঘটে মারামারির ঘটনা। এতে কোম্পানির ম্যানেজার তরিকুল, লিডার রাকিব হাসান, ভবন মালিকের ছেলে রাকিব, স্থানীয় যুবক রিয়াজ ও গাউছসহ অন্তত ৮-১০ জন আহত হন। পরে তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক সাংবাদিক বলেন, ‘প্রতারণা করে মানুষের কাছে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পেয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য আমরা কয়েকজন সাংবাদিক বিএসএন নামে ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখানে অন্য ভুক্তভোগীর লোকজন, ভবন মালিক ও প্রতারক কোম্পানির দায়িত্বরতরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় কোম্পানির লোকজন বৈধ কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি, যেটা ভবন মালিক নিজেও স্বীকার করে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। যদিও ওই সময় তাদের অসন্তোষের মধ্যে পড়তে হয়েছিল আমাদের। তাৎক্ষণিক আমরা এই বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করেছি।’।’

প্রতারক কোম্পানির লোকজনের মারধরে আহত স্থানীয় যুবক রিয়াজ বলেন, ‘এখানে প্রতারক কোম্পানি খুলে মানুষকে সর্বস্বান্ত করা হচ্ছে, এমন খোঁজ পেয়ে আমি কিছুদিন আগে সেখানে গিয়েছিলাম। আমার পরিচিত মেহেদী নামে একজন ওখানে চাকরির জন্য ৩৫ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। কোম্পানির লোকজন সেই টাকা দেবেন বলে নানা টালবাহানা করে আসছিলেন। পরে গত শনিবার তাদের অফিসের সামনে থেকে আমাকে তারা ডেকে ভেতরে নিয়ে আটকে রেখে মারধর করেন। খবর পেয়ে আমার বন্ধু গাউছসহ অন্যরা সেখানে এলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে ভবন মালিকের ছেলে রাকিবসহ তার মার্কেটের লোকজন মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। এতে আমি, গাউছসহ উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হই। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।’

মারধরে আহত প্রতারক রাকিব হাসান বলেন, ‘রিয়াজ নামে ওই যুবক আমাদের অফিসে ঢুকে টাকা দাবি করে আমাকে মারধর করেছেন। এর আগেও তাকে ১৫ হাজার টাকা দিয়েছি। যদিও তিনি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।’

ইতোপূর্বে বিএসএন কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার তরিকুল ইসলাম নিজেদের বৈধতা আছে দাবি করলেও কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি। পরে ভুক্তভোগী জাহিদ, মারুফ ও নাহিদসহ প্রতারিত বেশ কয়েকজনের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার কথা জানান তিনি। 

তরিকুল বলেন, ‘আগে জামগড়ায় আমাদের অফিস ছিল ডিএক্সএন। ওখানে জাহাঙ্গীর নামে আমার এক বন্ধু পার্টনার ছিল। মাস খানেকের বেশি হইছে আমরা ওখান থেকে চলে আসছি। এখন যারা যারা অভিযোগ দিতেছেন, তাদের টাকা আমরা ফেরত দেব।’ 

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদ বলেন, প্রতারক কোম্পানিতে টাকা লেনদেনসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। তদন্ত করে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.