সলিমগঞ্জ অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প। ছবি: সংগৃহীত
অবৈধভাবে পাঁচ দিন আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় পুলিশ হেফাজতে এক তরুণের মৃত্যুর ঘটনায় সলিমগঞ্জ অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মহিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এসআই মহিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক। এর আগে রোববার সন্ধ্যায় উপজেলার সলিমগঞ্জ অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে এ ঘটনা ঘটে।
মৃত তরুণের নাম মো. আব্দুল্লাহ (২৩)। তিনি বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তেজখালি ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের মো. আবুল হোসেনের ছেলে।
পুলিশ ও স্বজনদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১৭ সেপ্টেম্বর উপজেলার সলিমগঞ্জের তবি মিয়ার বাড়িতে একটি চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তবি মিয়ার এক আত্মীয় নবীনগর থানায় একটি অভিযোগ করেন।
২৩ সেপ্টেম্বর সকালে তবি মিয়ার নেতৃত্বে প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন মিলে আব্দুল্লাহকে চোর সন্দেহে সলিমগঞ্জ বাজারের অটোরিকশা স্ট্যান্ডের সামনে থেকে আটক করেন। স্বজনদের দাবি, প্রথমে আব্দুল্লাহকে রাস্তায় এবং পরে তবি মিয়ার বাড়িতে নিয়ে নির্মমভাবে গণপিটুনি দেওয়া হয় এবং সেখানে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়।
এরপর আব্দুল্লাহকে সলিমগঞ্জ অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মহিম উদ্দিনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পুলিশ জানায়, আব্দুল্লাহকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পুলিশ ক্যাম্পে নেওয়া হলেও, এসআই মহিম উদ্দিন বিষয়টি কাউকে না জানিয়ে তাঁকে অবৈধভাবে ক্যাম্পে আটকে রাখেন।
আব্দুল্লাহর চাচাতো ভাই শাকিল মিয়া অভিযোগ করেন, "মিথ্যা চুরির অভিযোগে তারা আমার ভাইকে গণপিটুনি দিয়েছে। তার পায়ে সুঁই ঢুকিয়েছে। প্লাস দিয়ে কপালের চামড়া তুলেছে। এ ছাড়া সলিমগঞ্জ পুলিশ ক্যাম্পে আটকে রেখেও আমার ভাইকে নির্যাতন করা হয়েছে।” স্বজনদের দাবি, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত আব্দুল্লাহ সলিমগঞ্জ অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে পুলিশ হেফাজতে ছিলেন।
পুলিশ ক্যাম্পে থাকাকালীন আব্দুল্লাহ অসুস্থ হয়ে পড়েন। রোববার বিকেলে তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানেই আব্দুল্লাহর মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় রোববার রাতেই মৃত আব্দুল্লাহর বড় ভাই বাদী হয়ে এসআই মো. মহিম উদ্দিনসহ চারজনের নামসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন— উপজেলার সলিমগঞ্জের বাড়াইলের তবি মিয়া (৩৪), একই গ্রামের আল আমিন (৩২) এবং বাঞ্ছারামপুরের বাহেরচরের আয়নাল হক (৩০)।
পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক জানান, এসআই মহিম উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে তাঁকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, “আব্দুল্লাহকে ক্যাম্পে অবৈধভাবে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছিল বলে ধারণা করছি। বিভিন্ন সময় তাঁকে চিকিৎসা দেওয়ার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আমাদের কাছে আছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে।”
এ বিষয়ে এসআই মহিম উদ্দিন ও মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত তবি মিয়ার মোবাইলে ফোন করা হলে, তাঁদের নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh