নিহত ব্যবসায়ী আবদুর রহিম এবং তাঁর ছেলে আবদুল আজিজ রিমন
রাজধানীর পুরান ঢাকার বংশালের কসাইটুলীতে আজ শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে আঘাত হানা ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। একটি ভবনের ছাদের রেলিং ভেঙে পড়ার ঘটনায় ব্যবসায়ী আবদুর রহিম (৪৮) ও তাঁর স্কুলপড়ুয়া ছেলে আবদুল আজিজ রিমন (১২) ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছেন। ছুটির দিনে ঘরে ভালো খাবারের আয়োজন করতে গিয়েছিলেন তারা, কিন্তু মাংস খাওয়া হলো না বাবা-ছেলের। একই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের আরেক শিক্ষার্থী।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় ব্যবসায়ী আবদুর রহিম তাঁর ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া ছোট ছেলে আবদুল আজিজ রিমনকে সঙ্গে নিয়ে সকাল ১০টার পর পুরান ঢাকার বাসা থেকে মাংস কিনতে কসাইটুলীর নয়নের মাংসের দোকানের সামনে আসেন।
সকাল ১০টা ৪৮ মিনিটে ভূমিকম্প আঘাত হানার ঠিক আগ মুহূর্তে তাঁরা কসাইটুলীর কেপিগোজ স্ট্রিটের ২২/সি ভবনের সামনে মাংস কেনার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন।
তীব্র ভূকম্পনে ভবনটির ছাদের রেলিং ভেঙে সরাসরি তাঁদের ওপর আছড়ে পড়ে। এতে গুরুতর আহত হন বাবা ও ছেলে। স্থানীয়রা উদ্ধার করে দ্রুত স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (মিটফোর্ড) নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত রহিম ও তাঁর ছেলের লাশ দীর্ঘ সময় মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে পড়ে ছিল। বেলা দুইটার দিকে তাঁদের খোঁজ নিতে হাসপাতালে আসেন রহিমের ছোট ভাই মো. নাসির ও মো. গোলাম মোস্তফা।
মর্গের সামনে পৌঁছে ভাইয়ের লাশ দেখে মো. নাসির আর্তনাদে ভেঙে পড়েন। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, আমার ভাই খুব ভালো মানুষ। দুই বছর আগে হজ করে আসছে। আমার ভাইকে যেন আল্লাহ জান্নাতবাসী করেন।
রহিমের আরেক ভাই ফিরোজ আলমও আর্তনাদ করে বলেন, “আমার ভাই, আমার কলিজা ছিল। আমাকে ছাড়া কোনো কাজ করত না।”
আবদুর রহিমের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জের বশিকপুর গ্রামে। তিনি পুরান ঢাকার গার্ডেন সিটিতে কাপড়ের ব্যবসা করতেন এবং সুরিটোলা স্কুলের পেছনে ভাড়া বাসায় স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সংসার করতেন।
নিহত রহিমের বড় ছেলে এক মাস আগে অস্ট্রেলিয়ায় গেছেন। মেজ ছেলে একটি মাদ্রাসায় পড়েন।
রহিমের ভাই নাসির জানান, দুপুরে জুমার নামাজের পর তাঁদের মা মাহফুজা বেগম ফোন করে জানান, তাঁর ভাই ও ভাতিজা সকালে মাংস কিনতে বেরিয়েছিলেন কিন্তু ভূমিকম্পের পর তাঁদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর খুঁজতে খুঁজতেই তাঁরা মর্গে আসেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, একই ঘটনায় ভবনের ছাদের রেলিং ভেঙে পড়ার ফলে ঘটনাস্থলে মাংস কিনতে দাঁড়িয়ে থাকা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রাফিউল ইসলামও নিহত হন। তাঁর মা নুসরাত আক্তার গুরুতর আহত হয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের ঘটনায় মোট ২০ জন আহত ব্যক্তি এখানে এসেছিলেন এবং এর মধ্যে তিনজন মারা গেছেন।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, রিখটার স্কেলে এর তীব্রতা ছিল ৫ দশমিক ৭। উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী।
বিষয় : আহত ঢাকা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভূমিকম্প নিহত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
