× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন

বোরকা পরে প্রবেশ, স্কুল ড্রেসে পালাল ঘাতক গৃহকর্মী

ন্যাশনাল ট্রিবিউন প্রতিবেদক

০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:১৯ এএম । আপডেটঃ ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:১৯ এএম

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে নিজ বাসায় নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন লায়লা আফরোজ (মা) এবং তাঁর স্কুলপড়ুয়া মেয়ে নাফিসা নাওয়াল বিনতে আজিজ (ডানে)। ছবি: পরিবারের সৌজন্যে

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে এক বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট থেকে মা ও মেয়ের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। 

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই দ্বৈত হত্যাকাণ্ডে নতুন নিয়োগ পাওয়া গৃহকর্মী জড়িত বলে প্রাথমিক তদন্তে সন্দেহ করছে পুলিশ, যিনি বোরকা পরে প্রবেশ করে নিহত স্কুলছাত্রীর পোশাক পরে দ্রুত পালিয়ে যান।

নিহতরা হলেন— গৃহবধূ লায়লা আফরোজ (৪৮) এবং তাঁর মেয়ে নাফিসা নাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫)। নাফিসা মোহাম্মদপুরের প্রিপারেটরি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। তাঁর বাবা আজিজুল ইসলাম রাজধানীর একটি স্কুলের শিক্ষক।

পুলিশের ধারণা, হাতে গ্লাভস পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। নিহত লায়লার শরীরে অনেকগুলো আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং নাফিসার গলায় পাওয়া গেছে একাধিক গভীর ক্ষত।

পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে মূল সন্দেহভাজন হিসেবে উঠে এসেছে প্রায় ২০ বছর বয়সী এক গৃহকর্মীর নাম, যিনি ঘটনার পর থেকেই পলাতক। ভবনটির সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ওই গৃহকর্মী বোরকা পরে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেছিলেন। তবে বাসা থেকে দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর পরনে ছিল নিহত নাফিসার স্কুল ড্রেস।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। বাথরুমে গিয়ে শরীর ধোয়ার পর গৃহকর্মী পোশাক পরিবর্তন করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছেন। ফ্ল্যাটটির আলমারির জিনিসপত্র এলোমেলো অবস্থায় পাওয়া গেছে, যা ডাকাতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই ঘটনায় ভবনটির নিরাপত্তাকর্মী মো. খালেক-কে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

নিহতদের স্বামী ও বাবা আজিজুল ইসলাম সকালে স্কুলে যাওয়ার পর এই ঘটনা ঘটে। তিনি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাসায় ফিরে মর্মান্তিক দৃশ্য দেখতে পান।

আজিজুল ইসলাম জানান, "বাসায় ফিরে কলিং বেলে চাপ দিলেও ভেতর থেকে কেউ দরজা খোলেনি। জোরে ধাক্কা দিলে দরজা খুললে মেঝেতে মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পাই। পুরো ঘর রক্তে ভিজে ছিল। রান্নাঘরের পাশে স্ত্রীও রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিল।" তিনি আরও জানান, যখন তিনি মেয়েকে দেখেন, তখন সে সামান্য বেঁচে ছিল।

আজিজুল ইসলাম পারিবারিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানান, ভবনটির তত্ত্বাবধায়ক ও নিরাপত্তাকর্মীদের মাধ্যমে মাত্র চার দিন আগে ওই গৃহকর্মীকে কাজে নেওয়া হয়েছিল। সে সকালে এসে কাজ সেরে চলে যেত। এর মধ্যেই সোমবার বাসার মূল দরজার চাবি হারিয়ে যায়। গৃহকর্মীর ওপর সন্দেহ থাকলেও তাঁকে কিছু জিজ্ঞাসা করা হয়নি।

গৃহকর্মী তার পরিচয় ও ফোন নম্বর দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। আজিজুল বলেন, "মেয়েটি বলেছিল যে আগুনে পুড়ে তার মা–বাবা মারা গেছে এবং সে–ও দগ্ধ হয়েছিল। এসব বলেই সে পরিচয় ও ফোন নম্বর দেয়নি।"

ঘটনার পর মা-মেয়ের লাশ উদ্ধারের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা ঘটনাস্থলে যায়। মোহাম্মদপুর থানার ওসি মেজবাহ উদ্দিন জানান, ময়নাতদন্ত শেষে মা-মেয়ের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানান, ওই বাসা থেকে রক্তমাখা একটি ছোরা ও একটি চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। বাসার একটি বাথরুমের পাশে প্লাস্টিকের পাত্রের মধ্যে এগুলো ছিল। কর্মকর্তাটি বলেন, "ঠান্ডা মাথায় মা-মেয়েকে হত্যার পর বাথরুমে গিয়ে শরীর ধুয়ে ওই গৃহকর্মী বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে।"

আজিজুল ইসলাম ২০১২ সাল থেকে পরিবার নিয়ে মোহাম্মদপুরের ওই বহুতল ভবনটির অষ্টম তলায় নিজের ফ্ল্যাটে থাকতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি নাটোর সদর উপজেলায়।

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006 ,01922575574

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.