বিশ্ব মান দিবস- ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা ভেজাল ও নকল পণ্য উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনকে (বিএসটিআই) আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বক্তারা বলেন, বিএসটিআই-এর অনেক পরীক্ষাগার (ল্যাবরেটরি) ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন হিসেবে গড়ে উঠেছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে এই প্রতিষ্ঠানকে পুরোপুরি আন্তর্জাতিক মানের করে তোলার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করতে হবে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে 'সমন্বিত উদ্যোগে টেকসই উন্নত বিশ্ব বির্নিমাণে-মান' শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বিশ্ব মান দিবস-২০২৫ উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, বিএসটিআই এখন যে অবস্থানে আছে, অনেক ক্ষেত্রেই তা বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ন্যাশনাল হালাল ল্যাবরেটরিসহ বিএসটিআই-এর অনেক ল্যাবরেটরি আন্তর্জাতিক মানের। তিনি ব্যবসায়ীদেরকে বিএসটিআই থেকে লাইসেন্স গ্রহণের পর সেই মান বজায় রেখে পণ্য বাজারজাত করার অনুরোধ জানান।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সভাপতি এ, এইচ, এম, সফিকুজ্জামান বলেন, বিএসটিআই শিল্পের মানোন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলেও জনগণের মধ্যে এর কার্যকারিতা সম্পর্কে ধারণা কম। তিনি উল্লেখ করেন, হালাল সনদ প্রদান বিএসটিআই-এর কাজ এবং আন্তর্জাতিক মানের হালাল ল্যাবরেটরি এখানে রয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, হালাল সনদকে সঠিকভাবে প্রমোট করতে পারলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের হালাল পণ্যের রপ্তানি বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। তিনি পণ্য ভেজাল ও নকলকারীদের বিরুদ্ধে বিএসটিআইকে আরও কঠোর হওয়ার অনুরোধ জানান।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ-এর চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী বলেন, বিগত কয়েক বছরে বিএসটিআই-এর ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে এবং এটি বাংলাদেশে মান নিয়ন্ত্রণের প্রতিচ্ছবি। তিনি হালাল ল্যাবরেটরি অ্যাক্রেডিটেশন, নতুন নতুন ক্ষেত্রে মান প্রণয়ন, মানের সরলীকরণ এবং আন্তর্জাতিক মানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ মান প্রণয়নের বিষয়ে বিএসটিআইকে বিশেষ নজর দেওয়ার অনুরোধ করেন।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুল হাসিব চৌধুরী মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

সভাপতির বক্তব্যে বিএসটিআই-এর মহাপরিচালক (গ্রেড-১) এস এম ফেরদৌস আলম বিগত এক বছরে প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন। তিনি জানান, মানচিহ্ন নকল প্রতিরোধে অনলাইন কিউআর কোড সম্বলিত লাইসেন্স প্রদান, জাতীয় হালাল ল্যাবরেটরি, হেলমেট টেস্টিং ল্যাবরেটরি, সোলার প্যানেল টেস্টিং ল্যাবরেটরি, সিমেন্ট টেস্টিং ল্যাবরেটরি স্থাপনসহ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়া স্বর্ণের বিশুদ্ধতা যাচাইপূর্বক সনদ প্রদান এবং মাঠ পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয় চালুসহ নতুন নতুন পণ্য পরীক্ষণ প্যারামিটার সংযুক্তির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

আলোচনা সভায় বিশেষ বক্তা হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই-এর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স-এর প্রধান মো. জাফর ইকবাল। বিভিন্ন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীগণ, আমদানি ও রপ্তানিকারকসহ মান প্রণয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ এসময় উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা সভা শেষে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠায় বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউশন অব ম্যানেজমেন্ট (বিআইএম), কাউবেল কেফির লিমিটেড এবং অ্যাডভান্সড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সহ মোট ১২টি প্রতিষ্ঠানকে আইএসও সনদ প্রদান করা হয়।