× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কক্সবাজার

ন্যাশনাল ট্রিবিউন প্রতিবেদক

১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২২:৫১ পিএম । আপডেটঃ ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৩:৩৯ পিএম

কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম ও সিলেটের পর এবার দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মর্যাদা পেল পর্যটন নগরী কক্সবাজার। গতকাল রোববার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিএ-১ শাখার যুগ্ম সচিব আহমেদ জামিল স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষে অবস্থিত এই বিমানবন্দরটি এখন আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এবং কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্র নিশ্চিত করেছে, এই ঘোষণার ফলে কক্সবাজার থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হতে আর কোনো বাধা রইল না। বর্তমানে এই বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার জোর প্রস্তুতি চলছে।

কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ১০ হাজার ৭০০ ফুট। এর মধ্যে ১ হাজার ৭০০ ফুট নির্মাণ করা হয়েছে সাগরের বুকে। এটি বিমানবন্দরের অন্যতম আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য। বেবিচকের তথ্যমতে, বিমানবন্দরের ঝিনুক আকৃতির দৃষ্টিনন্দন নতুন টার্মিনাল ভবনের নির্মাণকাজও প্রায় শেষের পথে। যার আয়তন প্রায় ১০ হাজার ৯১২ বর্গফুট।

বিমানবন্দরের পরিচালক গোলাম মুর্তজা হোসেন জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন–সুবিধা ইতিমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। দ্রুত বাকি কাজ শেষ করে অনুমোদন পাওয়া গেলে চলতি মাসেই কক্সবাজার থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট শুরু করা সম্ভব।

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে সরকার মোট ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রকল্পগুলো হলো:

১. কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প: ব্যয় ২ হাজার ১৫ কোটি টাকা (২০০৯ সালে নেওয়া)।

২. কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্প: খরচ ৩ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা (২০১৯ সালে নেওয়া)।

৩. কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবন নির্মাণ প্রকল্প: অর্থ ব্যয় ২৭৭ কোটি টাকা (২০১৭ সালে নেওয়া)।

গত ১৪ মার্চ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কক্সবাজার বিমানবন্দরের চলমান নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেন। তখন কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানায়, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণকাজ ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং চালু হলে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০টি বিমান ওঠানামা করতে পারবে।

আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘোষিত হওয়ায় উচ্ছ্বসিত কক্সবাজারের সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। তাঁদের প্রত্যাশা, এর ফলে বিদেশি পর্যটকের আগমন বাড়বে এবং স্থানীয় পর্যটন ব্যবসা চাঙা হবে।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, “আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলে হোটেল–রেস্তোরাঁসহ পর্যটন খাতের ব্যবসা চাঙা হবে।”

কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার মন্তব্য করেন, “আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলে পর্যটন ব্যবসায় নতুন গতি আসবে এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলন, করপোরেট ইভেন্ট ও সাংস্কৃতিক আয়োজন সহজ হবে। এটি স্থানীয় অর্থনীতিকে গতিশীল করবে।”

তাছাড়া, ২০১৭ সালে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে দেশি-বিদেশি অসংখ্য এনজিও সংস্থায় বিপুলসংখ্যক বিদেশি কর্মকর্তা কর্মরত আছেন। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হওয়ায় এই কর্মকর্তারা এখন সরাসরি কক্সবাজারে আসা-যাওয়া করতে পারবেন।

আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সুফল নিয়ে কিছুটা সংশয় প্রকাশ করেছেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ও এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কার্যকর হওয়ার জন্য কিছু মৌলিক মানদণ্ড পূরণ করতে হয়:


  • পর্যাপ্ত যাত্রী: বিদেশে আসা-যাওয়া করার মতো পর্যাপ্তসংখ্যক যাত্রী থাকতে হবে। যাত্রী না থাকলে বিমানবন্দর চালানো কঠিন।


  • আন্তর্জাতিক মানদণ্ড: বিদেশি বিমান সংস্থাগুলোর ফ্লাইট পরিচালনার জন্য অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা, বিমান রিফুয়েলিং, নির্বিঘ্নে বিমান অবস্থান করার সুযোগ ইত্যাদি নিশ্চিত করতে হবে।


  • কার্গো ও নিরাপত্তা: আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো–সুবিধা (পণ্য পরিবহন) ও ওয়্যারহাউস থাকা এবং যাত্রীদের পাশাপাশি কার্গোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।


তবে তিনি এও মনে করেন, সমুদ্রের মধ্যে নতুন ও প্রশস্ত রানওয়ে তৈরি একটি ভালো উদ্যোগ এবং এটি সুপরিসর বিমান নামার জন্য উপযুক্ত।

বিদেশি পর্যটক প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞ ওয়াহিদুল আলমের মত, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হলেও কক্সবাজার এখনো বিদেশি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হয়ে ওঠেনি। বিদেশি পর্যটক আকর্ষণের জন্য সমুদ্রসৈকতে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার, তার অভাব রয়েছে। এ ছাড়া, বিদেশি বিমান সংস্থাগুলো এখানে ফ্লাইট পরিচালনায় আগ্রহী কি না, সে বিষয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, রানওয়ের কাজ দৃষ্টিনন্দন হলেও টার্মিনালগুলোর কাজ এখনো যথাযথভাবে শেষ হয়নি। নিরাপত্তাব্যবস্থা ও প্রয়োজনীয় লোকবলের ঘাটতি রয়েছে। কার্গোসুবিধা ও এর নিরাপত্তাব্যবস্থাও এখনো কার্যকর নয়। এসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করে শুধু ঘোষণার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কার্যকর হবে না।

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.