× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

পূর্বাচলে বসছে ৪ থানা, ৬ ফাঁড়ি ও ৪১ পুলিশ বক্স: নতুন শহরের নিরাপত্তায় ডিএমপি'র প্রস্তাব

ন্যাশনাল ট্রিবিউন প্রতিবেদক

১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:২৯ পিএম । আপডেটঃ ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:৪৩ পিএম

পূর্বাচল নতুন শহরে দ্রুত বসতি গড়ার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে প্রস্তাবিত পুলিশের নতুন অবকাঠামো।

দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পূর্বাচল নতুন শহরকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন শুরু হলে রাজধানী ঢাকা এবং সংলগ্ন এলাকায় নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এর অংশ হিসেবে ডিএমপি পূর্বাচল শহরের জন্য ৪টি নতুন থানা, ৬টি পুলিশ ফাঁড়ি এবং ৪১টি পুলিশ বক্স চালুর লক্ষ্যে জনবল চেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে বিস্তারিত প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে। প্রস্তাবটি এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

পূর্বাচল নতুন শহরের বিশাল আয়তনের (প্রায় ৬ হাজার ২১৪ একর) প্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এই অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। বর্তমানে এই এলাকা ডিএমপি'র বাড্ডা ও খিলক্ষেত থানা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জেলার কয়েকটি থানার আওতাভুক্ত হওয়ায় নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কিছুটা দুর্বলতা ছিল।

পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দ পাওয়া হাজার হাজার মালিক বলছেন, তাঁরা দ্রুত নিজেদের জমিতে বাড়িঘর নির্মাণ করে বসবাস শুরু করতে চান। কিন্তু থানা, ফাঁড়ি ও পুলিশ বক্স চালু না হওয়ায় তারা নিরাপত্তার অভাবে সেখানে বাড়ি নির্মাণ করতে ভয় পাচ্ছেন।

ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী গণমাধ্যমকে জানান, পূর্বাচলের বিশাল এলাকা অরক্ষিত থাকায় অপরাধীরা খুন করে লাশ ফেলে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, “নিরাপত্তার অভাবে মানুষ সেখানে বসবাস করতে ভয় পান। পূর্বাচলে থানা, ফাঁড়ি ও পুলিশ বক্স চালু হলে মানুষ সেখানে বাড়িঘর তুলে বসবাস করবে। তখন ঢাকা শহরের যানজটও কিছুটা কমবে।”

প্লট মালিকদের পক্ষ থেকেও সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য থানা, পুলিশ ফাঁড়ি ও পুলিশ বক্স চালুর দাবি জানানো হয়।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও ডিএমপি সদর দপ্তর সূত্র জানায়, সম্প্রতি আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে পূর্বাচল নতুন শহরে থানা, পুলিশ ফাঁড়ি ও পুলিশ বক্স চালুর পাশাপাশি স্কুল, কলেজ ও হাসপাতাল চালুর বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের নিরাপত্তার জন্য ডিএমপি একটি সামগ্রিক নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে। এর আওতায় থাকবে:

  • নতুন ১টি অপরাধ বিভাগ
  • ১টি গোয়েন্দা বিভাগ
  • ১টি ট্রাফিক বিভাগ
  • ১টি পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট বিভাগ (পিওএম)
  • ১টি পরিবহন বিভাগ
  • ১টি পুলিশ লাইনস
  • ২টি অপরাধ অঞ্চল (জোন)
  • ৪টি থানা, ৬টি ফাঁড়ি এবং ৪১টি পুলিশ বক্স।


এই সকল স্থাপনার জন্য ডিএমপি মোট ৭ হাজার ৩২৫ জনবলের কাঠামো চেয়েছে। ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) মো. সরওয়ার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রস্তাবিত 'পূর্বাচল বিভাগ' নামের এই অপরাধ বিভাগের প্রধান হিসেবে থাকবেন পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। তাঁর তত্ত্বাবধানে ৪টি থানা, ৬টি পুলিশ ফাঁড়ি ও ৪১টি পুলিশ বক্স পরিচালিত হবে।


প্রস্তাবিত ৪টি থানা হলো: ব্রাহ্মণখালী, পশি, বরকাউ ও পারাবাথা। প্রতিটি থানায় মোট ১০৪ জন করে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।


৬টি পুলিশ ফাঁড়ি হলো: ইউসুফগঞ্জ, বিন্দু, চাণক্য, পূর্বাশা, কামতা ও গুতিয়াবো। প্রতিটি ফাঁড়িতে ২৬ জন করে পুলিশ সদস্য মোতায়েন এবং প্রতিটি পুলিশ বক্সে ৯ জন করে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করার জনবল চাওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, গত ২২ জুন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় পূর্বাচলের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে রয়েছে:

  • জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন।


  • পুলিশ বিভাগকে প্রায় ৩০ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।


  • স্কুল, কলেজ ও হাসপাতাল দ্রুত নির্মাণকাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত।


  • পূর্বাচলকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অন্তর্ভুক্ত করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো।


  • রাজউক আটটি গাড়িতে ১০০ সশস্ত্র আনসার দিয়ে টহল চালু রাখবে।


বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, “পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের কাজ ১৯৯৫ সালে শুরু হলেও এত দিনেও নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো জরুরি নাগরিক সুবিধার অবকাঠামো কেন হলো না, তা একটি প্রশ্ন। অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব সেবা চালু করা প্রয়োজন। পূর্বাচলে কিছু মানুষ বসবাস শুরু করেছে, সেখানে নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।”

বর্তমানে পূর্বাচলের বিভিন্ন সেক্টরে সীমিত পরিসরে কিছু মানুষ বসবাস করতে শুরু করেছেন। দ্রুত পুলিশি নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে নতুন শহরটি দ্রুত পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে এবং ঢাকার উপর জনসংখ্যার চাপ কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.