× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

রাজশাহীতে জরাজীর্ণ রাজবাড়ি ভাঙতে গিয়ে বেরিয়ে এল সুড়ঙ্গ

ন্যাশনাল ট্রিবিউন প্রতিবেদক

০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:৩৬ এএম । আপডেটঃ ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:১৫ পিএম

রাজশাহীর দরগাপাড়া মহল্লায় দিঘাপতিয়া রাজপরিবারের পুরোনো ভবন ভাঙার সময় মেঝের নিচে উন্মোচিত হওয়া রহস্যময় সুড়ঙ্গপথ। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী নগরীর দরগাপাড়া মহল্লায় দিঘাপতিয়া রাজপরিবারের একটি পুরোনো ভবন ভাঙার সময় মাটির নিচে একটি রহস্যময় সুড়ঙ্গের সন্ধান মিলেছে। মঙ্গলবার দুপুরে এই অপ্রত্যাশিত আবিষ্কার স্থানীয় ইতিহাসবিদ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব যাচাই না করেই জরাজীর্ণ স্থাপনাটি নিলামে বিক্রি করে ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

রাজশাহী নগরের দরগাপাড়া মৌজায় অবস্থিত ঐতিহাসিক এই বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন দিঘাপতিয়ার রাজা হেমেন্দ্র কুমার রায়ের ছেলে সন্দীপ কুমার রায়। সরকারি নথিতে এটি বর্তমানে অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত। স্থাপনাটি অত্যন্ত জরাজীর্ণ হওয়ায় সম্প্রতি জেলা প্রশাসন এটিকে নিলামে মাত্র ১ লাখ ৫২ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। প্রায় ১০-১৫ দিন ধরে ভবনটি ভাঙার কাজ চলছিল, আর তাতেই উন্মোচিত হলো এই গোপন সুড়ঙ্গপথ।

মঙ্গলবার সকালে বাড়ি ভাঙার সময় নিচতলা থেকে সুড়ঙ্গটি বেরিয়ে আসে।

সুড়ঙ্গের ভেতর থেকে অনবরত জল বের হচ্ছে। ক্রেতার ব্যবস্থাপক অপু জানান, এক সুড়ঙ্গের সঙ্গে আরেকটির সংযোগ রয়েছে এবং জল নিষ্কাশনের জন্য সেচযন্ত্র বসানো হয়েছে। জল শুকিয়ে যাওয়ার পর ভাঙার কাজ চলছে।

স্থানীয় শিক্ষক আখতার বানুর বর্ণনা অনুযায়ী, দোতলা ভবনের নিচ দিয়ে সুড়ঙ্গপথে একতলা ভবনে যাতায়াতের রাস্তা ছিল, যা এখন ভাঙার পর উন্মুক্ত হয়েছে।

জনশ্রুতি রয়েছে, দিঘাপতিয়ার মহারানি হেমন্তকুমারী (১৮৬৯-১৯৪২) পুঠিয়া থেকে রাজশাহী শহরে এলে এই বাড়িতেই অবস্থান করতেন।

বোয়ালিয়া ভূমি কার্যালয় সূত্র জানায়, দরগাপাড়া মৌজার এই জমিটির দাগ নম্বর ৪৭ এবং জমির শ্রেণি হিসেবে 'সিভিল ডিভিশন অফিস' লেখা আছে। মালিকের ঠিকানায় 'দিঘাপতিয়া স্টেট, বলিহার, থানা– নাটোর' উল্লেখ রয়েছে।

প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য

ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটির প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য যাচাই না করেই ভাঙার জন্য নিলামে বিক্রি করে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় ইতিহাসবিদেরা। তাঁদের দাবি, প্রশাসনের উচিত ছিল নিলামের আগে ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের সঙ্গে আলোচনা করা।

অর্পিত সম্পত্তি ঘোষণা

নথিপত্র অনুযায়ী, বাড়িটি ১৯৮১ সালে অর্পিত সম্পত্তি ঘোষণা করা হয়। গবেষকদের মতে, সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী ১৯৭৪ সালের পর কোনো সম্পত্তিকে অর্পিত ঘোষণা করা যায় না। তাই ১৯৮১ সালে এটিকে অর্পিত সম্পত্তি ঘোষণা করা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।


পূর্ব ইতিহাস

কবি ও গবেষক তসিকুল ইসলাম জানান, রাজপরিবার চলে যাওয়ার পর বাড়িটি পরিত্যক্ত ছিল। স্বাধীনতার পর ভাষাসৈনিক মনোয়ারা রহমান বাড়িটি ইজারা নিয়ে সেখানে 'মহিলা কুটিরশিল্প প্রতিষ্ঠান' চালাতেন। ২০০৯ সালে তাঁর মৃত্যুর পর এটি আবার পরিত্যক্ত হয়ে যায়।


হেরিটেজ রাজশাহীর প্রতিষ্ঠাতা মাহাবুব সিদ্দিকী এই স্থাপনা ভাঙার সিদ্ধান্তকে 'অত্যন্ত দুঃখজনক' বলে নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "রাজশাহীর পরতে পরতে দিঘাপতিয়ার জমিদারদের অবদান আছে। রাজকুমার শরৎ কুমার রায় বরেন্দ্র জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেছেন, এবং তাঁর ভাইয়েরা রাজশাহী কলেজ, পিএন বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখেন। এমন একটি ঐতিহাসিক কাঠামো ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ইতিহাস চর্চাকারীদের সঙ্গে আলোচনা করা জরুরি ছিল।"

এ বিষয়ে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মহিনুল ইসলাম বলেন, স্থাপনাটি খসে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকায় ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে সুড়ঙ্গের খবর শুনে তিনি সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ঘটনাস্থলে পাঠানোর কথা জানান। তিনি আশ্বাস দেন, প্রত্নতাত্ত্বিক কোনো নিদর্শন পাওয়া গেলে অবশ্যই তা রক্ষা করা হবে।

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006 ,01922575574

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.