ছবি: সংগৃহীত
মালয়েশিয়ায় মানব পাচারের জন্য জড়ো করা নারী ও শিশুসহ মোট ৮৪ জনকে কক্সবাজারের টেকনাফের গহীন পাহাড় থেকে উদ্ধার করেছে র্যাব ও বিজিবি। এ সময় পাচারকারী চক্রের তিন সদস্যকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়েছে।
রোববার রাতে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের বাহারছড়া ও কচ্ছপিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয় বলে জানান টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান।
আটকরা হলেন বাহারছড়ার বাসিন্দা আব্দুল্লাহ (২১), সাইফুল ইসলাম (২০) এবং মো. ইব্রাহিম (২০)।
সোমবার দুপুরে বিজিবি ও র্যাবের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল হাসান বলেন, "গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি, বাহারছড়া ও কচ্ছপিয়ার গহীন পাহাড়ে একটি পাচারকারী চক্র মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বেশ কয়েকজনকে আটকে রেখেছে।"
তিনি আরও বলেন, "খবর পেয়ে রাতে বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা প্রথমে বাহারছড়ার পাহাড়ি এলাকা থেকে একজনকে আটক করে। তার কাছ থেকে চারজনকে উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পাহাড়ের তিনটি আলাদা আস্তানায় অভিযান চালিয়ে আরও ৮০ জনকে উদ্ধার করা হয়।"
উদ্ধার হওয়া ৮৪ জনের মধ্যে ১৮ জন বাংলাদেশি এবং ৬৬ জন রোহিঙ্গা রয়েছেন। ১২ ঘণ্টার এই অভিযানে ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটার গান ও একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া আস্তানায় তল্লাশি চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি রামদা, একটি চাকু, তিনটি অস্ত্রের চেম্বার ও তিনটি গুলি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
বিজিবি জানিয়েছে, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও মালয়েশিয়ায় বিস্তৃত একটি আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্র স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সহযোগিতায় এই কার্যক্রম পরিচালনা করে। মালয়েশিয়ায় থাকা পাচারকারীরা স্থানীয়দের মাধ্যমে লোক সংগ্রহ, আটকে রাখা এবং মুক্তিপণ আদায় করে।
ভুক্তভোগীদের উচ্চ বেতনের চাকরি ও সহজ বিদেশযাত্রার প্রলোভন দেখানো হয়। এরপর তাদের মিয়ানমারে আটকে রেখে পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করা হয়।
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, মানব পাচার চক্রের বিরুদ্ধে বিজিবি গত কয়েক মাস ধরে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে। জুলাইয়ে ১৫ জন, অগাস্টে চারজন এবং সেপ্টেম্বরে ১৭ জন পাচারকারীকে আটক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, "টেকনাফের হোসেন, সাইফুল এবং নিজামের নেতৃত্বে এই চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে কাজ করে। এদের দমনে সব বাহিনীর সমন্বয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।"
বিজিবি বিদেশি গমনেচ্ছুদের তথ্য যাচাই এবং সন্দেহজনক কোনো কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর আহ্বান জানিয়েছে।
সাম্প্রতিক অভিযান: আট মাসে ৬২ পাচারকারী আটক
চলতি বছরের প্রথম আট মাসে টেকনাফ সীমান্ত এলাকা থেকে মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ৬২ জনকে আটক করেছে বিজিবি। একই সময়ে পলাতক আছেন ২৪ জন।
এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পাচারের জন্য কচ্ছপিয়ার গহীন পাহাড়ে আটকে রাখা নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৬৬ জনকে উদ্ধার করে নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড। এর দুদিন আগে ১৬ সেপ্টেম্বর পাচারকারীদের আস্তানা থেকে নারী ও শিশুসহ আরও ১১ জনকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এ ছাড়া ১৪ সেপ্টেম্বর সাগরপথে ১০০ মিয়ানমারের নাগরিককে পাচারের চেষ্টা ব্যর্থ করে চারজনকে আটক করে বিজিবি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh