ফাইল ফটো
পাবনার সাঁথিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে অনলাইন জুয়া। স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতায় মধ্যবয়সী থেকে শুরু করে স্কুলশিক্ষার্থীরাও জড়িয়ে পড়ছে এই ভয়ানক ফাঁদে। জুয়ার টাকা জোগাড় করতে জড়িয়ে পড়ছে চুরিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। এমনকি হত্যার ঘটনাও ঘটছে।
গত ১৫ জানুয়ারি আতাইকুলা থানার আলোকচর পূর্বপাড়া গ্রামের ফয়সাল হোসেন তার চার বছর বয়সী চাচাতো ভাই সালমানকে অপহরণ করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না পেয়ে শিশুটিকে হত্যা করে শয়নকক্ষে বাক্সবন্দি করে লুকিয়ে রাখে। ফয়সাল অনলাইন জুয়ায় আসক্ত। জুয়ার টাকা জোগাড় করতেই এ কাজ করেছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে সে।
ফয়সালের মতো অনেক তরুণ কৌতূহলবশত এ খেলা শুরু করার পরেই নেশায় জড়িয়ে যাচ্ছে। প্রথমে সামান্য কিছু টাকা বিনিয়োগ করে লাভবান হয়ে পরে লোভে পড়ে খোয়াচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
নাড়িয়াগদাই গ্রামের এইচএসসি পরীক্ষার্থী জানায়, প্রথমে ৩৫ হাজার টাকা জুয়ায় বিনিয়োগ করে ১৮ হাজার টাকা লাভ পায়। এরপর আর জেতা হয়নি। শেষে টাকার অভাবে মোটরসাইকেল বিক্রি করে দিতে হয়েছে। এটি নেশার মতো। যতক্ষণ টাকা থাকে ততক্ষণ খেলতে ইচ্ছে করে।
আরেক শিক্ষার্থী জানায়, প্রাইভেট পড়ার টাকা থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে সে খেলা শুরু করে। প্রথম দিন ১০ গুণ লাভ পায়। এরপর মায়ের কাছ থেকে বিভিন্ন কৌশলে টাকা নিয়ে খেলে হারতে হারতে শেষ পর্যন্ত মোবাইল ফোনটিও বিক্রি করে দিয়েছে।
স্মার্টফোনে মোস্টবেট, ওয়ান এক্সবেট, বেট উইনার, বেট ৩৬৫, মেলবেট, লাইনবেট, জিটুইন, ক্রিক্সে, প্যারিম্যাচ, এমসিডব্লিউসহ বিভিন্ন অ্যাপস ডাউনলোড করা হয়। পরে লিঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া হয় আগ্রহীদের মধ্যে। ১০ টাকা থেকে শুরু করে লাখ লাখ টাকার খেলা হয়। রাশিয়া, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে জুয়ার সাইট পরিচালনা করা হয়।
উপজেলায় জুয়ার ওয়েবসাইট পরিচালনা করছেন সদর ও গ্রামের বাজারের প্রায় ৫০ জন এজেন্ট। তাদের অধীনে আরও তিন-চারজন করে রয়েছে। সব মিলিয়ে ২০০ এজেন্ট কাজ করছেন।
কয়েকজন এজেন্টের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেটিং সাইটগুলো এজেন্ট নিয়োগের জন্য অনলাইনে সার্কুলার দেয়। পরে সাইটের প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে লোকাল, মাস্টার ও সুপার এই তিন ধরনের এজেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয়। জুয়া খেলতে লাগে পিবিইউ (পার বেটিং ইউনিট)। প্রতি ইউনিট কিনতে হয় ১০০ থেকে ২০০ টাকা দিয়ে। ই-মেইলের মাধ্যমে নিবন্ধনের পর ব্যবহারকারী মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লোকাল এজেন্টকে টাকা দেয়। সেই টাকা লোকাল এজেন্ট থেকে মাস্টার এজেন্ট, সেখান থেকে সুপার এজেন্ট, এরপর অ্যাডমিন, সেখান থেকে দেশের বাইরে সুপার অ্যাডমিনের কাছে চলে যায়।
এজেন্টদের মাধ্যমে আইডি বা অ্যাকাউন্ট খুলে জুয়া খেলছে ৫ থেকে ৭ হাজার মানুষ। মোবাইলপ্রতি হাজার টাকায় এজেন্ট কমিশন নিচ্ছেন ৪০ টাকা। যাদের ফোন নেই, তারা ঘণ্টাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় মোবাইল ভাড়া করেও জুয়া খেলছে। গড়ে প্রতিদিন একেকজন এজেন্টের মাধ্যমে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়। এ হিসাবে উপজেলায় প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা জুয়ায় লেনদেন হয়ে থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এজেন্ট বলেন, গ্রাহকদের কাছ থেকে আমরা বিকাশে টাকা গ্রহণ করি। সেই টাকা তাদের অ্যাকাউন্টে বৈদেশিক মুদ্রায় রূপান্তর করে পয়েন্ট কিনে দিই। বিনিময়ে কমিশন পাই। এ ছাড়া নতুন অ্যাকাউন্ট খুলে দিলেও কমিশন পাই। আমার দোকানে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়। এই টাকা ভার্চুয়াল মুদ্রায় রূপান্তর এবং হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হয়। পুলিশকে মাসোহারা দিয়েই কার্যক্রম চালাচ্ছেন তারা।
জুয়ার এজেন্টদের কাছ থেকে মাসোহারা বা টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন থানার ওসি আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, সাধারণত মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জুয়া খেলা হয়। এ কারণে সংশ্লিষ্টদের হাতেনাতে ধরা সম্ভব হয় না। ব্যবস্থা নিতেও বেগ পেতে হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলপনা ইয়াসমিন বলেন, অনলাইন জুয়ার বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা সভায় আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই অভিযান চালিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া অনলাইনে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে।
বিষয় : পাবনা অনলাইন জুয়া
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh