ক্ষমতা হাতে না থাকলেও অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছেন, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে—এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এটি বন্ধ না হলে বিপ্লবী জনগণ ক্ষমা করবে না এবং প্রয়োজনে আরেকটি '৫ আগস্ট' অনুষ্ঠিত হবে।

সোমবার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে খুলনা নগরের ঐতিহাসিক শিববাড়ী মোড়ে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আয়োজিত বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়া, প্রাপ্ত ভোটসংখ্যার ভিত্তিতে সংসদের উচ্চকক্ষে আসন বণ্টন, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াত আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘কোনো দেশপ্রেমিক দল চাঁদাবাজ হয়ে ৫ তারিখের পর আবির্ভূত হয়নি। যারা আবির্ভূত হয়েছিলেন, দায় ও দরদ নিয়ে তাদের সঙ্গে বসেছিলাম। এটি শহীদদের রক্তের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা, এটা বন্ধ করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি বন্ধ করা না হয়, বিপ্লবী জনগণ, তরুণ জনতা, কোলে বাচ্চা নিয়ে রাস্তায় নেমে আসা ওই মায়েরা আমাদেরকে ক্ষমা করবেন না। বন্ধ করা হয়নি, চাঁদাবাজি অব্যাহত রয়েছে। দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে। ক্ষমতায় না গিয়েও অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছেন। প্রশাসনিক ক্যু করার চেষ্টা করছেন।’

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, সকল ফ্যাসিবাদ, দুর্নীতি, বৈষম্য ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের বিপ্লবের পরের দিন থেকে একটি গোষ্ঠী নিজেদের ভাগ্য গড়ার জন্য জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এর ফলে বিনিয়োগকারী, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কেউ শান্তিতে নেই এবং আগের চেয়ে চাঁদার রেট বেড়ে গেছে।

আগামী নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রের সমালোচনা করে জামায়াত আমির বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে ছলে-বলে-কৌশলে কেউ কেউ আমরা শুনতে পাই, বিভিন্ন জায়গায় বসে ষড়যন্ত্রের জাল বুনছেন—জনগণ ভোট দিক বা না দিক ক্ষমতায় তাঁদের যেতে হবে। বেলা শেষ, দিনও শেষ। সূর্যও ডুবে গেছে। বাংলাদেশে এটা হবে না, এটা আমরা হতে দেব না, ইনশা আল্লাহ।’

দেশের বিচারব্যবস্থা নিয়ে ডা. শফিকুর রহমান কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৪ বছর অতিবাহিত হয়েছে, এই সময়ের স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের লালিত স্বপ্ন অনেকটাই বাস্তবায়িত হয়নি। ...একটি জাতির আসল উন্নয়ন হচ্ছে—এই দেশ ও জাতির মধ্যে ন্যায়বিচার এবং সামাজিক সুবিচার আছে কি নেই। বাংলাদেশের গ্রাম আদালত থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত আজকে যার প্রভাব-প্রতিপত্তি নেই, অ্যাকাউন্টভর্তি যার টাকা নেই, বাংলাদেশে তার জন্য কোনো বিচার নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘দিশেহারা হয়ে হতাশ, ক্ষুব্ধ হয়ে চোরাবালিতে কেউ যদি হাঁটার চিন্তা করেন, তাহলে প্রয়োজনে আরেকটা ৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে। ...আগামী দিনের ভোট ঐক্যের পক্ষে, বিভক্তির বিপক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে, কোরআনের পক্ষে, জনগণের পক্ষে। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ দুই ভাগে বিভক্ত—এক ভাগ ’৭২ সালের বাকশালপন্থী, আর এক ভাগ ২০২৪ সালের বিপ্লবপন্থী শক্তি। ...জুলাই সনদকে চূড়ান্ত আইনি ভিত্তি দিতে গণভোটের আয়োজন করতে হবে। একসঙ্গে তালগোল পাকিয়ে এই মাহাত্ম্যকে নষ্ট করবেন না। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন করা হোক।’

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। তিনি বলেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য গত ৫৩ বছরে যারা দেশ চালিয়েছে, তারা তার কিঞ্চিৎ বাস্তবায়নও করতে পারেনি। তিনি বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের ব্যাপারে আপনারা হিসাব-নিকাশ মিলিয়ে দেখেছেন, আপনাদের পায়ের নিচের মাটি সরে গেছে। এখন নির্বাচনকে পিছিয়ে নেওয়ার জন্য আপনারা ষড়যন্ত্র করছেন।’

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন মন্তব্য করেন, ‘৮ দল ক্ষমতায় গেলে চাঁদাবাজ থাকবে না। জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, এটাকে কেউ ভাঙতে পারবে না, ইনশা আল্লাহ।’

এছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুফতি মুসা বিন ইজহার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব ইউসুফ সাদেক হক্কানী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহসভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির (বিডিপি) চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আবদুল আউয়াল ও মহাসচিব ইউনুস আহমাদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন প্রমুখ।