স্বামী যা আয় করতেন, তা দিয়ে সংসার চালাতে ভীষণ কষ্ট হতো। তাই সংসার চালাতে স্বামীকে সহায়তা করতে চাকরির জন্য গেছেন নানা জায়গায়।তবে বিভিন্ন এনজিও, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ঘুরেও কাজ মেলেনি। তখন বসে না থেকে নিজের স্কুলজীবনে শেখা হাতের কাজ করবেন বলে মনস্থির করলেন রুম্পা।এইচএসসি পরীক্ষার আগেই বিয়ে হয়ে যায় রুম্পা মাখালের। ২০১৬ সালে বিয়ের কয়েক দিন পরই পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এইচএসসি পাস করেন। এরপর চেষ্টা করতে করতে ২০১৯ সালে মিলে যায় কিছু কাজ।
স্থানীয় ৪৫ নারীকে নিয়ে রুম্পার দল এখন তৈরি করছে ডালা-ঝুড়িসহ নান ধরনের বাহারি পরিবেশবান্ধব পণ্য। দলের প্রত্যেকেই কাজ করেন নিজ নিজ বাড়িতে।রুম্পা মাখাল বাগেরহাট শহরতলির মারিয়াপল্লিতে (খ্রিষ্টানপাড়া) থাকেন। কাশফুলের শুকনা খড়ি ও খেজুরগাছের পাতা দিয়ে রুম্পা শুরু করেন হস্তশিল্পের কাজ। তাঁর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন আরও অনেকে। স্বামী-সন্তান নিয়ে তাঁদের তিন সদস্যের ছোট্ট পরিবার। তিনি জানান,খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার চন্দনীমহল গ্রামে তাঁর বাবার বাড়ি।রুম্পা বলেন, ‘বিয়ের পর দুই-তিন বছর চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করেছি।
ভেবেছিলাম, এইচএসসি পাস করেছি, ছোটখাটো একটা চাকরি হয়তো পেয়ে যাব। সংসারে একটু সাহায্য করতে পারব, কিন্তু তা তো মেলেইনি, অনেক এনজিও-সমিতি উল্টো জামানত হিসেবে টাকা চায়। খালিশপুরের একটি পাটকলে চাকরি করতেন তাঁর বাবা স্বপন মাখাল। তবে হঠাৎ পাটকল বন্ধ হয়ে গেলে পুরো পরিবার অভাবে পড়ে। দুই ভাইকে আর বেশি পড়াশোনা করাতে পারেননি বাবা। তবে খুব বেশি ইচ্ছা থাকায় তাঁকে পড়ান ।তখন হস্তশিল্পের কাজ করার চিন্তা মাথায় আসে। হস্তশিল্প বাজারজাত করার কাজে যুক্ত একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আগেই পরিচয় ছিল, সেভাবে কথা বলি। নিজে করব বলে কিছু কাজ আনি। এর মধ্যে আশপাশের অন্য অনেক নারী তখন বলেন, তাঁরাও কাজ করতে চান।
রুম্পাদের ঘরের বারান্দায় তাঁর পাশে বসে কাজ করছিলেন আরও দুই নারী। তাঁদের একজন সালমা আক্তার বলেন, ‘ফলের ঝুড়ি, ফ্লোর কাভারিং ম্যাট, টেবিল ম্যাটসহ বিভিন্ন ধরনের ঝুড়ি-ডালাসহ ঘর সাজানোর নানা কাজ শিখেছি। যে যতগুলো তৈরি করতে পারে, সেভাবে আয়।’এর মধ্যে আশপাশের অন্য অনেক নারী তখন বলেন, তাঁরাও কাজ করতে চান। আমি তাঁদের কাজ শেখাই। একসঙ্গে কাজ করি। এখন আমি অর্ডার আনি, সবাই মিলে কাজ করে জমা দিই।’